হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে সুনামগঞ্জের শাল্লায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছেন ‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’ সংগঠনের সদস্যরা।
আজ বুধবার দুপুরে উপজেলা সদরে সংগঠনের অস্থায়ী কার্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি ইউএনও কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়।
ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে নীতিমালা উপেক্ষা করে প্রকল্প গ্রহণ, অক্ষত ও স্বল্প ক্ষতিগ্রস্ত প্রকল্পে বিপুল বরাদ্দ দিয়ে সরকারের অর্থ অপচয় করার অভিযোগ এবং বর্ধিত সময়েও বাঁধের কাজ শেষ না হওয়ায় এ কর্মসূচির আয়োজন করে সংগঠনটি। এর আগে গত রোববার জামালগঞ্জ উপজেলায় একই কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। পর্যায়ক্রমে জেলার ১২টি উপজেলায় এ কর্মসূচি পালিত হবে বলে জানা গেছে।
আয়োজক সংগঠনের উপজেলা সভাপতি তরুণ কান্তি দাসের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত সেনের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি চিত্তরঞ্জন তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায়, সাংবাদিক শামস্ শামীম, কেন্দ্রীয় বাঁধবিষয়ক সম্পাদক রাজু আহমেদ, সুনামগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক, শাল্লা উপজেলা সহসভাপতি অবিনাশ চন্দ্র দাশ, উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়ন শাখার আহ্বায়ক রথীন্দ্র চন্দ্র সরকার, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সাধারণ সম্পাদক মিঠু চন্দ্র চন্দ প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এবারও বাঁধের কাজ শেষ হয়নি। এখনো অনেক কাজ বাকি। কাজে অনেক অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। জেলার সবচেয়ে বেশি প্রকল্প শাল্লায়। এখানে অনিয়ম-দুর্নীতিও বেশি। সময় যতই যাচ্ছে, ফসলের ঝুঁকি ততই বাড়ছে। বাঁধ নির্মাণে অবহেলায় হাওরের ফসলের কোনো ক্ষতি হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
সমাবেশে বিজন সেন রায় বলেন, হাওরে বাঁধ ব্যবসা শুরু হয়েছে। বাঁধ নির্মাণের কাজ ঘিরে একটি লুটেরা সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। ওই সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সবার অবহেলা ও অনিয়মের কারণেই বাঁধের কাজ সময়মতো শেষ হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন।
পরে সংগঠনটির একটি প্রতিনিধিদল ইউএনও আবু তালেবের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের অভিযোগ ও উদ্বেগের কথা জানান।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সুনামগঞ্জ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার ১২টি উপজেলায় ১ হাজার ৬৩টি প্রকল্পে ৭৪৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ হচ্ছে। এ জন্য প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয়েছে ২০৪ কোটি টাকা। গতবার প্রকল্প ছিল ৭২৭টি। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হয় ৯৫ কোটি টাকা। এবার প্রকল্পের সঙ্গে ব্যয় বেড়েছে দ্বিগুণ। হাওরে বাঁধ নির্মাণের নির্ধারিত সময় ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
হাওরে একসময় ঠিকাদারি প্রথায় বাঁধ নির্মাণের কাজ হতো। ২০১৭ সালে বাঁধ ভেঙে ব্যাপক ফসলহানির পর নতুন নীতিমালা করে পাউবো। বাঁধের কাজ থেকে ঠিকাদারদের বাদ দেওয়া হয়। বাঁধের কাজে সরাসরি যুক্ত করা হয় স্থানীয় প্রশাসনকে। এখন জেলায় হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণসংক্রান্ত জেলা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক। সদস্যসচিব পাউবোর সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী।
হাওরে বাঁধ নির্মাণের নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, একটি প্রকল্পের কাজ করে একটি পিআইসি। হাওরপারের প্রকৃত কৃষক ও সুবিধাভোগীদের নিয়ে পাঁচ থেকে সাত সদস্যের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন করা হয়। প্রতিটি পিআইসি একটি প্রকল্পে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকার কাজ করতে পারে।