যশোরের মনিরামপুর উপজেলায় বিএনপির স্থানীয় এক নেতার বিরুদ্ধে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির এক ডিলারের গুদামের তালা ভেঙে ৩১২ বস্তা চাল নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে উপজেলার ঝাঁপা গ্রামের চাকলার বেড় এলাকার গুদাম থেকে চাল নিয়ে যান ওই নেতার লোকজন।
আজ বুধবার সকাল থেকে ঝাঁপা বাজারে বিএনপি নেতার লোকজনের তত্ত্বাবধানে ওই চাল বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে চাল বিক্রির বিষয়ে ডিলার কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন। বিএনপির ওই নেতার নাম আলাউদ্দিন মোড়ল। তিনি উপজেলার ঝাঁপা ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক ও ঝাঁপা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান।
খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ওই ডিলার হলেন ঝাঁপা বাজারের মো. মনিরুজ্জামান। তাঁর ছেলে মো. সাগর হোসেন বাবার ব্যবসা দেখাশোনা করেন। সাগর হোসেন জানান, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে তাঁদের উপকারভোগী ৫১৯ জন। ঝাঁপা বাজারে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে তাঁরা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিক্রি করতেন। সর্বশেষ সেপ্টেম্বরের চাল তুলে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু আলাউদ্দিন মোড়লের নেতৃত্বে লোকজন চাল বিক্রি করতে দেননি। আলাউদ্দিনের লোকজন চাল বিক্রি করে লাভের টাকা নিয়ে যান। যেসব কাগজে সই দরকার, সেগুলো জোর করে করিয়ে নেন। চাল বিক্রির পর ওই ঘরটিও তাঁরা দখল করেন।
সাগর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গত সোমবার অক্টোবরের ৩১২ বস্তা চাল সরকারি গুদাম থেকে তোলেন। ঝাঁপা বাজারের ওই ঘরে চাল রাখা নিরাপদ মনে না হওয়ায় খাদ্য কার্যালয়ের পরামর্শে বাজার থেকে এক কিলোমিটার দূরে একটি গুদামঘরে রেখেছিলেন। গতকাল সকাল থেকে চাল বিক্রির জন্য উপকারভোগীদেরও খবর দেওয়া হয়। এর মধ্যে আলাউদ্দিনের ৬০ থেকে ৭০ লোক গুদামে এসে রামদা ও চায়নিজ কুড়াল নিয়ে তাঁদের হুমকি দেন। এতে ভয়ে তাঁরা পালিয়ে যান। পরে তালা ভেঙে গুদাম থেকে চাল শ্যালো ভটভটি ও ভ্যানে অন্যত্র নিয়ে যান। এ বিষয়ে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) ফোন করলেও কেউ আসেননি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) ফোন করলেও তিনি ধরেননি।
অভিযোগের বিষয়ে বিএনপি নেতা আলাউদ্দিন মোড়ল বলেন, ওই ডিলার আওয়ামী লীগের লোক। গত মাসে চাল তুলে বিক্রি করতে না পারায় তিনি লোকজন দিয়ে বিক্রি করে দেন। লাভের টাকা থেকে ডিলারকে কিছু দেন। বাকি টাকা বিএনপির যাঁরা চাল বিক্রিতে সহযোগিতা করেন, তাঁদের দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, ঝাঁপা বাজার চাল বিক্রির নির্ধারিত জায়গা। কিন্তু চাল তুলে ডিলার খারাপ উদ্দেশ্যে নিজের বাড়ির পাশে নিয়ে রেখেছিলেন। চোরাই চাল ভেবে গতকাল সকালে গ্রামের লোক চাল রাখার ঘরটি ঘেরাও করেন। খবর পেয়ে তিনি তাঁদের নিবৃত্ত করেন। পরে চাল এনে ঝাঁপা বাজারের আগের ঘরে রাখা হয়।
ওই ঘর দখল করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে আলাউদ্দিন মোড়ল অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আগের ঘরটি সেভাবে পড়ে আছে। আজ সকাল থেকে সেখানে ডিলারের লোকজনের উপস্থিতিতে বিএনপির লোকজন চাল বিক্রি শুরু করেছেন। তিনি বলেন, ঝাঁপা গ্রামের ৭৫ ভাগ লোক বিএনপি ও জামায়াতের। কিন্তু গত ১৭ বছর শুধু আওয়ামী লীগের লোকজন চাল পেয়েছেন। এখন সবার কাছে চাল বিক্রি করা হচ্ছে।
মনিরামপুর উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক ইন্দ্রজিৎ সাহা বলেন, ডিলার নিরাপত্তাহীনতায় আছেন বলে জানিয়েছিলেন। ইউএনওর সঙ্গে পরামর্শ করে চাল নিজের হেফাজতে রেখে বিতরণের পরামর্শ দিয়েছিলেন। সেই হিসেবে ঝাঁপা বাজারের ডিলার চাল তুলেছিলেন। গতকাল সকালে ডিলার ফোনে তাঁকে চাল নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি জানিয়েছিলেন। এরপর খাদ্য পরিদর্শক ও তদারকি কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। তাঁরা ঝাঁপা বাজারের আগের ঘরে চাল দেখে এসেছেন। একটা সমঝোতা করে উপকারভোগীদের কাছে ওই চাল বিক্রি শুরু হয়েছে।
মনিরামপুরের ইউএনও নিশাত তামান্না প্রথম আলোকে বলেন, নিরাপত্তার জন্য চাল তুলে ডিলার নিজের হেফাজতে রেখেছিলেন। সেখান থেকে তাঁর চাল বিক্রির কথা। ডিলার আজ চাল বিক্রি শুরু করেছেন বলে ট্যাগ অফিসার (তদারকি কর্মকর্তা) তাঁকে জানিয়েছেন। সেখান থেকে চাল নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তিনি জানেন না। ডিলারও বিষয়টি তাঁকে জানাননি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।
মনিরামপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) পলাশ বিশ্বাস বলেন, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ওই ডিলারের ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। পরে সমঝোতার মাধ্যমে চাল বিক্রি শুরু হয়েছে বলে জানতে পেরেছেন।