ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীর যৌন হয়রানির অভিযোগ এবং বিভাগীয় প্রধানের ওই শিক্ষকের পক্ষ নেওয়ার ঘটনায় বিক্ষোভে উত্তাল ক্যাম্পাস। আজ বুধবার সকাল থেকে বিক্ষোভকারী সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কার্যালয়, বিভিন্ন অনুষদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকে তালা দেন। সেই সঙ্গে পরিবহনও বন্ধ করে দেন।
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে আজ দুপুরে তড়িঘড়ি করে অভিযুক্ত শিক্ষককে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাধ্যতামূলক ছুটি দেওয়া হয়। অভিযুক্ত শিক্ষকের পক্ষ নেওয়ায় মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধানকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পাশাপাশি বাধ্যতামূলক ছুটি দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার হুমায়ূন কবীর দুপুরে প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এ ঘটনায় গঠিত দুটি তদন্ত কমিটি এখনো প্রতিবেদন জমা দেয়নি।
দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেওয়ার পরও সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত আছে। তাঁদের দাবি, এ দুই শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করতে হবে।
আজ সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা আবারও প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু করেন। ওই সময় অভিযুক্ত দুজন শিক্ষকের মধ্যে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছেন, এমন খবর জানার পর শিক্ষার্থীরা তাঁর বিরুদ্ধে স্লোগান দেন এবং বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষককে বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ দিয়ে তালা দেন। বিকেলে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৩ মার্চ রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক ছাত্রী নিজের ফেসবুক আইডিতে ওই বিভাগের একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় ৪ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন। ৫ মার্চ ভুক্তভোগী ছাত্রী এ বিষয়ে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপাচার্যের কাছে যৌন হয়রানির লিখিত অভিযোগ করেন। ওই দিন ভুক্তভোগী ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকদের কাছে যৌন হয়রানির ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিভাগীয় প্রধান রেজুয়ান আহমেদের কাছে যৌন হয়রানির অভিযোগ করা হলে তিনি অভিযুক্ত শিক্ষকের পক্ষ নিয়ে কথা বলেন এবং ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নিয়ে যেতে চেষ্টা করেন। পরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা দুজন শিক্ষকের বহিষ্কার দাবি করে আন্দোলন শুরু করেন।
ভুক্তভোগী ছাত্রীর দাবি, ২০১৯ সালে তিনি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন, তখন থেকেই অভিযুক্ত শিক্ষক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যৌন হয়রানি শুরু করেন। তাতে সাড়া না দেওয়ায় ওই শিক্ষক বিভিন্ন সময় সামনাসামনি হয়রানিমূলক আচরণ করতেন। শেষে ভুক্তভোগী ছাত্রীর স্নাতকের ফলাফল আটকে দেওয়ার চেষ্টাও করেন অভিযুক্ত শিক্ষক।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের একজন ছাত্রী যৌন হয়রানির অভিযোগে মুখ খোলার পর আরও অন্তত ৩০ জন ছাত্রী ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনায় ৬ মার্চ অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে শিক্ষার্থীরা দাবি তোলেন, বিভাগীয় প্রধান রেজুয়ান আহমেদের বিরুদ্ধেও তদন্ত করার। পরদিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটি পুনর্গঠন করে রেজুয়ান আহমেদকেও তদন্তের আওতায় আনে।
যৌন হয়রানির অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি। মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রেজুয়ান আহমেদ ৫ মার্চ প্রথম আলোর কাছে অভিযুক্ত শিক্ষকের পক্ষ নেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেছিলেন।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলেন, ৪ মার্চ থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা যৌন হয়রানির ঘটনার বিচার চেয়ে আন্দোলন করে আসছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করলেও কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি। যে কারণে আজ সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা আবারও প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু করেন। ওই সময় অভিযুক্ত দুজন শিক্ষকের মধ্যে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছেন, এমন খবর জানার পর শিক্ষার্থীরা তাঁর বিরুদ্ধে স্লোগান দেন এবং বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষককে বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ দিয়ে তালা দেন।
দুই শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে বিকেল ৪টা থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। তবে বিকেল পৌনে ৫টায় তাঁরা মহাসড়ক ছেড়ে দেন বলে জানান ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সঞ্জয় কুমার মুখার্জি আজ প্রথম আলোকে বলেন, দুজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে আজ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ওই দুই শিক্ষককে বাধ্যতামূলক ছুটি দেওয়ার পরও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত আছে।