নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় তিতাস নদের পাড়ে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি অবৈধ ইটভাটা। গত ১৫-২০ বছরে তিতাস নদের জলাশয় ভরাট করে এসব ইটভাটা গড়ে উঠেছে। আরও ইটভাটা নির্মাণ ও পুরোনো ইটভাটার জায়গা বাড়ানো জন্য নদের জলাশয় ভরাট করা হচ্ছে।
অভিযোগ আছে, বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে অবৈধ ইটভাটার মালিককে জরিমানা করা হলেও স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। ফলে জরিমানার অর্থ পরিশোধ করে ঘুরেফিরে আবার অবৈধ ইটভাটা চালু করা হয়েছে।
সরাইল উপজেলার কালীকচ্ছ ইউনিয়নের চাঁনপুর এলাকায় সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে ছয় একর কৃষি জমির ওপর গড়ে উঠেছে মেসার্স জিসান ব্রিকস নামের একটি অবৈধ ইটভাটা। ২০ নভেম্বর সরেজমিনে জানা যায়, ইটভাটাটি ১১ বছর আগে তৈরি করা। এই ইটভাটার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে তিতাস নদ। ইটভাটাটির জায়গা সম্প্রসারণের জন্য পুরাতন ইট, নষ্ট ইট ও মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে নদ। ফলে আঞ্চলিক মহাসড়কটির পাশের খালের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে।
ইটভাটাটির মালিক সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম ওরফে শিউলি আজাদ। তিনি হত্যা মামলায় বর্তমানে কারাগারে আছেন। ইটভাটাটি ভাড়ায় চালাচ্ছেন ভৈরবের জামির হোসেন নামের এক ব্যক্তি। এই ইটভাটার নেই বৈধ কোনো কাগজপত্র। নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও ইট-পোড়ানোর সনদ।
জামির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি তিন বছরের জন্য এটি ভাড়া নিয়েছি। দুই বছর ধরে চালাচ্ছি। গত বছর পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছিলাম, হয়নি। এ বছর আবার আবেদন করেছি। আশা করি, এ বছর হয়ে যাবে। আমি নদ ভরাট করিনি। যদি নদ ভরাট হয়ে থাকে, তবে আমার আগে হয়েছে।’
কালীকচ্ছ এলাকার একাধিক ইটভাটার মালিক দাবি করেছেন, সামান্য ত্রুটি নিয়ে তাঁদের ইটভাটা চালাতে পারেন না। আর জিসান ব্রিকস অনুমোদন ছাড়াই বছরের পর বছর ধরে চলছে বিনা বাধায়।
জিসান ব্রিকস ছাড়াও তিতাস পাড়ের একাধিক ইটভাটা নদের জায়গা দখল করে ভরাট করেছে বলে সরেজমিনে জানা যায়। তিতাস নদের পাড়ে গড়ে উঠা প্রতিটি ইটভাটার শ্রমিকেরা নদের পানির ওপর তৈরি করে নিয়েছেন খোলা টয়লেট, যা পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি।
নদী ও পরিবেশ রক্ষা সামাজিক আন্দোলনবিষয়ক সংগঠন তরীর স্থানীয় উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক প্রভাষক মাহবুব খান প্রথম আলোকে বলেন, এখানে যে যেভাবে পারছে, নদ-নদী দখল করছে, যা পরিবেশের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলছে। নদ-নদী দখলকারীদের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। না হলে প্রকৃতির বিরূপ প্রভাব সবাই ভোগ করতে হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রতন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, জেলায় ৫৬টি অবৈধ ইটভাটা আছে। এর মধ্যে জিসান ব্রিকস একটি। সবকটি অবৈধ ইটভাটা ভেঙে দেওয়া হবে। না পারলে মামলা দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হবে।
সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোশারফ হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ইটভাটার বিষয় তিনি জেনেছেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া কেউ ইট উৎপাদন করতে পারেন না। খোঁজখবর নিয়ে অবশ্যই এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।