মৌলভীবাজারে বিদ্যুতের তারে ‘চড়ুইবাড়ি’

বিদ্যুতের তারে চড়ুই পাখির বাড়ি। মৌলভীবাজার শহরের চৌমোহনা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

জনমভর মানুষেরই প্রতিবেশী। লোকালয়ে মানুষের গা ঘেঁষে থাকা এক ছোট্ট পাখি। শণ-খড়ের কাঁচা ঘরবাড়ি নিজের বলেই চিরকাল আশ্রয় নিয়েছে, বাসা বুনেছে, ছানা ফুটিয়েছে। ফল-ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে মানুষেরই উপকার করে আসছে। পাখিটির নাম চড়ুই।

সেই পুরোনো ঘরবাড়ি বদলে গেছে। ঘরে ঘরে আর ‘চড়ুইবাড়ি’ হয়তো নেই। কিন্তু সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবেশ-পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে টিকে আছে। সে গাছপালা, দালানকোঠার ফাঁকফোকরই হোক কিংবা বিদ্যুতের তার। মৌলভীবাজার শহরে বিদ্যুতের তারে তারে চড়ুই পাখির দল এমন কিছু বাড়ি বানিয়েছে। সন্ধ্যা হলেই সেই বাড়ি মুখর করছে তারা। সকাল হলেই উধাও, বাড়ি ফাঁকা।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, দুই-আড়াই বছর ধরে মৌলভীবাজার শহরের ব্যস্ততম চৌমোহনা চত্বরকে ঘিরে বিদ্যুতের তারে চড়ুই পাখির এমন বাড়ি দেখা যাচ্ছে। প্রথম দিকে চৌমোহনা থেকে পশ্চিম দিকে কিছু চড়ুই বিদ্যুতের তারে বসতে শুরু করে। সেই বসতি এখন চৌমোহনা থেকে কিছুটা পূর্ব দিকে বিস্তৃত হয়েছে। বিকেল হলেই এরা দলে দলে আসতে থাকে। বিদ্যুতের তারে তারে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে বসে। শুরু হয় কিচিরমিচির, ওড়াউড়ি। রাত বাড়লে বিদ্যুতের খুঁটিকে ঘিরে ঘন হয়ে আসে। একসময় চুপ হয়ে যায়। হঠাৎ করে পাখি বলে মনেও হবে না। মনে হতে পারে, গোলাকার কোনো কিছু তারে তারে ঝুলে আছে। শীত, ঝড়-বৃষ্টি সব সময়ই এরা কমবেশি আছে। কোনো কারণে মানুষ বিরক্ত করলে মাঝেমাঝে তারা একটু-আধটু এদিক-ওদিক স্থান বদল করে। কিছুদিন পর আবার পুরোনো স্থানে ফিরে আসে।

পরিবেশকর্মী রাজন আহমদ বলেন, আগে শণ-বাঁশের ঘর ছিল। বাড়িতে প্রচুর চড়ুই পাখি দেখা যেত। এখন পাকা ঘর হওয়ায় আর তেমন দেখা যায় না। শহরের চৌমোহনায় অনেকগুলো চড়ুই পাখি। এরা বিদ্যুতের খুঁটি ও তারে রাত কাটায়। যান্ত্রিক শহরে একসঙ্গে এত পাখির চঞ্চলতা ভালোই লাগে।

পাখিবিশেষজ্ঞদের সূত্রে জানা গেল, পৃথিবীতে ১১টি গোত্রে মোট ৪৮ প্রজাতির চড়ুই আছে। চড়ুইয়ের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫ সেন্টিমিটার এবং ওজন ২০ গ্রামের মতো হয়ে থাকে। মার্চ থেকে আগস্ট মাস হচ্ছে এদের প্রজনন মৌসুম। চড়ুই চার থেকে ছয়টি ডিম পাড়ে। ডিম ফোটাতে সময় নেয় ১৩ দিন। বাচ্চারা উড়তে শিখলে বড়দের সঙ্গে খাবার খেতে বেরিয়ে পড়ে।

পাখিবিশেষজ্ঞ শরীফ খান বলেন, কোনো পাখি থাকার জন্য বাসা বানায় না। প্রজননের সময় তারা বাসা তৈরি করে। চড়ুইও সে রকম। আগে গ্রামে শণ, খড়, হোগলা ও গোলপাতার ছাউনির ঘর ছিল। সেসব ঘরে চড়ুইয়ের বাড়ি ছিল। চড়ুই ঘরের পাখি। লোকালয়েই তাদের আস্থা। মানুষের প্রতিবেশী পাখি। গ্রামাঞ্চলে কাঁচা বাড়ি কমে আসায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে বড় শহরে তেমন সমস্যা নেই। এরা দালানের পানির পাইপ, এসি, সাইনবোর্ডসহ বিভিন্ন ফাঁকা স্থানে বিকল্প খুঁজে নেয়। বাসা করতে পারে। সারা দিন ছড়িয়ে–ছিটিয়ে ফসলের মাঠে ঘুরে বেড়ায়। অনেক দূর চলে যায়। কিন্তু সন্ধ্যার আগে এক জায়গায় জড়ো হতে থাকে।