দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মো. আব্দুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক। টানা তৃতীয় মেয়াদে দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।
প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন, ২০০৯–এর ধারা ৩১(১) অনুযায়ী সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমকে বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম আদালত অবমাননার দায়ে দণ্ডিত। পৌরসভা বা রাষ্ট্রের হানিকর কার্যকলাপে জড়িত থাকা, নৈতিক স্খলন, অসদাচরণ ও ক্ষমতা অপব্যবহারের দায়ে তাঁকে এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আদালত ও সরকারি কৌঁসুলি সূত্রে জানা যায়, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা মামলায় হাইকোর্টের রায় কেন্দ্র করে আপিল বিভাগের বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিমকে নিয়ে সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমের দেওয়া এক বক্তব্যের সূত্র ধরে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে হাইকোর্টে আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের চার আইনজীবী। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৭ আগস্ট আপিল বিভাগ জাহাঙ্গীরের প্রতি আদালত অবমাননার নোটিশ ইস্যু করেন। পাশাপাশি ২৪ আগস্ট তাঁকে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
নির্ধারিত দিনে আদালতে হাজির হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করলে আপিল বিভাগ ১২ অক্টোবর শুনানির দিন ধার্য করেন। সেদিন আদালতে হাজির হলে জাহাঙ্গীরকে এক মাসের কারাদণ্ড, এক লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও সাত দিনের কারাদণ্ড দেন বিচারক। পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে তাঁকে দিনাজপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়।
হাইকোর্টের আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৮ অক্টোবর জরিমানার এক লাখ টাকা দিনাজপুর গাউসুল আজম বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালে জমা করে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করেন মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম। পরে আদালতের বিচারক জুলফিকার উল্ল্যাহ তাঁকে জেলা কারাগারে পাঠান। বর্তমানে তিনি কারাগারে।
এ বিষয়ে দিনাজপুর জেলা জজ আদালতের বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি সামসুর রহমান বলেন, মেয়র জাহাঙ্গীর আলম সর্বোচ্চ আদালতের বিচারককে নিয়ে কটূক্তিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন এবং সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন। এই সাজাপ্রাপ্তির পর সংশ্লিষ্ট দপ্তর মেয়র পদ থেকে তাঁকে অব্যাহতি দিয়েছে।
পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, এর আগে মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম দুবার বরখাস্ত হয়েছেন। ২০১৮ সালে ভিজিবির চাল কম দেওয়ার দায়ে এক মামলায় তিনি জেলে যান। সেই সময় তাঁকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ সাময়িক বরখাস্ত করেছিলেন। এ মামলায় তিনি জামিনে আছেন।
২০২২ সালে পৌরসভার অর্থ আত্মসাৎ, নিয়োগে অনিয়মসহ পাঁচটি বিষয়ে অনিয়ম–দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিলেন কাউন্সিলররা। তদন্ত সাপেক্ষে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় স্থানীয় সরকার বিভাগ তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করেছিলেন। দুবারই তিনি হাইকোর্টে রিট করে পদে ফেরেন।