রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল নেতাকে কক্ষে আটকে রেখে মারধর করার অভিযোগে নিজের অবস্থান তুলেছেন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব। তিনি দাবি করেছেন, ‘ছাত্রদল নেতা নাফিউল ইসলাম ওরফে জীবন সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য ভুল তথ্য ও মিথ্যাচার করছেন। তাঁকে ছিনতাইকারী ভেবে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছাত্রলীগ। তাঁকে কেউ মারধর করিনি। আর পিস্তলের কথা তো প্রশ্নই আসে না।’
গতকাল বুধবার দিবাগত রাতে এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে আসাদুল্লা-হিল-গালিব এই দাবি করেন। তিনি ওই পোস্টটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’ নামের ফেসবুক গ্রুপেও শেয়ার করেন।
আসাদুল্লা-হিল-গালিব ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘গত দুই দিন থেকে বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা হচ্ছে, আমি নাকি ছাত্রদলের নেতাকে পিস্তল দেখিয়ে ভয় দেখিয়েছি, যা পুরোপুরি বানোয়াট ও মিথ্যাচার। ছাত্রলীগের হাতে থাকে কলম, অস্ত্র নয়। অস্ত্রের রাজনীতি ছাত্রলীগ করে না, অস্ত্রের রাজনীতি করে শিবির-ছাত্রদল। সেদিনের ঘটনা ছোট করে সবার সঙ্গে শেয়ার করছি; কারণ, পত্রিকার কাটতি বাড়ানো নিউজ দেখে সবাই আমাকে ভুল ভাবছেন।’
ঘটনার বিবরণ দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লিখেছেন, ‘৭ মে সন্ধ্যার দিকে রোকেয়া হলের সামনে একটি বাইকে দুজন ব্যক্তি ছাত্রলীগের কয়েকজনকে দেখা মাত্রই পালানোর চেষ্টা করে। ছাত্রলীগের নেতারা ছিনতাইকারী ভেবে তাদের পথরোধ করে ধরে ফেলে ও তারা কারা এবং কেন তাদের দেখে পালাচ্ছিল, সেটা জানার জন্য মাদার বখ্শ হলে নিয়ে আসে। আমাকে আমার বন্ধু ছাত্রলীগের সহসভাপতি মনু মোহন বাপ্পা ফোন দিয়ে বলে, ছিনতাইকারী সন্দেহে দুজনকে আমরা ধরেছি। আমি ওদের প্রক্টরকে ফোন দিতে বলি ও তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে বলি।’
মারধরের শিকার নাফিউল ও ইউনুস দুজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। নাফিউল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। ঘটনার পর মানসিকভাবে তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
আসাদুল্লা-হিল-গালিব আরও লিখেছেন, ‘আমি প্রায় ৩০ মিনিট পর মাদার বখ্শ হলে আমার রুমে যাই ও তাদের জিজ্ঞাসা করি, তারা কারা। একজন বলে, তার নাম নাফিউল ইসলাম জীবন। সে ছাত্রদলের সদস্য ও দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্বে আছে। আরেকজন পরিচয় দেয়, তার নাম ইউনুস। সে শাহ মখ্দুম হলে থাকে, কিন্তু সে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি, তুমি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দেখে চোরের মতো পালাচ্ছিলে কেন? সে জানায়, দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিল। আজকেই সার্টিফিকেট তুলতে এসেছে। হঠাৎ ছাত্রলীগ দেখে ভয় পেয়ে পালিয়েছে।’
গালিব লিখেছেন, ‘আমি তার পরিচয় জানার জন্য তার নেতাদের ফোন দিতে বলি। সে ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী ও যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল মিঠুকে ফোন দেয়। ফোন লাউডস্পিকারে ছিল। তারা দুজনই শনাক্ত করে নাফিউল তাদের কর্মী এবং তারা অনুরোধ করে, আমরা যেন তাকে মারধর না করি। সে খুব অসুস্থ। ইতিমধ্যেই আমার রুমের সামনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি সাংবাদিক সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ কমপক্ষে ১৫ জন সাংবাদিক ভাইয়েরা আসেন।’
মারধরের কথা অস্বীকার করে আসাদুল্লা-হিল-গালিব লিখেছেন, ‘আমি তাঁদের (সাংবাদিক) সবাইকে আমার রুমে প্রবেশ করাই। তাঁরা তাকে জিজ্ঞাসা করে, আমি বা আমার কোনো নেতা-কর্মী তাকে কোনো ধরনের মারধর বা নির্যাতন করেছি কি না। সে সবাইকে বলেছে, আমি তাকে কোনো মারধর করিনি। এমনকি আমি যখন সহকারী প্রক্টর স্যারদের কাছে তাকে হস্তান্তর করি, তখনো স্যারদের কাছে সে স্বীকারোক্তি দিয়েছে, তাকে আমরা কেউ মারধর করিনি। আর পিস্তলের কথা তো প্রশ্নই আসে না।’
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আরও লিখেছেন, ‘আজ দুই দিন থেকে পত্রিকা ও বিভিন্ন নিউজ পোর্টালে নিউজ হয়েছে, আমি নাকি তাকে পিস্তল দেখিয়ে ভয় দেখিয়েছি, নির্যাতন করেছি। এই মিথ্যাচার আজ বিএনপির রুহুল কবির রিজভীও করেছেন। দেশবাসীর কাছে ছাত্রলীগ নিয়ে ভুল তথ্য ও মিথ্যাচার করেছেন। বিএনপির রুহুল কবির রিজভীর মিথ্যাচারের তীব্র নিন্দা জানাই। সেই সঙ্গে সবাইকে জানাতে চাই, এই ভিতু নাফিউল সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য সাংবাদিক ভাইদের কাছে ভুল তথ্য ও মিথ্যাচার করেছে।’
ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা যদি ক্যাম্পাসের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করে, তারা যদি এই মতিহারের সবুজ চত্বরকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে, সর্বপ্রথম আমি আসাদুল্লা-হিল-গালিব রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তাদের প্রতিহত করব, ইনশা আল্লাহ।’
গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব ও তাঁর অনুসারীদের বিরুদ্ধে ছাত্রদল নেতা নাফিউল ইসলাম ওরফে জীবন ও তাঁর সহপাঠী বন্ধু বন্ধু ইউনুস খানকে তিন ঘণ্টা আটকে রেখে মারধর ও পিস্তল ঠেকিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হলের ২১৫ নম্বর কক্ষে ওই দিন দিবাগত রাত ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটে। মারধরের শিকার নাফিউল ও ইউনুস দুজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। নাফিউল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। ঘটনার পর মানসিকভাবে তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। নির্যাতনের ঘটনায় তিনি কিংবা তাঁর বন্ধু এখনো কোথাও কোনো অভিযোগ দেননি।
শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব ছাড়া এ ঘটনায় ছাত্রলীগের অভিযুক্ত অন্য নেতারা হলেন শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মনু মোহন (বাপ্পা), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক স্বদেশ শেখ, সাদিকুল ইসলাম (সাদিক), সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ হাসান (সোহাগ) এবং মাদার বখ্শ হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মিশকাত হাসান। আটকের বিষয়টি স্বীকার করলেও তাঁরা নির্যাতনের কথা অস্বীকার করেন।