সাভারের আশুলিয়ায় বন্ধ থাকা পোশাক কারখানা খুলে দেওয়া, শ্রমিকদের মারধরের অভিযোগ, নিম্নতম মজুরি বৃদ্ধিসহ ১৮ দফা দাবি বাস্তবায়নে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন দুটি কারখানার শ্রমিকেরা। এ ঘটনায় আশপাশের ২০ থেকে ২২টি কারখানা অর্ধদিবস কাজের পর ছুটি ঘোষণা করা হয়।
আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১ ও তৈরি পোশাক কারখানাসংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি বলেন, আজ শনিবার সকালে মণ্ডল নিটওয়্যার লিমিটেডের শ্রমিকেরা বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়া ও তাঁদের কারখানার দুজন শ্রমিককে মারধর করা হয়েছে দাবি করে কারখানার সামনে বিক্ষোভ করেন। পরে তাঁরা আশুলিয়ার বাইপাইল থেকে আবদুল্লাহপুর সড়কের জিরাবো এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে তাঁরা মণ্ডল নিটওয়্যার লিমিটেডের ভবনমালিক রাজিব ও তাঁদের লোকজন কারখানার দুজন শ্রমিককে মারধর করেছেন অভিযোগ তুলে রাজিবের বাসভবন লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন। এ ছাড়া বিভিন্ন খোলা কারখানার সামনে বিক্ষোভ করেন। পরে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে বিক্ষোভকারী শ্রমিকদের পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ওই এলাকার কয়েকটি কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়। ঘোষণা করা কয়েকটি কারখানার শ্রমিকদের অনেকে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যোগ দেন।
শিল্পাঞ্চল পুলিশ জানায়, মণ্ডল নিটওয়্যার কারখানার শ্রমিকদের পাশাপাশি সকালে লুসাকা গ্রুপের কারখানার শ্রমিকেরা হেলপারের নিম্নতম মজুরি ২২ হাজার টাকা ও অপারেটরের ২৫ হাজার টাকা করার দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। বেলা দেড়টার দিকে সেনাবাহিনী ও শিল্প পুলিশ শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
মণ্ডল নিটওয়্যার লিমিটেডের এক শ্রমিক অভিযোগ করে বলেন, ‘বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করার পর গত বৃহস্পতিবার মালিকপক্ষ আমাদের জানায়, সব দাবি মানা হবে। সন্ধ্যার মধ্যে জানানো হবে। গতকাল শুক্রবার থেকে আমাদের দুই ভাইকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আজ সকালে ফ্যাক্টরিতে আইসা দেখি অনির্দিষ্টকালের জন্য ফ্যাক্টরি বন্ধ। কারখানা কেন বন্ধ করা হলো, তার জবাব চাই। যে দুজনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না, তাঁদের খোঁজ চাই।’
অপর এক শ্রমিক বলেন, ‘আজ সকাল ৭টা ৫০ মিনিটের দিকে সড়ক অবরোধ করেছি। বৃহস্পতিবার রাত আটটার মধ্যে দাবি পূরণের নোটিশ দেওয়া হবে বলে আমাদের জানানো হয়েছিল। ওই দিন ফ্যাক্টরির ভবনমালিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেছিলেন। শুক্রবার আমরা শুনলাম, ভবনের মালিক ও তাঁর কর্মচারীরা আমাদের কয়েকজন ভাইবোনকে মারধর করেছেন। এর পর থেকে তাঁদের খোঁজ না পাওয়ায় আমরা সড়ক অবরোধ করেছি।’
আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১–এর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সারোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, আজ বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬–এর ১৩ (১) ধারায় ১০টি শিল্পকারখানা বন্ধ ও ৬টি কারখানায় সাধারণ ছুটি রয়েছে। অধিকাংশই তৈরি পোশাক কারখানা। তবে এর মধ্যে অন্যান্য পণ্য প্রস্তুতকারী কিছুসংখ্যক কারখানা রয়েছে। এ ছাড়া অর্ধদিবস কাজের পর আজ ২০ থেকে ২২টি তৈরি পোশাক কারখানায় ছুটি ঘোষণা করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।
এসপি বলেন, মণ্ডল গার্মেন্টস ও লুসাকার শ্রমিকদের বিক্ষোভের কারণে আশপাশের ১৫ থেকে ১৬টি কারখানায় অর্ধদিবস কাজ করার পর শ্রমিকদের ছুটি দেওয়া হয়েছে। মণ্ডল গার্মেন্টসের শ্রমিকেরা কয়েকজন শ্রমিক নিখোঁজের যে অভিযোগ করেছেন, খোঁজ নিয়ে এর সত্যতা পাওয়া যায়নি। এটি গুজব। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।