এভাবেই সরকারি জায়গায় পাকা দোকান করেছেন বিএনপি নেতা মোমিন আলী। সম্প্রতি মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরের জুশুরগাঁও এলাকায়
এভাবেই সরকারি জায়গায় পাকা দোকান করেছেন বিএনপি নেতা মোমিন আলী। সম্প্রতি মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরের জুশুরগাঁও এলাকায়

মুন্সিগঞ্জে সরকারি জমিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতার দোকান

শ্রীনগর-দোহার সড়কের উত্তর পাশে কলেজ গেট এলাকায় গণপূর্তের জায়গায় পাঁচ থেকে ছয়টি নতুন টিনশেড দোকান নির্মাণ করা হয়েছে।

মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলায় কোটি টাকা মূল্যের সরকারি জায়গা দখল করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতা পাকা দোকান নির্মাণ করছেন। উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মমিন আলী এবং উপজেলার পাটাভোগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রমিজউদ্দিন ও তাঁর মেয়ের জামাতা সোহেল প্রভাব খাটিয়ে ওই জায়গা দখল করে পাকা দোকান নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

মুন্সিগঞ্জ গণপূর্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলার শ্রীনগর-দোহার সড়কের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে কুশুরীপাড়া মৌজার ২ নম্বর খতিয়ানভুক্ত আরএস ৪১, ৬৭-৭১, ৯১, ১৩৭-১৪০, ১৯০, ১৯১ ও ২১০ মোট ১৪টি দাগে ১২ দশমিক ২৫ একর সম্পত্তি কাগজে-কলমে গণপূর্ত অধিদপ্তরের। এর মধ্যে ৪১ দাগে ১ একর ১০ শতাংশের একটি জলাশয়ও ছিল তাদের। কয়েক বছর ধরে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সেখানে অবৈধভাবে বালু ভরাট করে পাকা দোকান নির্মাণ করছেন।

গত বুধবার সরেজমিন দেখা যায়, শ্রীনগর-দোহার সড়কের উত্তর পাশে কলেজ গেট এলাকায় গণপূর্তের জায়গায় পাঁচ থেকে ছয়টি নতুন টিনশেড দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। দোকানের পেছনের অংশ বালু দিয়ে ভরাট করে রাখা হয়েছে। এ সময় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ দোকানগুলোর মালিক মমিন আলী। মমিন আলী স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী। তিনি সবাইকে ম্যানেজ করে এখানে দোকানপাট করেছেন।

এ বিষয়ে মমিন আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এখানে শুধু আমরা একাই পাকা দোকান নির্মাণ করিনি। সড়কের দুই পাশে এমন শত শত দোকান রয়েছে।’ তিনি দাবি করেন, যেখানে তিনি দোকান করেছেন এই জায়গা তাঁদের ছিল। তাঁদের কাছ থেকে সরকার অধিগ্রহণ করেছে, কিন্তু তাঁদের টাকা দেয়নি। এ জন্য তাঁরা আবার এখানে দোকানপাট করেছেন। তিনি আরও বলেন, ‘এই জায়গা তিনি ইজারা এনেছেন। আপনাদের জায়গা হলে ইজারা কেন আনবেন।’

কোন কার্যালয় থেকে, কবে ইজারা এনেছেন, এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি মমিন আলী। কাগজপত্র দেখতে চাইলে বিএনপির এই নেতা দেখাতে অস্বীকৃতি জানান।

এদিকে একই মৌজায় ২০২২ সালে জলাশয় ভরাট করেন রমিজউদ্দিন ও সোহেল। ওই বছরের ২৩ আগস্ট এ নিয়ে ‘জলাশয় ভরাটের অভিযোগ আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে’ শিরোনামে প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। গণপূর্ত অধিদপ্তরের লোকজন সরেজমিন সাময়িকভাবে ভরাট কাজ বন্ধ করেন। তবে তার কিছুদিন পরই পুরোদমে ভরাট করে ২০২৩ সালের শেষ দিকে চারটি বড় আকৃতির পাকা দোকান নির্মাণ করেন রমিজউদ্দিনেরা। এখন তিনি দোকানগুলোর ১টি ১০ হাজার ও ৩টি ৫ হাজার টাকায় ভাড়া দিয়েছেন।

এ বিষয়ে রমিজউদ্দিনের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ‘দোকান নির্মাণের সময় গণপূর্তের লোকজন এসেছিলেন। সে সময় তাঁরা বলেছিলেন সড়ক ঘেঁষে তাঁদের ২২ ফুট জায়গা আছে। দোকান ও সড়কের মধ্যখানে সে জায়গা রয়েছে। আমরা জায়গা ছেড়ে দোকান করেছি।’ জায়গা কীভাবে ছাড়লেন, দোকান থেকে সড়ক পর্যন্ত পুরোটাই পাকা করে নিয়েছেন আপনারা। এ বিষয়ে রমিজ উদ্দিন বলেন, ‘গণপূর্ত চাইলে আমরা ছেড়ে দেব।’

আওয়ামী লীগের এই নেতার সঙ্গে কথা বলার ২৫ থেকে ৩০ মিনিট পর ওই নেতার নম্বর থেকে এই প্রতিবেদককে ফোন করেন। রমিজউদ্দিনের ছেলে পরিচয় দিয়ে প্রতিবেদন বন্ধ রাখতে টাকার প্রলোভন দেখান তিনি। প্রতিবেদককে ম্যানেজ করতে না পারায় ওই ব্যক্তি বলেন, এ জায়গা জেলা পরিষদের। তারা সেখান থেকে ইজারা এনে দোকান নির্মাণ করেছেন।

কাগজে-কলমে গণপূর্ত অধিদপ্তরের হলেও এ জায়গার বর্তমান মালিকানা তাদের নয় বলে জানান মুন্সিগঞ্জ গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খায়রুজ্জামান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বিষয়ে ইউএনও ও জেলা পরিষদের সঙ্গে বসেছিলাম। তারা জায়গাগুলো জেলা পরিষদের বলেই আমাদের জানিয়েছেন। আমাদের নামে রের্কডটি ভুলে রয়েছে। আমরা রেকর্ড সংশোধন করে নিব।’

দোকানপাট করা খতিয়ানভুক্ত জায়গাগুলো জেলা পরিষদের দাবি করেছেন মুন্সিগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসলাম মোল্লা। তবে জায়গাগুলো ইজারা দেওয়া হয়েছে কি না, সেটি তিনি জানেন না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণপূর্তের এক কর্মচারী বলেন, জায়গাগুলোর প্রকৃত মালিক গণপূর্ত। তবে কর্মকর্তা কোন স্বার্থে জায়গাগুলো অন্যদের বলছেন, সেটি তিনিই ভালো বলতে পারবেন।