বেশির ভাগ এলাকায় ধানের বীজতলার বিভিন্ন স্থানে চারা গজায়নি। যেসব স্থানে চারা গজিয়েছে, সেসব চারা আবার হলদে আকার ধারণ করেছে।
মেহেরপুরে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে বোরো ধানের বীজতলার চারা মরে যাচ্ছে। আর জীবিত চারা হলদে হয়ে গেছে। ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। বোরো বীজতলা নষ্ট হওয়ায় সময় মতো ধানের চারা জমিতে রোপণ করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন জেলার অনেক কৃষক।
কৃষি বিভাগ বলছে, বোরো মৌসুমে এলাকার কৃষকেরা ধানের বীজতলা তৈরি করেন। হঠাৎ তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে বীজতলার চারা মরে যাচ্ছে। আবহাওয়া একটু ভালো হলে আবারও কৃষককে নতুন করে বীজতলা তৈরি করতে হবে।
মেহেরপুর সদর উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের বাসিন্দা মতিন শেখ বলেন, ভৈরব নদের পাড়ে বোরো ধানের বীজতলা করে এই এলাকার বেশির ভাগ কৃষক। নদের পানি দিয়ে সেচের সুবিধার থাকার কারণে বীজতলার পরিমাণ বেশি হয়। তবে এবারে অনেকের বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। আবারও বীজতলা তৈরি করতে হবে। এতে কৃষকের খরচ বেড়ে গেল। বৈরী আবহাওয়ায় বীজতলা রক্ষায় কৃষি বিভাগকে কোনো পরামর্শও দিতে দেখা যায়নি।
গাংনী উপজেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৬৩৪ হেক্টরে বীজতলা করা হয়েছে। আর বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ৪৩০ হেক্টর কৃষিজমিতে।
মেহেরপুর সদর ও গাংনী উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ এলাকায় ধানের বীজতলার বিভিন্ন স্থানে চারা গজায়নি। যেসব স্থানে চারা গজিয়েছে, সেসব চারা আবার হলদে আকার ধারণ করেছে। কিছু বীজতলার চারা পচে নষ্ট হয়ে গেছে।
মুজিবনগর উপজেলার যতারপুর গ্রামের কয়েকজন কৃষক জানালেন, তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় এলাকার উচ্চ ফলনশীল ব্রি ১১, ব্রি ২৮, ব্রি হাইব্রিড–১ ধানের বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে এবার সময় মতো চারা রোপণ করতে পারবেন না। খারাপ আবহাওয়া থেকে বীজতলা রক্ষায় কয়েকজন যুবক বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখেন। কেবল তাঁদের বীজতলা ভালো আছে।
একই এলাকার বাসিন্দা আকবর মিয়া বলেন, কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা বীজতলা নষ্ট হবে এমন আগাম বার্তা দিতে পারেন না। অথচ এলাকার যুবকেরা ইউটিউব ঘেঁটে বীজতলা রক্ষা করতে কয়েক জন পলিথিন দিয়ে চারার জমি ঢেকে রেখেছেন। তাঁদের ধানের চারা ভালো আছে। বাকিদের বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে।
সদর উপজেলার সুবোধপর এলাকার বাসিন্দা সামছুল ইসলাম প্রতি বোরো মৌসুমে আট বিঘা জমিতে ধান চাষ করেন। এবারও তাঁর তেমনই প্রস্তুতি আছে। তিনি বলেন, বীজতলা নষ্ট হওয়ার খবর পেয়ে কৃষি কর্মকর্তা বীজতলা পরিদর্শন করেন। পানি রাখা ও পলিথিন ব্যবহারে পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই পলিথিন ব্যবহারে অনীহা প্রকাশ করেছেন। তা ছাড়াও যেসব ছত্রাকনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না, শুধু অর্থ অপচয়। আরও কয়েক দিন কনকনে ঠান্ডা থাকলে অধিকাংশ বীজতলা নষ্ট হয়ে যাবে। নতুন করে আবারও বীজতলা তৈরি করতে হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার বলেন, অতিমাত্রার শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে বীজতলার চারা মরে যাচ্ছে। কৃষকদের বীজতলা রক্ষায় রাতের বেলায় পানি জমিয়ে সকালে তা ছেড়ে দিতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ঘনকুয়াশা থেকে রক্ষায় প্রতি রাতে পলিথিন দিয়ে বেড ঢেকে রাখতে ও ছত্রাকনাশক ছিটানোরও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।