আত্মসমর্পণের ৫৪ দিন পর যশোরের আলোচিত সন্ত্রাসী আনিসুর রহমান লিটন ওরফে ফিঙে লিটন জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। আজ সোমবার দুপুরে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পান।
আনিসুর রহমান লিটন যশোর শহরের বারান্দীপাড়া এলাকার বদর উদ্দিনের ছেলে। যশোরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে তিনি ‘ফিঙে লিটন’ নামে পরিচিত। অস্ত্র, হত্যা, চাঁদাবাজিসহ ২০ থেকে ২২টি মামলা মাথায় নিয়ে ২০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি বিদেশে পলাতক ছিলেন। এ সময় তিনি ভারত, নেপাল, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, কাতারসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থান করেছেন বলে জানা গেছে।
দুই দশক পর লিটন দেশে ফিরে গত ৪ সেপ্টেম্বর কঠোর গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে যশোর আদালত আত্মসমর্পণ করেন। অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ফারজানা ইয়াসমিনের আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ৫৪ দিন হাজতবাসের পর আজ বেলা আড়াইটার দিকে কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের কারাধ্যক্ষ শরিফুল আলম বলেন, ‘অস্ত্র আইনের একটি মামলায় আনিসুর রহমান লিটনের ১০ বছর সাজা হয়। গত ৪ সেপ্টেম্বর তিনি আদালতের মাধ্যমে কারাগারে আসেন। আদালত থেকে তিনি জামিন পেয়েছেন। জামিনে মুক্তির নথিপত্র হাতে আসায় আজ দুপুরে তাঁকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কারাগারে আটক থাকা অবস্থায় মাসখানেক আগে অন্য একটি মামলায় তিনি জামিন পান।’
আদালত পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে অস্ত্র আইনের একটি মামলায় লিটনের ১০ বছরের সাজা হয়। এর পর থেকে তিনি পলাতক ছিলেন। ওই মামলায় আত্মসমর্পণ করে তিনি জামিনের আবেদন করেন। আদালত নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
বিদেশে থাকলেও লিটন যশোর-ঢাকা রুটের যাত্রীবাহী বাস ‘লিটন ট্রাভেল’সহ দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারের পাশাপাশি স্ত্রী ফাতেমা আনোয়ারকে রাজনীতিতে সক্রিয় করেন। লিটন একসময় ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও তাঁর স্ত্রী সদর উপজেলা যুব মহিলা লীগের আহ্বায়ক হন। তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বজন নিয়ে কটূক্তিমূলক মন্তব্য করার অভিযোগে তাঁকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। ফাতেমা আনোয়ার গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যশোর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হয়ে সাড়া ফেলেন। তবে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তিনি নির্বাচনে পরাজিত হন।
যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরাও শুনি ফিঙে লিটন ইন্টারপোলের মোস্ট ওয়ান্টেড আসামি। কিন্তু আমাদের কাছে তাঁর সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। তবে কোতোয়ালি থানায় তাঁর বিরুদ্ধে তিনটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল। আত্মসমর্পণের পর আদালতে এসব তথ্য পাঠানো হয়।’
ওসি বলেন, ‘সব মামলার তথ্য আপডেট নেই। কারণ, এসব মামলা ২০ বছর আগের। তখন সবকিছু ম্যানুয়াল ছিল। এ জন্য পুরোনো সব মামলার তথ্য আপডেট করা নেই। নতুন করে সব মামলার নথিপত্র খুঁজতে হচ্ছে।’