কোনো কোনো জায়গায় খোয়া সরে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় গর্তের। সেই গর্তে বর্ষার পানি জমে হয়েছে কর্দমাক্ত।
দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় পূর্ববাসুলী বাজার থেকে মনাগঞ্জ পর্যন্ত রাস্তা পাকাকরণের কাজ শুরু হয়ে বন্ধ হয়ে আছে। তিন কিলোমিটার রাস্তায় ইটের খোয়া বিছানো আছে সাড়ে তিন বছর হলো। খোয়া বিছানো এই রাস্তা যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কোনো কোনো জায়গায় খোয়া সরে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় গর্তের। সেই গর্তে বর্ষার পানি জমে হয়েছে কর্দমাক্ত। কোথাও কোথাও জন্মেছে ঘাস।
শুধু এই সড়কটিই নয়, উপজেলার এমন ২০টি প্যাকেজে ১০০ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক পাকাকারণের কাজে এভাবে খোয়া বিছানোর কাজ সম্পন্ন হলেও কাজ আর এগোয়নি। সরেজমিনে দেখা গেছে, পূর্ববাসুলী বাজার-মনাগঞ্জ সড়কের মতো একই অবস্থায় কাজ বন্ধ রেখেছেন প্রত্যেক প্যাকেজে দরপত্র নেওয়া ঠিকাদারেরা।
এ ব্যাপারে খানসামা উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ বলেন, গ্রামীণ ‘এ’ ও ‘বি’ শ্রেণিতে রংপুর বিভাগ উন্নয়ন প্রকল্প থেকে খানসামা উপজেলায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২০টি প্যাকেজে মোট ১০০ কিলোমিটার রাস্তার দরপত্র আহ্বান করা হয়। সেই কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের জুনে। কিন্তু চলতি মাস পর্যন্ত এসব রাস্তার ৭৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অর্থ সংকুলান না থাকায় ঠিকাদাররা কাজ করতে পারেননি।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার কাচিনীয়া বাজার হয়ে প্ল্যানবাজার-উত্তমপাড়া পর্যন্ত তিন কিলোমিটার রাস্তায় খোয়া বিছানো রাস্তায় চলাচলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্থানীয়রা। খানসামা জিয়াসেতু থেকে ভবানীগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার রাস্তা সম্প্রসারণের কাজও থমকে আছে। সেখানেও বিছিয়ে রাখা হয়েছে ইটের খোয়া। কোনো জায়গায় খোয়া সরে গিয়েছে, বর্ষার পানিতে ভেঙে গেছে রাস্তাও। এ ছাড়া কাচিনীয়া-প্ল্যানবাজার সড়কে ছোট ছোট দুটি কালভার্ট ভেঙে আছে।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, কাচিনীয়া থেকে প্ল্যান বাজারের এই রাস্তার আশপাশে ডাক্তারপাড়া, মেম্বারপাড়া, তফিশাপাড়া, ডাঙ্গাপাড়া, লাঠুপাড়া, খাইচালুশাহপাড়া, মুহুরীপাড়াসহ ১১টি পাড়ার ১২-১৫ হাজার মানুষ দৈনিক যাতায়াত করেন। কৃষিপণ্য আনা-নেওয়াসহ দৈনন্দিন প্রয়োজনে কাচিনীয়া বাজারে আসতে হয় তাঁদের। রাস্তাটি সংস্কার না হওয়ায় বাজারে মালামাল আনা-নেওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা।
পূর্ববাসুলী বাজার এলাকার সুজন শেখ বলেন, একে তো রাস্তাটা সরু। তার ওপর যানবাহনের চাপ। বালুর গাড়ি যায় এই রাস্তা দিয়ে। ইজিবাইক বা ভ্যানগাড়ি সহজে এই রাস্তায় আসতে চায় না। আসলেও ভাড়া বেশি দাবি করেন চালকেরা। রাস্তায় বড় বড় গর্তে কাদাপানি জমে থাকায় হেঁটে চলাচলেও অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ঠিকাদার বলেন, ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে হিসেবে এসব রাস্তার কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। যে পরিমাণ রাস্তার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল, সে পরিমাণ কাজের অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। কাজের শুরুতে ২৫-৩০ শতাংশ টাকা দেওয়া হয়েছিল। সময়মতো অর্থ না পাওয়ায় কাজ করা সম্ভব হয়নি। এদিকে বিটুমিন, ইট-পাথর-বালি-সিমেন্ট সবকিছুরই দাম বেড়েছে। তখনকার হিসাব অনুযায়ী কাজ করতে গেলে চরম ক্ষতির মুখে পড়বেন ঠিকাদাররা। এত লোকসানের ভার মাথায় নিয়ে কাজ করা সম্ভব নয়।
দিনাজপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী এফ এম খায়রুল ইসলামবলেন, মোট ১৩টি প্রকল্পের আওতায় ৫৬৪ কিলোমিটার রাস্তার কাজ চলমান রয়েছে। রংপুর বিভাগীয়পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-২-এর আওতায় যেসব রাস্তার কাজ চলমান, তার বেশ কয়েকটির কাজ আর ঠিকাদারেরা করবেন না বলে জানিয়েছেন। সেসব কাজের দরপত্র বাতিল করে পুনরায় দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া চলছে।