দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে বগুড়ার সাতমাথা এলাকা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে
দফায় দফায় সংঘর্ষে 
রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে বগুড়ার সাতমাথা এলাকা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে

বগুড়ায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আহত, গুলিবিদ্ধ ৩৭

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বগুড়ায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথাসহ বিভিন্ন স্থানে এসব সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ ৩৭ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় ১৫ জন শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ।

আজ বেলা ১১টার দিকে বগুড়া শহরের কবি নজরুল ইসলাম সড়কে শিক্ষার্থীদের মিছিলে প্রথমে সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগানের গুলি ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে পুলিশ। এ সময় কয়েক হাজার শিক্ষার্থী সাতমাথার জিলা স্কুলের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগানের গুলি ছুড়ে। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ইটপাটকেল ছুড়ে পুলিশের হামলার পাল্টা জবাব দেন। পুলিশ কিছুটা পিছু হটে সাতমাথা-মেনিরা সড়কে অবস্থান নেয়।

বেলা সোয়া ১১টার দিকে বগুড়ার সদর থানার পরিদর্শক মো. শাহীনুজ্জামানের নেতৃত্বে পুলিশ ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্যরা শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে আবার কয়েক শ শটগানের গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। এ সময় ছত্রভঙ্গ হয়ে শিক্ষার্থীরা পার্ক রোড, স্টেশন সড়ক ও ঝাউতলা এলাকায় অবস্থান নেন। বেলা দেড়টা পর্যন্ত দফায় দফায় চলে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ। পুলিশের মুহুর্মুহু গুলির শব্দে আশপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে পুলিশ, শিক্ষার্থী ও পথচারীসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ ৩৭ জনকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বগুড়ার সাতমাথা এলাকায়

বগুড়ার শহীদ জিয়াউর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ প্রথম আলোকে বলেন, আজ বেলা তিনটা পর্যন্ত বুলেটবিদ্ধ ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ জন শিক্ষার্থী ও দুজন পথচারী। এর মধ্যে কয়েকজনের মাথা ও চোখে গুলি লেগেছে। এতে কেউ কেউ দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারেন।

এদিকে বেলা পৌনে একটার দিকে পুলিশের কাছে গুলি, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেডের মজুত প্রায় ফুরিয়ে যায়। এ সময় শহরের স্টেশন সড়ক ও পার্ক রোড থেকে একযোগে শিক্ষার্থীরা পুলিশের ওপর চড়াও হলে গুলি ছুড়তে ছুড়তে পুলিশ পিছু হটে। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় দফায় সাতমাথায় অবস্থান নেন। শহরের টেম্পল সড়কে জেলা যুবলীগের সভাপতি শুভাশীষ পোদ্দারের নেতৃত্বে যুবলীগের শ খানেক নেতা-কর্মী অবস্থান করছিলেন। পুলিশ অসহায় হয়ে যুবলীগের সহযোগিতা চাইলে যুবলীগ ও পুলিশ একজোট হয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর আবার হামলা চালায়। এ সময় শিক্ষার্থীরা আবার পিছু হটে স্টেশন সড়ক ও পার্ক রোডে অবস্থান নেন। আজ বিকেল সোয়া চারটার দিকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে থেমে থমে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ চলছিল। সংঘর্ষ এলাকা থেকে অনেক শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ।

সংঘর্ষে আহত এক পুলিশ সদস্যকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে

বগুড়া সদর পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) সুজন মিয়া বলেন, সাতমাথা ও আশপাশ এলাকা থেকে ১৫ জন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে।

বগুড়ার পুলিশ সুপার জাকির হাসান প্রথম আলোকে বলেন, শহরের অন্তত ১০টি স্থানে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অনুপ্রবেশকারী ঢুকে পড়েছে। পুলিশের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিশে যাওয়া দুষ্কৃতকারীরা ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পরিকল্পনা করেছে। এ কারণে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে পুলিশকে অ্যাকশনে যেতে হয়েছে।

সংঘর্ষের একটি মুহূর্ত। আজ বৃহস্পতিবার বগুড়ার সাতমাথা এলাকায়