রিমালের প্রভাবে অস্বাভাবিক ঢেউ ও প্রচণ্ড বাতাসে এসব ট্রলার আংশিক ও পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় দুই শতাধিক ছোট ও মাঝারি আকারের মাছ ধরার ট্রলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রিমালের তাণ্ডব শুরু হওয়ার আগে মাছ ধরার ট্রলারগুলো পাথরঘাটার বিভিন্ন খালে আশ্রয় নিলেও অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি, জলোচ্ছ্বাস এবং প্রচণ্ড বাতাসের কারণে ট্রলারগুলো আংশিক ও পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে সাড়ে চার শতাধিক জেলে একমাত্র সম্বল হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ফিশিং ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দুলাল হোসেন এবং চরদুয়ানী আড়তদার সমিতির সভাপতি খলিলুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ওই দুই মৎস্যজীবী নেতা বলেন, পাথরঘাটা উপজেলার পশ্চিমে বলেশ্বর নদ, পূর্বে বিষখালী নদী এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। তাই এ উপজেলার বেশির ভাগ মানুষ মৎস্যজীবী। বড় ট্রলারের জেলেরা সাগরমোহনা থেকে গভীর বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরেন। আর ছোট ট্রলারের জেলেরা বিষখালী ও বলেশ্বর নদে মাছ ধরেন। ২০ মে থেকে ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাই সাগরে মাছ ধরা বড় ট্রলারগুলো আগেভাগেই নোঙর করে রাখা ছিল। অনেক ট্রলার আবার মেরামতের জন্য তোলা ছিল। তবে মাছ ধরার ছোট ছোট ট্রলারগুলো স্থানীয় বলেশ্বর ও বিষখালীতে মাছ শিকারে ছিল। ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডব শুরুর আগেই ওই ট্রলারগুলো পাথরঘাটার ছোনবুনিয়া, বাদুরতলা, জিনতলা, পদ্মা, গাববাড়িয়া, তাফালবাড়িয়া বাঁধঘাট, দক্ষিণ চরদুয়ানী, চরদুয়ানী, কাকচিড়া, কুপধনসহ বিভিন্ন খালে আশ্রয় নেয়। কিন্তু রিমালের প্রভাবে ৩০ ঘণ্টাব্যাপী অস্বাভাবিক ঢেউ ও প্রচণ্ড বাতাসে দুই শতাধিক মাছ ধরার ছোট ট্রলার আংশিক ও পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জেলা মৎস্যজীবী ফিশিং ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দুলাল হোসেন আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে শুধু কালমেঘার ছোনবুনিয়া সুলিজঘাট থেকে ১৩ জনের খবর পেয়েছেন তিনি, যাঁদের ট্রলার পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই এলাকায় আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এমন আরও সাতজন রয়েছেন। তবে বড় ট্রলারের চেয়ে ছোট ট্রলারে ক্ষতি বেশি, যার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা ওই ছোট মাছ ধরা ট্রলারের মৎস্যজীবীদের পক্ষে একদমই অসম্ভব।
কালমেঘার ছোনবুনিয়ার গ্রামের বাবুল খান, মো. মাসুম, ফারুক হোসেন ও বিনয় ব্যাপারী বলেন, ছোট ট্রলারগুলোতে এক থেকে তিনজন জেলে নিয়ে মাছ শিকার করতে যান তাঁরা। এসব ট্রলার সাধারণত নদীতীরবর্তী এলাকায় জাল ফেলে। এই মাছ ধরেই কোনোমতে সংসার চলে তাঁদের। তবে ৩০ ঘণ্টাব্যাপী ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে একমাত্র অবলম্বন ট্রলার হারিয়ে তাঁরা আজ নিঃস্ব।
জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের মালিক সমিতির একেকজনের একেকটি ট্রলারে মূল্য ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা। অপর দিকে ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত ছোট ট্রলারের মালিকেরা গরিব। তাঁদের একেকটি ট্রলারের মূল্য দুই থেকে সোয়া দুই লাখ টাকা। কিন্তু তাঁদের কোনো সমিতি নেই। আমরাই মূলত তাঁদের খোঁজখবর রাখি।’
গোলাম মোস্তফা চৌধুরী আরও বলেন, পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, সিডর থেকে আজ পর্যন্ত যত ঘূর্ণিঝড় হয়েছে, এর কোনোটিতেই ছোট ট্রলারকে সহায়তা করা হয়নি। তাঁদের সমিতি থেকেও তেমন কিছু করা যায় না। এর ফলে এসব জেলেদের ঘুরে দাঁড়ানো খুব কষ্টসাধ্য।
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান খান গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বলেন, জেলেদের ব্যাপারে কী করা যায়, তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দেখা হবে।