অনেক বাড়ি হস্তান্তরের আগেই পলেস্তারা খসে পড়ছে। ছাদ চুইয়ে পানি পড়েছে।
যশোরের কেশবপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্মিত আবাসস্থল ‘বীর নিবাস’-এর নির্মাণকাজে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার ও চরম ধীরগতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রকল্পের দুই দফা মেয়াদ শেষ হওয়ার এক বছর পরেও নির্মাণকাজ শেষ হচ্ছে না। অনেক বাড়ি হস্তান্তরের আগেই পলেস্তারা খসে পড়ছে। বাড়িগুলো না পেয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অসচ্ছল আটজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারের থাকার জন্য ১ কোটি ২ লাখ ১১ হাজার ৪৯৬ টাকা ব্যয়ে আটটি বাড়ি নির্মাণের লক্ষ্যে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়। কাজটি পায় যশোরের ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের এসএসবি এন্টারপ্রাইজের মালিক এস এম ইউসুফ সাঈদ। কাজ শুরু হয় ২০২২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি।
মেয়াদ শেষ হয় একই বছরের ২১ এপ্রিল। কাজ শেষ না হওয়ায় ঠিকাদার আরও এক বছর মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ৩০ জুলাই পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। কিন্তু সে মেয়াদ শেষের পর আরও এক বছর হতে চললেও বাড়িগুলো সম্পন্ন করা হয়নি। ফলে বীর মুক্তিযোদ্ধারা বাড়িগুলো এখনো বুঝে পাননি। তবে বাড়িঘর না থাকায় কেউ কেউ অসম্পন্ন বাড়িতে অস্থায়ীভাবে থাকছেন।
বাড়িগুলো বরাদ্দ হয়েছে চিংড়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল লতিফ, সাগরদাঁড়ি গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা নিমাই দেবনাথ, হাড়িয়াঘোপ গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা দুলাল দেবনাথ, ষুড়িঘাটা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম, সোজাপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোবারক হোসেন, পাত্রপাড়া গ্রামের প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু হোসেন সরকারের স্ত্রী আরাফুন্নাহার এবং পাঁজিয়া গ্রামের প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আবদুল ফকিরের ছেলে মোমরেজ ফকিরের নামে।
গত বুধবার সরেজমিনে পাঁচটি বাড়ি ঘুরে দেখা গেছে, সবচেয়ে নাজুক অবস্থা চিংড়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল লতিফের বাড়িটির। এ বাড়ির তিনটি শয়নকক্ষ একটি রান্নাঘর, দুটি শৌচাগারের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। বাড়ির জানালার গ্রিল এখনো লাগানো হয়নি। বিদ্যুৎ–সংযোগ দেওয়া হয়নি, বৈদ্যুতিক পাখা ও বাতি লাগানো হয়নি। শৌচাগারের জিনিসপত্র লাগানো হয়নি, শৌচাগারের দরজাও লাগানো হয়নি। ছাদ চুইয়ে পানি পড়েছে। বাড়ির ভেতরে-বাইরে পলেস্তারা খসে পড়ছে।
আবদুল লতিফ বাড়িতে ছিলেন না। তাঁর ছেলে সাইফুল ইসলাম বলেন, তাঁদের একটি মাটির ঘর রয়েছে। চাল দিয়ে পানি পড়ছে। সরকারের দেওয়া বাড়িটি নির্মাণ সম্পন্ন না হওয়ায় তাঁরা বাড়িতে উঠতে পারছেন না। সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, সরকার তাঁদের জন্য বাড়ি দিচ্ছে সত্য, তবে এ বাড়িতে এত অনিয়ম করা হয়েছে, যা বলার নয়। বাড়িতে ওঠার আগেই পলেস্তারা খসে পড়ছে। ছাদ চুইয়ে পানি পড়ছে। নিম্নমানের বালু ব্যবহার ও সিমেন্ট কম দেওয়ায় বাড়িটির অবস্থা খুবই খারাপ। এ বড়িতে উঠলে নিরাপদে থাকা যাবে কি না, সন্দেহ আছে।
পাত্রপাড়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু হোসেন সরকারের স্ত্রী আশরাফুন্নাহারের বাড়িতে গিয়েও দেখা যায়, শৌচাগারের মালামাল লাগানো হয়নি। বৈদ্যুতিক লাইন দেওয়া হয়নি। বাতি ও পাখা লাগানো হয়নি। বাড়ির কয়েকটি জায়গায় এখনই পলেস্তারা খসে পড়ছে। একটি দেয়ালে ফাটল ধরেছে।
এ রকম বেহাল দেখা গেছে পাঁজিয়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল ফকিরের ছেলে মোরেজ ফকির ও সোজাপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোবারক হোসেনের বাড়িতে। মোবারক হোসেনের ভাতিজা রাসেল হোসেন বলেন, তাঁরা চাচা ছেলের পরিবারের সঙ্গে এখন চট্টগ্রামে আছেন, তিনি গুরুতর অসুস্থ। তাঁর চাচার শেষ ইচ্ছা, এই বাড়িতে এসেই তিনি মরতে চান। বাড়ি তৈরিতে দীর্ঘসূত্রতার কারণে এই শেষ ইচ্ছা পূরণ হবে কি না...।
একইভাবে হতাশা ব্যক্ত করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নিমাই দেবনাথ। তিনি বলেন, তাঁর চালাঘরটি থাকার অনুপযোগী। বাড়িটিতে কবে উঠতে পারবেন, এর কোনো নিশ্চয়তা নেই।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঠিকদার এস এম ইউসুফ সাঈদ বলেন, নির্মাণে কোনো ত্রুটি থাকলে মেরামত করে দেওয়া হবে। আর এ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে।
কেশবপুরের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ঝিকরগাছার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার শুভাগত বিশ্বাস বলেন, বাড়িগুলোর দীর্ঘসূত্রতার বিষয়ে ঠিকদারকে তাগাদা দেওয়া হয়েছে। তবে কাজ ৯০ ভাগ শেষ করা হয়েছে। এ মাসের মধ্যেই ঠিকাদারের কাছ থেকে কাজ বুঝে নেওয়া সম্ভব হবে।
বীর নিবাস বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও ইউএনও এম এম আরাফাত হোসেন বলেন, নির্মাণত্রুটির ব্যাপারে কেউ অভিযোগ দেননি। যদি ত্রুটি থাকে, তাহলে সেগুলো মেরামত করে দিলেই কেবল ঠিকাদারকে বিল দেওয়া হবে।