স্বতন্ত্র প্রার্থীর সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সমাজকল্যাণমন্ত্রীর ছোট ভাই মাহবুবুজ্জামান আহমেদ। গত মঙ্গলবার কালীগঞ্জের কাকিনা উত্তর বাংলা কলেজ মিলনায়তনে
স্বতন্ত্র প্রার্থীর সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সমাজকল্যাণমন্ত্রীর ছোট ভাই মাহবুবুজ্জামান আহমেদ। গত মঙ্গলবার কালীগঞ্জের কাকিনা উত্তর বাংলা কলেজ মিলনায়তনে

স্বতন্ত্র প্রার্থীর সভায় সমাজকল্যাণমন্ত্রীর ‘গোপন কথা ফাঁস’ করলেন ছোট ভাই

লালমনিরহাট-২ (আদিতমারী-কালীগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন তাঁরই ছোট ভাই ও কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুজ্জামান আহমেদ। এ আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল হকের কর্মিসভায় অংশ নিয়ে তিনি সমাজকল্যাণমন্ত্রীকে ভোট না দেওয়ারও আহ্বান জানান।

মাহবুবুজ্জামান আহমেদ লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। তিনি লালমনিরহাট-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তবে মনোনয়ন পাননি। এখন তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল হকের (ঈগল) পক্ষে নির্বাচনের মাঠে নেমেছেন। সিরাজুল হকও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। তিনি আদিতমারী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান।

কালীগঞ্জের কাকিনা উত্তর বাংলা কলেজ মিলনায়তনে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল হকের কর্মিসভা হয়। সেখানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন মাহবুবুজ্জামান আহমেদ। ভাইয়ের বিরুদ্ধে দেওয়া তাঁর এ বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যা নিয়ে জেলায় বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ আলোচনা করছেন।

সভায় সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের উদ্দেশে মাহবুবুজ্জামান বলেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে গত মাসে দুইটা রিকশা দিয়েছে গরিব–অসহায়দের মধ্যে। যার একটা পেয়েছে জমির। জমির মন্ত্রীর বাড়ির পাহারাদার। আরেকটা পেয়েছেন মন্ত্রীর ছেলের বাবুর্চি ইদ্রিস পাকোয়ানি। আর কোনো গরিব লোক নাই?

এমন অনেক ইতিহাস আছে উল্লেখ করে মাহবুবুজ্জামান বলেন, ‘৫০ কোটি, ১০০ কোটি টাকার চেক দিয়েছেন গরিব অসহায় ক্যানসার রোগীর চিকিৎসায়। সেই চেক কে পেলেন? আমিনগঞ্জের বজলু প্রফেসার আর আদিতমারীর রাজ্জাক মাস্টার পান গরিব ক্যানসার রোগীর চেক।’ তিনি নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে আরও বলেন, ‘গরিব মানুষের বাড়ি পোড়া গেলে ত্রাণ মন্ত্রণালয় টিন দেয়। সেই টিন কে পাইছে জানেন? আমার জ্যাঠাতো ভাই নজরুল মাস্টার আর কেচু মাস্টার। এরা গরিব?’

কালীগঞ্জের রুদ্বেশ্বরে দক্ষতা উন্নয়ন অফিসের জমি অধিগ্রহণেও দুর্নীতির অভিযোগ করেন সমাজকল্যাণমন্ত্রীর ভাই। তিনি আরও বলেন, ‘কালীগঞ্জের রুদ্বেশ্বরে দক্ষতা উন্নয়নের অফিস হবে। তার জন্য উনি (সমাজকল্যাণমন্ত্রী) জমি কিনলেন ৪-৫ লাখ টাকায় গরিব কৃষকদের কাছ থেকে। সেই জমি রেজিস্ট্রি হলো ওনার (মন্ত্রীর) ভাতিজা, ফুফাতো ভাই হেলাল, মোস্তফা, ফারুকদের নামে। কিনল ৫ লাখে, লিখে নিল ৩০ লাখ টাকায়। সবাই মিলে ৩০ লাখ করে ভাগ করে নিলেন। সরকারের টাকা গরিব কৃষকেরা পেলে দুঃখ ছিল না।’ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা না করতে সমাজকল্যাণমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান ছোট ভাই মাহাবুবুজ্জামান।

বক্তব্যের একপর্যায়ে মাহবুবুজ্জামান আহমেদ আরও বলেন, ‘গোপন (কথা) ফাঁস করে দেই। আপনি (সমাজকল্যাণমন্ত্রী) নৌকা নিয়েছেন না? নৌকায় ভিড়তে (জিততে) পারবেন না। কারণ ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আপনি নৌকা পুড়িয়েছেন। নৌকা আপনাকে মান (সম্মান) করবে না।’ এ সময় মঞ্চে উপস্থিত এক নেতা পাশ থেকে চিৎকার করে বলেন, ‘গোপন কথা ফাঁস’।

কালীগঞ্জের ভোটমারী থেকে মহিষখোচা পর্যন্ত তিস্তা নদীতে মন্ত্রী বাঁধ দিতে দেননি বলে সভায় অভিযোগ করেন মাহবুবুজ্জামান আহমেদ। এর একটাই জবাব উল্লেখ করে তিনি নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি (মন্ত্রী) বাঁধ দেননি, আমরা আপনাকে বাদ (বয়কট) দিলাম।’ পরে মঞ্চে থাকা স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল হককে দেখিয়ে তাঁর ঈগল প্রতীকে ভোট দেওয়া ও কর্মী হিসেবে কাজ করার আহ্বান জানান মাহবুবুজ্জামান আহমেদ।

কর্মিসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আদিতমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস, ভাদাই ইউপি চেয়ারম্যান কৃষ্ণকান্ত রায় বিদুর, কমলাবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদ ওমর চিশতি, সারপুকুর ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির প্রমুখ।

উল্লেখ্য, সর্বশেষ অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে কালীগঞ্জের তুষভান্ডার ইউপি চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন মাহবুবুজ্জামান আহমেদের স্ত্রী। তবে তাঁর বদলে মনোনয়ন পান বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদানকারী নুরুল ইসলাম আহমেদ। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাহবুবুজ্জামানের স্ত্রী নির্বাচন করে পরাজিত হন। মাহবুবুজ্জামান আহমেদকে কালীগঞ্জের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে সমাজকল্যাণমন্ত্রীর পুত্র রাকিবুজ্জামান আহমেদকে বসানো হয়। এসব নানা কারণে দুই ভাইয়ের মধ্যে দূরত্বের সৃষ্টি হয় বলে মনে করেন দলের নেতা-কর্মীরা।