বন বিভাগের আপত্তির পর খুলনার কয়রা পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণের স্থান পরিবর্তন করেছে ট্যুরিজম বোর্ড। ফলে উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের গোলখালী গ্রামের সিংঙ্গের চরের সংরক্ষিত বনের পরিবর্তে কয়রা সদর ইউনিয়নের সুন্দরবনসংলগ্ন কেওড়াকাটা নামের স্থানে পর্যটনকেন্দ্রটি নির্মাণ করা হবে।
কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মমিনুর রহমান গতকাল বৃহস্পতিবার ট্যুরিজম বোর্ড থেকে এ–সংক্রান্ত একটি চিঠি পেয়েছেন। ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, কয়রার গোলখালীতে পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণে বন বিভাগ আপত্তি জানায়। পরবর্তীকালে খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে জানানো হয়, কয়রা সদর ইউনিয়নের কেওড়াকাটা নামের স্থানে পর্যটনকেন্দ্রটি স্থাপন করা হলে বন বিভাগের কোনো আপত্তি থাকবে না। উপজেলা সদরের নিকটবর্তী হওয়ায় পর্যটকেরাও বেশি আগ্রহী হবেন। সে জন্য গোলখালীর পরিবর্তে কয়রা সদর ইউনিয়নের কেওড়াকাটা নামের স্থানে পর্যটনকেন্দ্রটি নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হলো।
এর আগে কয়রার সর্বদক্ষিণের সুন্দরবন লাগোয়া গোলখালী গ্রামের বেড়িবাঁধের বাইরে পলি জমে গড়ে ওঠা সিংঙ্গের চরের জঙ্গলে পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণ করতে বরাদ্দের পাশাপাশি ঠিকাদারও নিয়োগ করে ফেলেছিল স্থানীয় প্রশাসন। তবে জায়গাটি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের আওতাধীন এলাকা দাবি করে কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আপত্তির কথা জানায় বন বিভাগ।
বন বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্য দিয়ে উন্নয়নমূলক কার্যক্রম চালাতে হলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়াই গোলখালীর সিংঙ্গের চরে পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গোলখালী সিংঙ্গের চরের সংরক্ষিত বনাঞ্চল এলাকায় পর্যটকদের জন্য ওয়াকওয়ে, কাঠের সেতু কিংবা ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হলে সেখানকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
ইউএনও মমিনুর রহমান বলেন, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ট্যুরিজম বোর্ড গোলখালী এলাকায় পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণের জন্য প্রথম ধাপে প্রায় দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। সেখানে ওয়াকওয়ে, কাঠের সেতু, ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণের জন্য দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশও দেওয়া হয়েছিল। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মালামাল পরিবহন করে কাজ শুরু করার উদ্যোগ গ্রহণ করলে বন বিভাগ থেকে জায়গাটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল বলে নির্মাণকাজ বন্ধের জন্য অনুরোধ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ট্যুরিজম বোর্ড নতুন জায়গা নির্ধারণ করেছে। এতে জটিলতার অবসান হয়েছে।
বন বিভাগের কোবাদক ফরেস্ট কর্মকর্তা মো. মোবারক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গোলখালীর যেখানে পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, সেটি সরকারি গেজেট অনুযায়ী বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য হিসেবে সংরক্ষিত বনাঞ্চল। সে জন্য ওই এলাকায় কোনো কার্যক্রম শুরু না করার অনুরোধ জানানো হয়েছিল উপজেলা প্রশাসনকে। এখন যেখানে পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে, এটাতে বন বিভাগের আপত্তি নেই।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের দিকে কয়রা উপজেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার পূর্বে সুন্দরবনের পাশের ৬ নম্বর কয়রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়–সংলগ্ন এলাকাটিকে কেওড়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র নামে অবহিত করেন স্থানীয় তরুণেরা। সেই থেকে স্থানীয় তরুণদের দল ওই এলাকায় একটি পর্যটনকেন্দ্রের দাবি জানিয়ে ব্যাপক জনমত সৃষ্টি করে।
কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি বিদেশরঞ্জন মৃধা বলেন, সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে অবস্থিত কয়রায় আছে মসজিদকুঁড় মসজিদ, রাজা প্রতাপাদিত্যের বাড়ি, খালে খাঁর ৩৮ বিঘা দিঘি, আমাদী বুড়ো খাঁ-ফতে খাঁর দিঘিসহ নানা ঐতিহাসিক নিদর্শন ও স্থাপনা। পর্যটনকে ঘিরে এ উপজেলায় অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এত দিন এলাকার তরুণেরা কেওড়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণের জন্য সামাজিক আন্দোলন করেছে। এবার তার বাস্তবায়ন হচ্ছে। সুন্দরবনের পাশের ওই এলাকায় রয়েছে আদিবাসীদের গ্রাম, যা পর্যটকদের খুব সহজেই আকর্ষণ করবে। তাঁরা আশা করছেন, কয়রায় পর্যটনশিল্পের বিকাশ ঘটবে।