বিআরটিসিতে যাত্রী তোলা নিয়ে বিরোধ, দুই পক্ষের মারামারির পর সড়ক অবরোধ

বিআরটিসি ও লোকাল বাসের দ্বন্দ্বে শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করায় সড়কের দুই পাশে কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। সোমবার রাতে ময়মনসিংহ নগরের পাটগুদাম সেতু এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

ময়মনসিংহ নগরের পাটগুদাম ব্রিজ মোড় থেকে নেত্রকোনাগামী বিআরটিসি বাসে এক যাত্রীর ওঠাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মারামারির পর শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ চলছে। সোমবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে পাটগুদাম ব্রিজ মোড় থেকে সব রুটে কোনো বাস চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। এতে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। সড়কের দুই পাশে কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। রাত ১০টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অবরোধ চলছিল।

স্থানীয় লোকজন জানান, গত ২৫ আগস্ট ময়মনসিংহ ব্রিজ মোড় থেকে নেত্রকোনা পর্যন্ত বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালু হয়। এটি দ্রুতই জনপ্রিয় হওয়ায় ময়মনসিংহ থেকে নেত্রকোনাগামী লোকাল বাসগুলোর যাত্রী কমে গেছে। আজ বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বিআরটিসি কাউন্টার থেকে নেত্রকোনাগামী একটি বাস ছেড়ে যাওয়ার সময় একজন যাত্রী দৌড়ে বাসে ওঠেন। এ দৃশ্য দেখে ক্ষুব্ধ লোকাল বাসের কর্মীরা বিআরটিসি বাসের হেলপার ও চালকে নামিয়ে মারধর করেন। পরে সেখানে বিআরটিসির ময়মনসিংহ কাউন্টারের মাস্টার আহাদুর রহমান ওরফে পিয়াস নিজের লোকজন নিয়ে চালক ও হেলপারকে ছাড়িয়ে নিতে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটে। পরে নেত্রকোনা বাস টার্মিনালে বিআরটিসি কাউন্টারের কর্মীরা মহুয়া লোকাল বাসের কয়েক কর্মীকে মারধর করেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সন্ধ্যা ছয়টা থেকে ময়মনসিংহ নগরেরে পাটগুদাম ব্রিজ মোড় থেকে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন যাত্রীরা।

ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, বিআরটিসি বাসের লোকজনের সঙ্গে সাধারণ বাসের শ্রমিকদের ঝামেলাকে ঘিরে সন্ধ্যা ছয়টা থেকে পাটগুদাম ব্রিজ মোড় থেকে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।

বিআরটিসির ময়মনসিংহ কাউন্টারের মাস্টার আহাদুর রহমান বলেন, ‘আজ বিকেল সাড়ে চারটার দিকে নেত্রকোনাগামী একটি বাস কাউন্টার থেকে একটু সামনে যেতেই এক যাত্রী দৌড়ে এসে বাসে ওঠেন। সে সময় নেত্রকোনাগামী মহুয়া লোকাল গাড়ির লোকজন এসে বাস থামিয়ে হেলপার ও চালককে মারধর শুরু করেন। সে সময় আমি নিজে ফেরাতে গেলে আমাকের মারধর করা হয়। তখন আশপাশে আমার এলাকার লোকজন এলে তাঁদের বুঝিয়ে গাড়িটি ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকেই পাটগুদাম ব্রিজ মোড় থেকে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।’

বিআরটিসির নেত্রকোনা কাউন্টারের টিকিট মাস্টার মো. দিগন্ত আহমেদ শাহাদাত বলেন, বিআরটিসির বাস সার্ভিস ভালো হওয়ায় যাত্রীরা এ বাসে চলাচল করতে চান। কাউন্টারের বাইরে যাত্রী তুলতে লোকাল বাসগুলো নিষেধ করলেও এক যাত্রী দৌড়ে এসে উঠে পড়েন। এই কারণে চালক ও হেলপারকে মারধর করা হয়। যাত্রীদের না তুললে রাস্তায় আটকে ঝামেলা করেন। ময়মনসিংহ ব্রিজ মোড় এলাকায় মহুয়া গাড়ির লোকজন ঝামেলা করায় নেত্রকোনা মহুয়া কাউন্টারে কয়েকজনকে মারধর করা হয়। পরে অবশ্য রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিষয়টি মিটমাট করে ফেলা হয়েছে।

এদিকে ময়মনসিংহ নগরের পাটগুদাম এলাকায় শ্রমিকেরা বিআরটিসি বাসের লোকজনের বিচার করা না পর্যন্ত তাঁদের অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। সেই সঙ্গে বিআরটিসি বাস চলাচল বন্ধ করার দাবি জানান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর সদস্যরা রাত ১০টার দিকে পাটগুদাম ব্রিজ মোড় এলাকায় যান। তাঁরা বিক্ষুব্ধ লোকজনকে বোঝাতে শুরু করেন।

ময়মনসিংহ জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আলী হোসেন বলেন, ‘বিআরটিসি বাসের শ্রমিকেরা নেত্রকোনাগামী একটি মহুয়া বাসের হেলপারদের মারধর করেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ হলে বিআরটিসির লোকজন পাটগুদাম মোড়ে এসে মহুয়া কাউন্টারে ভাঙচুর করেন। এতে দুজন শ্রমিক আহত হয়েছেন। তাঁরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মূলত এ ঘটনায় বাসশ্রমিকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে সড়ক অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন। এরপরও আমরা শ্রমিকদের বোঝানোর চেষ্টা করছি, কিন্তু তাঁরা মানছেন না। তাঁরা হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিচারসহ বিআরটিসি বাস বন্ধের প্রতিশ্রুতি চান।’

ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা মোটর মালিক সমিতির প্রশাসক (এডিএম) লুৎফুন নাহার বলেন, ‘বিআরটিসি বাসের চালক-হেলপারের সঙ্গে অন্য বাসের লোকজনের কথা–কাটাকাটি ও ধাক্কাধাক্কি ঘিরে এ অবস্থা তৈরি হয়। বিষয়টি সমাধানে আমরা চেষ্টা করছি।’