২০০৮ সালে ভোলা-৪ (চরফ্যাশন-মনপুরা) আসনের সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল ইসলাম ওরফে জ্যাকবের বার্ষিক আয় ছিল ২ লাখ টাকার কম। এরপর তিনবার সংসদ সদস্য ও একবার উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ১৫ বছরে তাঁর বার্ষিক আয় ১৭০ গুণ বেড়ে ৩ কোটি ছাড়িয়েছে।
২০০৮ সালে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ফ্ল্যাট ও বাড়ি ছাড়া কোনো স্থাবর সম্পদ না থাকলেও এখন ওই ফ্ল্যাট-বাড়ির সঙ্গে তাঁর আরও প্রায় পৌনে ১৫ কোটি টাকার সম্পদ বেড়েছে। একই সময়ে তাঁর স্ত্রীর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে সোয়া ৩ কোটির বেশি।
আবদুল্লাহ আল ইসলাম ভোলা-৪ আসনের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামা এবং নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
হলফনামা ঘেঁটে দেখা গেছে, পেশায় ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ আল ইসলামের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় বার্ষিক আয় ছিল ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। ৫ বছর পর ২০১৩ সালে তাঁর আয় বেড়ে দাঁড়ায় ১ কোটি ৬৮ লাখ ৩৪ হাজার ১৯ টাকায়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তুলনায় আয় কিছুটা কমলেও এবার তিনি ৩ কোটি ১৪ লাখ ৭৭ হাজার ৩৯৯ টাকা আয় দেখিয়েছেন। অর্থাৎ ১৫ বছরে তাঁর বেড়েছে ১৭০ গুণের বেশি। ২০০৮ ও ২০১৩ সালে আবদুল্লাহর স্ত্রীর কোনো আয় ছিল না। গতবার নির্বাচনের সময় স্ত্রীর নামে ব্যবসা থেকে ২০ লাখ টাকা আয় দেখালেও এবার আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ লাখ টাকায়।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় আবদুল্লাহর হাতে নগদ টাকা ছিল ৫ লাখের কম। তবে স্ত্রীর কাছে ছিল ৩০ লাখ সাড়ে ৩৮ হাজার টাকা। এবার আবদুল্লাহর হাতে নগদ আছে ১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। তবে স্ত্রীর হাতে নগদ টাকার পরিমাণ কমেছে। ১৫ বছর আগে তাঁর কাছে অস্থাবর সম্পদ বলতে ২০ ভরি সোনার বাইরে ২১ লাখ ৪৩ হাজার ২৫৮ টাকা ছিল। এখন তাঁর কাছে ৬০ ভরি সোনা ছাড়াও ১৬ কোটি ৩৮ লাখ ২৯ হাজার ১৪৩ টাকার সম্পদ আছে। অর্থাৎ স্বর্ণালংকার ছাড়াই ১৫ বছরে তাঁর অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ৭৬ গুণের বেশি।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় সংসদ সদস্যের স্থাবর সম্পদ বলতে পৈতৃক সূত্রে ঢাকায় দুটি ফ্ল্যাট ও চরফ্যাশনে একটি বাড়ি থাকার কথা উল্লেখ করেছিলেন। তিন মেয়াদে সংসদ সদস্যের দায়িত্ব পালনের পর ওই ফ্ল্যাট-বাড়ি ছাড়াও ১৪ কোটি ৬৬ লাখ ২৫ হাজার ১৭৪ টাকার স্থাবর সম্পদ বেড়েছে। এ সময়ে তাঁর নামে ৩০ একরের বেশি কৃষিজমি, একটি মাছের খামার, একটি কৃষি খামার ও একটি অবকাশযাপন কেন্দ্র (রিসোর্ট) হয়েছে। পাঁচ বছর আগেও তাঁর কোনো রিসোর্ট ছিল না। কৃষিজমি ছিল প্রায় ১৭ একর। ওই ১৭ একর কৃষিজমির দাম ১ কোটি ১ লাখ টাকা দেখালেও এবার কৃষিজমি বেড়ে ৩০ একর হয়েছে। কিন্তু দাম দেখিয়েছেন ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ কৃষিজমি ১৩ একর বাড়লেও দাম বেড়েছে মাত্র ২৫ লাখ।
২০০৮ সালে নির্বাচনের সময় হলফনামায় স্ত্রীর কোনো স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য দেননি আবদুল্লাহ। ২০১৩ সালেও তাঁর নামে কোনো স্থাবর সম্পদ ছিল না। কিন্তু ২০১৮ সালে স্ত্রীর নামে ১ কোটি ২ লাখ টাকা দামের ১ একর অকৃষিজমি ও প্রায় ৭৫ লাখ টাকার ব্যবসায়িক মূলধন থাকার তথ্য দিয়েছিলেন আবদুল্লাহ। এবার অকৃষিজমি ২ একর হলেও দাম দেখিয়েছেন মাত্র ২৪ লাখ। এ ছাড়া ৫ বছরে স্ত্রীর নামে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা দামের নতুন ফ্ল্যাট হয়েছে।
২০১৮ সালে স্বর্ণালংকার, আসবাব ও ইলেকট্রনিক সামগ্রীর দাম ছাড়াই তাঁর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ছিল ২ কোটি ১৭ লাখ ৮২ হাজার ৯৩ টাকার। ৫ বছর পর তাঁর সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ২৮ লাখ ৬৪ হাজার ৪৫ টাকায়। গতবার স্ত্রীর ২৫ ভরি সোনা থাকার কথা উল্লেখ করলেও এবার উল্লেখ করেননি।