কেউ বলে দেড় শ, আবার কেউ বলে দুই শ বছর বয়স বটগাছটির। এই গাছ দেখে বড় হয়েছে রাঙামাটি শহরের পূর্ব ট্রাইবেল আদাম এলাকার কয়েকটি প্রজন্ম। বিশাল বটবৃক্ষ থেকে নেমে এসেছে ঝুরি। প্রায় দুই শতক জমিজুড়ে এর পুরোনো ঝুরি ও কাণ্ড। বিস্তৃত ডালপালা ছায়ায় ঢেকে রেখেছে চারপাশের অনেক দূর পর্যন্ত। তপ্ত গরমেও ঝিরঝিরে বাতাস আর ঠান্ডা ছায়া মেলে এই বটবৃক্ষের তলায়। সে কারণে এলাকার মানুষের মিলনস্থলে পরিণত হয়েছে বটতলা। কয়েক দিন ধরে এই মহিরুহটি কেটে ফেলার জন্য একাধিকবার প্রশাসনের লোকজন এসেছে। কিন্তু এলাকাবাসীর প্রতিরোধের মুখে তা সম্ভব হয়নি।
পূর্ব ট্রাইবেল আদামে বটগাছ কাটা নিয়ে এলাকাবাসী ও প্রশাসন এখন কার্যত মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। এলাকাবাসীর বাধার মুখে বটগাছটি কাটতে পারছে না প্রশাসন। এলাকাবাসীর দাবি, বটগাছটি এলাকাবাসীর আবেগের সঙ্গে জড়িত। এর ছায়ার প্রতিদিন শত শত মানুষ আড্ডা দেন ও গল্প করেন।
এলাকাবাসী ও প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, শহরের চম্পকনগর-ট্রাইবেল-পৌরসভা সড়কে পূর্ব ট্রাইবেল আদামের বটতলা এলাকায় ৫০ শতক জমি তথ্য ভবনের জন্য প্রশাসন অধিগ্রহণ করেছে। সম্প্রতি তথ্য ভবন নির্মাণের জন্য শতবর্ষী বটগাছটি কাটার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু গাছ কাটতে গেলে এলাকাবাসীরা বাধা দেন। এ পর্যন্ত প্রশাসন চারবার গাছ কাটার উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সকার ১০টার দিকে পুলিশসহ প্রশাসনের লোকজন গাছ কাটতে গেলে এলাকাবাসী বাধা দেয়। এ সময় শত শত মানুষ জুড়ো হন। পরে সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জাহিদুর ইসলাম ও জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার বিজয় কুমার জোর্য়াদার ঘটনাস্থলে যান।
পূর্ব ট্রাইবেল আদামের লোকজন কোনোভাবেই গাছটি কাটতে দেবেন না বলে জানিয়েছেন। এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠদের ধারণা, বটগাছটি দেড় শ থেকে আড়াই শ বছরের পুরোনো। তবে সঠিক বয়সটি কেউ বলতে পারেননি। তথ্য ভবন নির্মাণে এলাকাবাসীর কোনো আপত্তি নেই বলেও জানান তাঁরা। আরও জানান, তথ্য ভবন নির্মাণ করতে চাইলে বটগাছটি না কেটে করা যায়।
দুপুর ১২টার দিকে পূর্ব ট্রাইবেল আদাম বটতলায় গিয়ে দেখা যায়, শত শত মানুষ বটগাছটি ঘিরে রেখেছেন। সেখানে ১০ থেকে ১৫ জন পুলিশের উপস্থিতিও দেখা গেছে।
পূর্ব ট্রাইবেল আদামের বাসিন্দা রাসেল দেওয়ান প্রথম আলোকে বলেন, এ পর্যন্ত প্রশাসন বটগাছটি কাটতে চারবার এসেছে। গ্রামের শত শত লোকজনের বাধার মুখে কাটতে পারেনি। আজও এসেছে তাঁরা। কিন্তু মানুষ গাছ কাটতে দেয়নি। বটগাছের নিচে বসে প্রতিদিন বহু মানুষ বসে গল্প করে। এখন বটগাছটি কয়েক গ্রামের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে। বটগাছের নিচে চলতি তাপপ্রবাহের শিকার বহু মানুষ আশ্রয় নেন। তারা চাইলে গাছটি না কেটে ভবন নির্মাণ করতে পারত।
জমির মালিকর পক্ষে আসা প্রিয় জ্যোতি চাকমা বলেন, আমার স্ত্রী ও তাঁর দুই বোনের ৫০ শতক জমি অধিগ্রহণ করেছে সরকার। জমি পরিমাণ করে ২ শতক কম পাওয়া যায়, বটগাছটি কাটলে সেই ২ শতক জমি বের হয়ে আসবে।
রাঙামাটি জেলা তথ্য কর্মকর্তা মো. আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুনেছি তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে ২৬টি তথ্য কমপ্লেক্স নির্মাণের প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। এর মধ্যে রাঙামাটি জেলায় একটি। আমাদের তথ্য অফিসে এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। জাযগা নির্ধারণ ও অধিগ্রহণ বিষয়ে জেলা প্রশাসন ভালো জানবে। গাছ কাটা ও অন্যান্য বিষয়ে আমাদের করার কিছু নেই।’
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. মোশারফ হোসেন খান বলেন, বটগাছ কাটা নিয়ে জমির মালিক ও এলাকাবাসীর মধ্যে সমস্যা দেখা দিয়েছে। বটগাছটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গায় পড়েছে। তবে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন গেছে পরিস্থিতি যেন অবনতি না ঘটে।