পটুয়াখালীতে ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা নিখোঁজ, মোটরসাইকেল উদ্ধার

ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা রবিউল আউয়াল অন্তরকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে সমাবেশ। শুক্রবার দুপুরে উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের লোন্দা খেয়াঘাট এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

গণ অধিকার পরিষদের ছাত্রসংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা রবিউল আউয়াল অন্তরকে (৩০) পাওয়া যাচ্ছে না বলে তাঁর পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে তিনি নিখোঁজ রয়েছেন।

রবিউল আউয়াল পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের লোন্দা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি  ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতাবিষয়ক সহসম্পাদক। কলাপাড়া পৌর শহরের কলাপাড়া প্রেসক্লাব মার্কেটে তাঁর নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।

পরিবার ও পুলিশ সূত্র জানায়, গতকাল রাতে নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে ধানখালী ইউনিয়নের লোন্দা গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিলেন অন্তর। এরপর থেকে তাঁকে আর খুঁজে পাচ্ছেন না স্বজনেরা। কলাপাড়া থানা-পুলিশ তাঁর ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি কলাপাড়া-পটুয়াখালী মহাসড়কের রজপাড়া মাদ্রাসাসংলগ্ন সড়ক থেকে পার্কিং করা অবস্থায় উদ্ধার করেছে। এর কিছুটা দূর থেকে তাঁর ব্যবহৃত হেলমেট উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় পুলিশ কলাপাড়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে। অপর দিকে অন্তরের বড় ভাই তুষার আল মামুন পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ছয় কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে কলাপাড়া থানায় একটি অভিযোগ করেছেন।

তুষার আল মামুন বলেন, ‘আমার ভাইয়ের কলাপাড়া পৌর শহরের কলাপাড়া প্রেসক্লাবের মার্কেটে ডিজিটাল প্রিন্টিং প্রেসের ব্যবসা রয়েছে। “গ্রাফিকস ওয়াল” নামের সেই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে গতকাল রাত ১১টার সময় গ্রামের বাড়িতে ফিরছিল। এরপর গভীর রাতে থানা থেকে ফোন পেয়ে অন্তরের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি আমরা জানতে পারি।’

রবিউল আউয়াল অন্তর

অন্তরের বাবা মো. সোলায়মান মৃধা বলেন, ‘আমার ছেলে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ক্ষতিপূরণ আদায়, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের চাকরিসহ আট দফা দাবি আদায়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছিল। এখন এসব কারণে তাকে কোনো মহল ধরে নিয়ে গেছে কি না, অথবা অন্য কোনো কারণ রয়েছে কি না, কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার ছেলের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে আমরা পরিবারের সদস্যরা আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠায় রয়েছি।’

অন্তরকে অক্ষত অবস্থায় পরিবারের সদস্যদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে কলাপাড়ার ধানখালী ইউনিয়নের লোন্দা খেয়াঘাট এলাকায় আজ শুক্রবার দুপুর ১২টায় ‘প্রতিবাদ সমাবেশ’ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বক্তব্য দেন গণ অধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য ফাতিমা তাসনিম, অন্তরের বাবা, মা নাসিমা বেগম, স্ত্রী তানজিলা প্রমুখ।

ফাতিমা তাসনিম তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র ও পায়রা বন্দরের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে ধানখালীর লোন্দা খেয়াঘাট এলাকায় মানববন্ধন কর্মসূচি করার পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ছিল। অন্তরসহ গণ অধিকার পরিষদের সদস্যরা এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার জন্য কয়েক দিন ধরে কাজ করছিলেন। তা ছাড়া অন্তর এলাকার মানুষের স্বার্থ নিয়ে সব সময় সোচ্চার ছিলেন। অন্তরের নিখোঁজ হওয়ার পেছনে এসব কারণ থাকতে পারে বলে আমরা মনে করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘ফ্যাসিজমের পতনের পর এভাবে একটি দলের কর্মী নিখোঁজ হয়ে যাবে, তা আমরা ভাবতে পারি না। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিখোঁজ অন্তরকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে।’

কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জুয়েল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মোটরসাইকেলটি মহাসড়কের পাশে পার্ক করা দেখে পায়রা বন্দরমুখী চার লেন সড়কের নিরাপত্তাকর্মীরা থানায় অবহিত করেন। এরপর পুলিশ গিয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করে। মোটরসাইকেলের সামনের অংশে রবিউল আউয়াল অন্তর লেখা রয়েছে। আমরা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি এবং অন্তরকে খুঁজে পেতে অনুসন্ধানও শুরু করেছি।’