কাউন্সিলর পদে লড়াইয়ের জন্য বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন।
খুলনা সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচনে মেয়র পদে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার ভোট পেয়েছিলেন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম (মঞ্জু)। এবার বিএনপি দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে কেন্দ্রীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ কারণে মেয়র পদে কোনো প্রার্থী দিচ্ছে না দলটি। তবে কাউন্সিলর পদে লড়াইয়ের জন্য বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। যদিও দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে এখনই সরাসরি মাঠে নামার বিষয় নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে তাঁরা।
বর্তমান ও সাবেক বিএনপি-সমর্থিত কাউন্সিলররা বলছেন, জনগণের প্রত্যাশা বা চাওয়া-পাওয়ার তাগিদে তাঁরা নির্বাচন করতে চান। আবার দল যদি নির্বাচনে না আসে, সে ক্ষেত্রে নির্বাচনে যাওয়া কতটুকু যৌক্তিক হবে, তা নিয়ে ভাবনায় পড়েছেন। এই দুটি বিষয়ের বাইরেও নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন তাঁরা। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করে অনিয়মের নির্বাচনের কারণে তাঁরা হেরে যান, তখন রাজনৈতিক ক্যারিয়ার কেমন হবে, সেটা নিয়েও চিন্তা আছে।
বিএনপি-সমর্থিত সাবেক ও বর্তমান কাউন্সিলর এবং দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন, এ রকম অন্তত ১২ জন নেতার সঙ্গে কথা হয়েছে প্রথম আলোর। বেশির ভাগই প্রার্থী হওয়া নিয়ে দ্বিধায় আছেন। কেউ কেউ প্রার্থী হবেন বলে জানিয়েছেন। আবার কেউ দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে রাজি নন।
২০১৮ সালের নির্বাচনে সিটি করপোরেশনের ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডের মধ্যে ১২টিতে আওয়ামী লীগ এবং ৯টিতে বিএনপি প্রার্থী কাউন্সিলর পদে জয়লাভ করেন। এর মধ্যে ছয়জন বিএনপির কাউন্সিলর দল ত্যাগ করে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। বর্তমানে খুলনায় বিএনপি-সমর্থিত কাউন্সিলর আছেন মাত্র তিনজন। তাঁরা হলেন ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের মো. হাফিজুর রহমান, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের আশফাকুর রহমান এবং ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের মো. শমশের আলী। তিনজনই নির্বাচনের জন্য মাঠের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকবেন কি না, তা নিয়ে দ্বিধায় আছেন।
১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আশফাকুর রহমান বলেন, ‘দলের একটা সভা হওয়ার কথা ছিল, সেটা হয়নি। এ জন্য সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। দল না চাইলে নির্বাচন করব না। তবে টানা তিনবার কাউন্সিলর হয়েছি, জনগণ চায় নির্বাচন করি। তাঁদের বিমুখ করাটাও কতটুকু ঠিক হবে, বুঝতে পারছি না। “শ্যাম রাখি না কুল রাখি” অবস্থা আমাদের।’
১৮ নম্বর ওয়ার্ডের মো. হাফিজুর রহমানও একই রকম কথা বলেন। ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নগর বিএনপির সদস্য ওয়াহেদুর রহমান নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত থাকলেও দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাবেন না।
মঞ্জুপন্থী নেতা ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মো. শমশের আলী বলেন, ‘এখন দলের কোনো পদপদবিতে নেই। তবে দলকে ভালোবাসি। আবার জনগণের সঙ্গে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে আছি, তাঁদের নিরাশ করাটা ঠিক হবে না।’
মঞ্জুপন্থী আরেক নেতা ২২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব কায়সার বলেন, ‘প্রস্তুতি আছে। দল আবার বলছে নির্বাচনে যাবে না। ভবিষ্যতে আবার নির্বাচন করার বয়স থাকবে কি না, এটা একটা বিষয়। পরিবেশ-পরিস্থিতি সব মিলিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আরও কিছুটা পরে নেব।’
নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক বিএনপির খুলনা মহানগর আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক শেখ আনছার আলী বলেন, ‘আমার বয়স হয়েছে। দল নির্বাচন না করলেও আমি নির্বাচনে করব। দল আমাকে ত্যাগ করলেও আমি দাঁড়াব।’
নগর বিএনপির আহ্বায়ক ও দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শফিকুল আলম মনা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনে যাব না। সেটা স্থানীয় সরকার নির্বাচন হোক আর জাতীয় নির্বাচন। যাঁরা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউন্সিলরদের ক্ষেত্রেও তা-ই।’