বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের নিষ্ক্রিয় কমিটি ৮ বছর পর বিলুপ্ত

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্ত করেছে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি। দুই বছর মেয়াদের ওই কমিটি প্রায় আট বছর পার করেছে। তবে শুরু থেকেই ওই কমিটির কোনো কার্যক্রম ক্যাম্পাসে দেখা যায়নি।

কমিটি বিলুপ্ত করায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের পদপ্রত্যাশী নেতা-কর্মীরা। তাঁরা বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরেই পুরোনো কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন। দেরিতে হলেও কেন্দ্রীয় কমিটির এই সিদ্ধান্তে তাঁরা খুশি। এতে ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের রাজনীতি গতিশীল হবে। নতুন পরিস্থিতিতে ছাত্রদলকে ইতিবাচক রাজনীতির মডেল হিসেবে গড়তে চান তাঁরা।

গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্তির বিষয়টি জানানো হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, শিগগিরই এ দুই ইউনিটের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে।

২০১৬ সালে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের প্রথম কমিটি গঠিত হয়। যেখানে রেজা শরিফকে সভাপতি করে আংশিক কমিটি প্রকাশ করা হয়েছিল। পরে ২০২১ সালে রেজা শরিফ ও হাসান আল হাসিবকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটি থাকলেও ক্যাম্পাসে কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়নি। বর্তমানে ওই কমিটির শীর্ষ পাঁচজনের কারও ছাত্রত্ব নেই। কেউ বিদেশে আছেন; কেউবা দেশে চাকরি করছেন।

সংগঠনটির বিলুপ্ত কমিটির নেতারা অবশ্য দাবি করেছেন, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের দমন-নির্যাতনে তাঁরা প্রকাশ্যে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারেননি। কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার পর সাবেক সভাপতি রেজা শরিফ ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন। এতে তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘দীর্ঘ আট বছর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। হয়তো কিছু সফলতা ছিল, অনেক ব্যর্থতা ছিল। প্রাণের সংগঠন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের জন্য শুভকামনা।’

নিশ্চুপ ছিল ছাত্রদল
ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের কমিটি আছে, তা প্রকাশ্যে আসে ২০২০ সালের ১ মার্চ বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী জান্নাতুল নওরীণ ওরফে ঊর্মি নামের এক শিক্ষার্থী নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর। তৎকালীন ছাত্রলীগের নামে ক্যাম্পাসে সক্রিয় কয়েকজন জান্নাতুলের ওপর বর্বর নির্যাতন চালান বলে অভিযোগ ওঠে। জান্নাতুল ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও কোনো পদবি ছিল না। ওই সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুতে সোচ্চার ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে কোটাবিরোধী আন্দোলনেও সক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন তিনি।

জান্নাতুলের ওপর নির্যাতনের ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। তবে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কোনো প্রতিবাদ কর্মসূচি হয়নি। এমনকি বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমেও কেউ বক্তব্য পর্যন্ত দিতে রাজি হননি।

জান্নাতুল বর্তমানে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসম্পাদক পদে আছেন। আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমি শারীরিকভাবে এখনো সুস্থ নই। তবে এত কিছুর পরও রাজনীতি থেকে দূরে যাইনি। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও সন্ত্রামুক্ত ছাত্ররাজনীতি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছি। ছাত্রদলের নতুন কর্মীদের অনুপ্রেরণা (মোটিভেশন) দেওয়ার কাজ করছি।’

ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ১১ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এক আদেশে এ ঘোষণা দেন।

এতে বলা হয়, সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সিন্ডিকেটের ৮৫তম সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী কোনো রাজনৈতিক বা পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারবেন না। একই সঙ্গে সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রমও বন্ধ থাকবে।

এমন পরিস্থিতিতে ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্ত করা ও নতুন কমিটি ঘোষণার যে প্রক্রিয়া, তাতে সংগঠনটির পদপ্রত্যাশী নেতা-কর্মীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। এতে প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে ছাত্রদল কীভাবে ক্যাম্পাসে রাজনীতিতে সক্রিয় হবে? এ বিষয়ে ছাত্রদলের সভাপতি পদপ্রত্যাশী বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘গত ১৫ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি ছিল না। তবে সংগঠনটির তিন থেকে চারটি পক্ষ সক্রিয় ছিল। তারা ভূমি দখল, চাঁদাবাজি, হল দখল ও সাধারণ ছাত্রদের নির্যাতন করেছে। আমরা এর থেকে শিক্ষা নিয়েছি। আমাদের সমর্থক নেতা-কর্মীদের আমরা ছাত্রলীগের এসব অপকর্মের ধারাবাহিকতায় শামিল না হওয়ার জন্য মোটিভেট করছি। ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কথা বলব। এতে কোনো বাধা নেই। আমরা চাই ছাত্ররাজনীতিকে এর মূল ফর্মে ফিরিয়ে আনতে; যাতে ছাত্রদল সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকারের প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়।’

ছাত্রদলের পদপ্রত্যাশী আরেকজন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী সুজন মাহমুদ বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হয়েছিল রাজনীতির এই অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনের শপথ নিয়ে। আমরা অনুধাবন করেছি, নতুন পরিস্থিতিতে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে হবে। এ জন্য ছাত্রদল রাজনীতিতে নতুন ধারাই ফেরাতে চায়। ছাত্ররাজনীতি হবে শিক্ষার্থীবান্ধব ও তাঁদের অধিকার আদায়ের প্ল্যাটফর্ম। আশা করি, আমরা সেই আস্থা ফেরাতে পারব।’