ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতা আল মনসুরকে দল থেকে বহিষ্কারের সুপারিশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। গতকাল বুধবার রাতে দলীয় এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত।
আবু হাসনাত বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে গতকাল বুধবার রাতে সম্পাদকমণ্ডলীর সভা ডেকেছিলাম। সভায় আল মনসুরকে দল থেকে বহিষ্কারের সুপারিশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্তটি আজ বৃহস্পতিবার সুপারিশ আকারে জেলায় পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
আল মনসুর বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের মাস্টারপাড়ার বাসিন্দা। গত মঙ্গলবার বিকেলে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভানোর ইউনিয়নের কাঁচকালী বাজারের সার ও কীটনাশক দোকানে অভিযান চালিয়ে আল মনসুরকে ১ হাজার ৫০০টি ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি দল। এ ঘটনায় ঠাকুরগাঁও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো. ফরহাদ আকন্দ বাদী হয়ে আল মনসুর ও ফারাজ উদ্দীন নামের দুজনকে আসামি করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে বালিয়াডাঙ্গী থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় আল মনসুরকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার রায় বলেন, ইয়াবাসহ আল মনসুর গ্রেপ্তারের ঘটনাটি নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে কথা হয়েছে। আল মনসুরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককেও জানানো হয়েছে। উপজেলা কমিটির সুপারিশ পেলেই মনসুরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। দলে এমন বিতর্কিত লোকজন থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আল মনসুরের দলীয় পদ নিয়ে ক্ষোভ
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে অনেকে দাবি করছেন, আল মনসুর চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তাই আল মনসুর দলে পদ পাওয়ার পর থেকেই তাঁরা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ২৭ সদস্যবিশিষ্ট বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা আওয়ামী লীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে জেলা আওয়ামী লীগ। সেই কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পান আল মনসুর। বিতর্কিতরা কমিটিতে স্থান পাওয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। ওই আংশিক কমিটি ঘোষণার পরদিন ১৮ সেপ্টেম্বর দলের ত্যাগী ও জ্যেষ্ঠ নেতা-কর্মীদের বাইরে রেখে সুযোগসন্ধানী, অনুপ্রবেশকারী, মাদক ব্যবসায়ীদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন।
এরপর নেতা-কর্মীদের অভিযোগ নিয়ে কথা বলতে ঠাকুরগাঁও আসেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা আবু সাঈদ আল মাহমুদ। বালিয়াডাঙ্গীর নেতা-কর্মীরা তখন আবু সাঈদ আল মাহমুদকে জানিয়েছিলেন, আল মনসুর মাদক ও গাছ চুরির মামলার আসামি। এ নিয়ে ২০২০ সালের ২ অক্টোবর প্রথম আলোতে ‘উপজেলা আ.লীগের কমিটি নিয়ে অসন্তোষ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এদিকে ২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে অনুমোদনের জন্য জেলা কমিটির কাছে পাঠায় উপজেলা আওয়ামী লীগ। ২০২১ সালের ২২ মে তা অনুমোদন দেয় জেলা কমিটি। কমিটিতে ত্যাগী ও জ্যেষ্ঠ নেতাদের বাদ দিয়ে মাদকাসক্ত-মাদক ব্যবসায়ী আল মনসুরসহ বিতর্কিতদের নাম দেখে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা করেন।
এ ছাড়া ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফেসবুকে আল মনসুরের মাদক সেবনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছিল। ওই সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেছিলেন, মনসুরের বিরুদ্ধে মাদক সেবনসহ নানা অভিযোগের বিষয়ে তিনি শুনেছেন। শিগগিরই তাঁর বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে পরে মনসুরের বিরুদ্ধে দলীয় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
গ্রেপ্তারের ঘটনার পর থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা মনসুরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দুওসুও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মমতাজুর রহমান বলেন, ‘উপজেলা কমিটিতে মাদক ব্যবসায়ীরা কীভাবে জায়গা পান, বুঝি না। যে দলে জায়গা পাওয়ার কথা না, তাঁকে কোন বিচারে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ দেওয়া হলো, এটা উপজেলা কমিটিই বলতে পারবে।’
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এমন বিতর্কিতদের কমিটিতে জায়গা দেওয়ার বিরুদ্ধে আমরা বিভিন্ন সময় আপত্তি তুলেছিলাম। কিন্তু তারপরও মনসুররা কিসের জোরে, কার সুপারিশে কমিটিতে বহাল তবিয়তে আছেন, তা খতিয়ে দেখা উচিত।’
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও-২ আসনের (বালিয়াডাঙ্গী, হরিপুর ও রানীশংকৈল উপজেলার আংশিক) সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলামের ছেলে ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘বছর দুয়েক আগে ফেসবুকে আল মনসুরের মাদক সেবনের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। আমি তখন দলের মিটিংয়ে তাঁকে বহিষ্কার করা জন্য জেলার নেতাদের বলেছিলাম। কিন্তু সে সময় তাঁর বিরুদ্ধে কোনো দলীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’