জমজমাট কুষ্টিয়ার কুমারখালী চৌরঙ্গী মহাবিদ্যালয় মাঠে বসা পেঁয়াজের হাট। প্রতি রোববার এ হাট বসে। গত রোববার কৃষকেরা হাটে লাভের আশায় অপরিপক্ব পেঁয়াজও আনেন
জমজমাট কুষ্টিয়ার কুমারখালী চৌরঙ্গী মহাবিদ্যালয় মাঠে বসা পেঁয়াজের হাট। প্রতি রোববার এ হাট বসে। গত রোববার কৃষকেরা হাটে লাভের আশায় অপরিপক্ব পেঁয়াজও আনেন

লাভের আশায় অপরিপক্ব পেঁয়াজ তুলছেন চাষিরা

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় পেঁয়াজ চাষ বাড়ছে। এ মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৩৯০ হেক্টর বেশি জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। তবে বেশি দামের আশায় অপরিপক্ব পেঁয়াজ তুলে বিক্রি করছেন চাষিরা। এদিকে এক সপ্তাহের ব্যবধানে হাটে পেঁয়াজের দাম কমেছে।

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, অপরিপক্ব পেঁয়াজ তোলায় প্রতি বিঘা জমিতে ১০ থেকে ১৫ মণ কম উৎপাদন হবে। এতে ফলনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা আছে। চাষিরা বলছেন, গত বছর ভরা মৌসুমে প্রতি কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা লোকসানে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হয়েছিল। তবে এখন পেঁয়াজের দাম ভালো। সে জন্য প্রায় ২০ দিন আগে কাঁচা পেঁয়াজ তুলে বিক্রি করছেন।

সপ্তাহের প্রতি রোববার উপজেলার যদুবয়রা-পান্টি সড়কের চৌরঙ্গী মহাবিদ্যালয় মাঠে বসে জেলার সবচেয়ে পেঁয়াজের বড় হাট। গত রোববার সকালে হাটে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের দুই পাশে ও বিশাল মাঠে বসেছে পেঁয়াজের হাট। শতাধিক কৃষক ও ব্যবসায়ী অপরিপক্ব পেঁয়াজ কেনাবেচা করছেন।

হাটে আসা যদুবয়রা ইউনিয়নের জোতমোড়া গ্রামের ওহিদুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর সিজনে (মৌসুম) লোকসানে পেঁয়াজ বিক্রি করেছিলাম। এখন বাজারে দাম ভালো। সে জন্য সময়ের আগেই কাঁচা পেঁয়াজ তুলেছি। ১ হাজার ৪০০ টাকা মণ দরে সাড়ে তিন মণ বিক্রি করেছি। দাম ভালো হলেও এখন পেঁয়াজ তোলায় প্রতি বিঘায় ১০ থেকে ১৫ মণ ফলন কম হচ্ছে।’

কৃষক লোকমান হোসেন বলেন, অন্তত ২০ দিন পর পেঁয়াজ তুললে ফলন ভালো পাওয়া যেত। কিন্তু অনেকের দেখাদেখি তিনিও অল্প জমির পেঁয়াজ তুলেছেন। দিন দিন পেঁয়াজের দাম কমছে। গত সপ্তাহে ৩ হাজার ১০০ টাকা মণ দুই মণ পেঁয়াজ বিক্রি করেছিলেন। তবে রোববার বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৬০০ টাকা মণ।

স্থানীয় পেঁয়াজ ব্যবসায়ী করিম মণ্ডল জানান, রোববার মান ও আকারভেদে সর্বনিম্ন ৩০ ও সর্বোচ্চ ৪০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। তিনি প্রায় ৩০০ মণ পেঁয়াজ কিনেছেন। চট্টগ্রামে নিয়ে বিক্রি করবেন। দামের লোভে কৃষকেরা অপরিপক্ব পেঁয়াজ হাটে তুলেছেন।

ঝিনাইদহ থেকে হাটে আসা ব্যবসায়ী সিরাজ প্রামাণিক বলেন, তিনি গত সপ্তাহে ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ১০০ টাকা মণ প্রায় ৪৫০ মণ পেঁয়াজ কিনেছিলেন। কিন্তু রোববার বাজারদর অর্ধেকে নেমেছে।

চৌরঙ্গী পেঁয়াজ হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য মো. মিলন হোসেন বলেন, কৃষকেরা অপরিপক্ব পেঁয়াজ হাটে এনেছেন। মান ও আকারভেদে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। যার দাম গত সপ্তাহে ৬০ থেকে ৭০ টাকা ছিল। রোববার প্রায় ৮০০ থেকে ৯০০ মণ পেঁয়াজ বেচাকেনা হয়েছে। তবে দাম কম থাকায় অনেক কৃষক পেঁয়াজ বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি পেঁয়াজ চাষাবাদের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ সময় বাজারে পেঁয়াজের চড়া দাম ছিল। সে জন্য লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে প্রায় ৩৯০ হেক্টর বেশি জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করেছেন চাষিরা। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৯ হাজার ৭০৫ মেট্রিক টন। কিন্তু দামের লোভে কৃষকেরা প্রায় ১৫ থেকে ২০ দিন আগেই পেঁয়াজ তুলে বিক্রি করছেন। ফলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবাশীষ কুমার দাস বলেন, পেঁয়াজ পরিপক্ব হতে এখনো প্রায় ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগবে। কিন্তু বাজারে দাম বেশি থাকায় কৃষকেরা অপরিপক্ব পেঁয়াজ তুলে বিক্রি করছেন। এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাঁরা অপরিপক্ব পেঁয়াজ তোলার ব্যাপারে কৃষকদের নিরুৎসাহ করছেন।