যশোরের মনিরামপুর উপজেলার হরিদাসকাটি ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেনকে মারধর করা হয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মাহাবুর রহমান (৩৫) ও তাঁর সহযোগী মো. আসাদুজ্জামান (৪০) তাঁকে মারধর করেছেন বলে মোশাররফ হোসেন অভিযোগ করেছেন।
আজ সোমবার দুপুরে উপজেলার হোগলাডাঙ্গা বাজারে এ ঘটনা ঘটেছে। আহত ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
মাহাবুর রহমান মনিরামপুর উপজেলার হরিদাসকাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। এ ছাড়া তিনি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য। তিনি উপজেলার হোগলাডাঙ্গা গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে। তাঁর সহযোগী মো. আসাদুজ্জামান উপজেলার হোগলাডাঙ্গা গ্রামের নওশের আলী গাজীর ছেলে।
আহত ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘হোগলাডাঙ্গা বাজারে সরকারি খাসজমি আছে। কয়েক মাস আগে পাঁচজনের নামে বাজারের জমি ইজারা দেওয়া হয়েছে। হোগলাডাঙ্গা বাজারের সরকারি জমির পাশে ব্যক্তিমালিকানাধীন ও বিদ্যালয়ের জমি রয়েছে। কয়েক দিন আগে আমি সরেজমিন ঘুরে এসি ল্যান্ড স্যারের কাছে জমির পরিমাণ উল্লেখ করে প্রতিবেদন দিয়েছি।’
বেলা একটার দিকে নিজের মোটরসাইকেলে করে গোপালপুর ভূমি অফিসের উদ্দেশে বের হন মোশাররফ হোসেন। এই সময় হোগলাডাঙ্গা বাজারে তাঁর মোটরসাইকেলের গতি রোধ করে তাঁকে মারধর করা হয়।
মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আজ দুপুরে আমি হোগলাডাঙ্গা বাজারের পাশে অবস্থিত হরিদাসকাটি ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে বের হয়ে মোটরসাইকেলে করে গোপালপুর ভূমি অফিসে যাচ্ছিলাম। বেলা একটার দিকে হোগলাডাঙ্গা বাজারে পৌঁছে দেখি, মাহাবুর রহমান, আসাদুজ্জামানসহ ১৫-২০ জন দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁরা আমাকে সেখানে থামতে বলেন। আমি থামলে তাঁরা বলতে থাকেন, আমি ব্যক্তিমালিকানা ও বিদ্যালয়ের জমি সরকারি জমি দেখিয়ে প্রতিবেদন দিয়েছি। কথা বলতে বলতে একপর্যায়ে মাহাবুর আমার মুখে তিন থেকে চারটি ঘুষি মারেন। এরপর আসাদুজ্জামান আমার মোটরসাইকেলে থাকা হেলমেট নিয়ে মাথায় আঘাত করে আমাকে রক্তাক্ত জখম করেন। খবর পেয়ে এসি ল্যান্ড স্যার ঘটনাস্থলে গিয়ে আমাকে সেখান থেকে তাঁর গাড়িতে করে এনে মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছেন। এ ঘটনায় আমি থানায় অভিযোগ দেব।’
মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তন্ময় বিশ্বাস বলেন, ভূমি সহকারী কর্মকর্তার মাথায় সেলাই দেওয়া হয়েছে। তিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আলী হাসান বলেন, ‘আজ সকালে আমার দপ্তরের কানুনগো আকরাম হোসেন হোগলাডাঙ্গা বাজারে সরকারি জমি মাপতে যান। কানুনগোকে সহায়তা করতে সেখানে যান হরিদাসকাটি ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন। সেখানে মাহাবুর এসে খুব ডিস্টার্ব করতে থাকেন। বেলা একটার দিকে নিজের মোটরসাইকেলে করে গোপালপুর ভূমি অফিসের উদ্দেশে বের হন মোশাররফ হোসেন। এই সময় হোগলাডাঙ্গা বাজারে তাঁর মোটরসাইকেলের গতি রোধ করে তাঁকে মারধর করা হয়। খবর পেয়ে আমি আহত ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে উদ্ধার করে মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছি। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।’
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চইলে মাহাবুর রহমান বলেন, ‘আমি ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে মারধর করিনি। ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা বাজারের যে মালিকদের জমি সরকারি দেখিয়ে ইজারা দিয়েছেন, সেই সব ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকেরা তাঁকে মারধর করেছেন। আমি তাঁদের কাছ থেকে তাঁকে উদ্ধার করেছি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে একটি পক্ষ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা করে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।’
মনিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ বি এম মেহেদী মাসুদ বলেন, হরিদাসকাটি ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে মারধরের ব্যাপারে মামলা প্রক্রিয়াধীন।