নোয়াখালী জেলা শহরের মাইজদী বাজার থেকে সোনাপুর পর্যন্ত দূরত্ব প্রায় সাত কিলোমিটার, যার পুরোটাই কমবেশি ব্যস্ত এলাকা। কিন্তু এই ব্যস্ত সড়কে আজ বুধবার সকাল থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্য চোখে পড়েনি। তবে সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করছেন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের কারও কারও মাথায় দেখা গেছে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ব্যাজ। শুধু সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতেই নয়, শিক্ষার্থীরা শহরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, প্রধান সড়কের বিভাজকের সৌন্দর্য বাড়াতে গাছ লাগানোর কাজ করছেন। আন্দোলন-সংঘাতের সময় সড়ক বিভাজকের গাছগুলোর অনেক ক্ষতি হয়েছে। সেসব গাছের পরিচর্যা করতেও দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। এসব কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানান কোনো কোনো পথচারী।
শহরের টাউন হল মোড় এলাকায় শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা নাদিম মাহমুদ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, নোয়াখালী শহরের একটি বেসরকারি কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। সারা দেশে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হলে তাঁদের দাবি যৌক্তিক মনে হওয়ায় নিজেও নেমে পড়েছিলেন আন্দোলনে। আন্দোলন সফলও হয়েছে। কয়েক দিনের অশান্ত পরিস্থিতির কারণে সড়কে ট্রাফিক পুলিশ নেই। তাই যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ শুরু করেছেন তাঁরা।
সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীরা এগিয়ে এলে দেশকে তাঁরাই সুন্দর করতে পারবেন। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সবার শেখা উচিত।
সুধারাম থানা ফটকে ঝুলছে তালা
আজ সকালে জেলা শহর মাইজদীর সুধারাম থানার প্রধান ফটকে তালা ঝুলতে দেখা গেছে। থানার ভেতরে কোনো পুলিশ সদস্যকে দেখা গেল না। স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের একটি সূত্রে জানা যায়, হামলা ও অগ্নিসংযোগের শিকার সোনাইমুড়ী ও চাটখিল থানার সব পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনসে নিয়ে আসা হয়েছে। অন্য থানাগুলোর পুলিশের কোনো সদস্যই এখন রাস্তায় বের হচ্ছেন না। দপ্তরে বসছেন না পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারাও। তাঁরা পুলিশ সদর দপ্তরের নতুন নির্দেশনার অপেক্ষায় আছেন।
জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, জেলার সব কয়টি থানার (পুড়ে যাওয়া দুটি থানা ছাড়া) পুলিশ সদস্যরা এই মুহূর্তে থানার ভেতরে অবস্থান করলেও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাইরে যাচ্ছেন না। নতুন মহাপরির্দশক (আইজিপি) আজ যোগদান করবেন। তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী তাঁরা কাজ শুরু করবেন।
থেমে নেই হামলা, ভাঙচুর
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডে নিকুঞ্জ বাবুর বাড়ির গীতা ভারতী মিশন মন্দির এবং চর ইশ্বর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের লক্ষ্মীদিয়া গ্রামের টকাগো বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর চালায় একদল দুর্বৃত্ত। এ সময় বাড়ির লোকজনের চিৎকারে আশপাশের মানুষজন প্রতিরোধে এগিয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
চাটখিল থানায় আবার অগ্নিসংযোগ
জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল সন্ধ্যায়ও চাটখিল থানায় অগ্নিসংযোগ করেছে একদল দুর্বৃত্ত। এর আগে গত সোমবার বিকেলে বিক্ষোভকারীরা আগুন দিয়েছিলেন ওই থানায়। আগুনে থানার সব মামলার কাগজপত্র ও জব্দ করা আলামত পুড়ে গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাটখিল উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, দ্বিতীয়বার আগুন দেওয়ার ঘটনাটি তিনি শোনেননি। তবে গতকাল দিনের বেলায় কিছু কিছু জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে হামলা ও ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেলেও এখন পরিস্থিতি শান্ত। তাঁরা বৈঠক করে সবাইকে এ বিষয়ে কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন।