ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটসহ নারায়ণগঞ্জের আঞ্চলিক সড়কগুলোতে যাত্রী পরিবহনে সাড়ে চার শতাধিক বাস চলাচল করে। এর মধ্যে দেড় শতাধিক বাসের রুট পারমিট নেই। বছরের পর বছর রুট পারমিট ছাড়া বাসগুলো চলাচল করলেও এগুলোর বিরুদ্ধে জোরালো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
অভিযোগ রয়েছে, বিআরটিএ ও ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে আঁতাত করে এবং প্রভাবশালীদের মদদে রুট পারমিট ছাড়াই বাসগুলো চালাচ্ছেন পরিবহন মালিকেরা। রুট পারমিটের এই হিসাবের বাইরেও নারায়ণগঞ্জের আঞ্চলিক রুটগুলোতে আরও অনেক গণপরিবহন চলাচল করে, যেগুলোর পরিসংখ্যান বিআরটিএ বা প্রশাসনের কাছে নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, দেড় শতাধিক বাসের রুট পারমিট নেই। তবে রুট পারমিটের জন্য আবেদন করেছেন তাঁরা। পরিবহন শৃঙ্খলা ফেরাতে রুট পারমিটের বাইরে কোনো গণপরিবহন চলতে দেওয়া হবে না। দুই মাসের মধ্যে গাড়ির ফিটনেসসহ আবেদন করে অস্থায়ী রুট পারমিট নিতে হবে। অন্যথায় এগুলো আর চলতে দেওয়া হবে না।
৩ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে গোলটেবিল বৈঠকে অবৈধ যানবাহন ও ফুটপাত হকারমুক্ত করতে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন ঐকমত্যে পৌঁছায়। বৈঠকে জেলা প্রশাসক ঘোষণা দেন, রুট পারমিটবিহীন গাড়ি ঢুকলেই ডাম্পিংয়ে পাঠানো হবে। ঘোষণার পরদিন আধা বেলা গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রাখে পরিবহনমালিকেরা। তখনই বিষয়টি বেরিয়ে আসে যে অধিকাংশ গাড়ির রুট পারমিট নেই, অবৈধভাবে চালানো হচ্ছে।
বিআরটিএ নারায়ণগঞ্জ কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, উৎসব ট্রান্সপোর্ট লিমিটেডের ৪০টি বাস, সিটি বন্ধন পরিবহন লিমিটেডের ৪২টি বাস, বাঁধন পরিবহনের ২১টি বাস, বন্ধু পরিবহনের ১৬টি বাস, দি নিউ আনন্দ ট্রান্সপোর্ট লিমিটেড ২টি বাসসহ মোট ১২১টি বাসের রুট পারমিট নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান বন্ধন পরিবহনের ৫৭টি বাসের মধ্যে রুট পারমিট আছে ১৫টির। উৎসব পরিবহনের ৪২টি বাসের মধ্যে রুট পারমিট আছে মাত্র ২টির।
এ বিষয়ে উৎসব পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজল মৃধা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের ৩২টি গাড়ির রুট পারমিট ছিল। গাড়িগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় পুরোনো গাড়ির জায়গায় নতুন গাড়ি রিপ্লেস করা হয়েছে। চার বছর আগে ঢাকায় বিআরটিসিতে ফি জমা দিয়ে আবেদন করা হলেও রুট পারমিট দেওয়া হচ্ছে না।
এ ছাড়া ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত (এসি) শীতল পরিবহনের ৩০টি বাস চলাচল করে। মৌমিতা পরিবহনের বাস সবচেয়ে বেশি—১৬০টি। এ ছাড়া হিমাচল পরিবহনের ৩০টি, বিআরটিসির দোতলা ১০টি গাড়ি রয়েছে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরোনো সড়কে নিউ আনন্দ পরিবহনের ২৩টি, বোরাক পরিবহনের ৩০টি বাস চলাচল করে। এর বাইরে ছাড়া নারায়ণগঞ্জের আঞ্চলিক সড়কগুলোর মধ্যে চাষাঢ়া-সোনারগাঁ রুটে বাধঁন পরিবহনের ৩৪টি, চাষাঢ়া-সাইনবোর্ড-শিমরাইল রুটে বন্ধু পরিবহনের ৩২টি এবং আল্লাহ্ ভরসা পরিবহনের ১২টি বাস চলাচল করে। এসব বাসের অধিকাংশের রুট পারমিট নেই। অনেক বাসের ফিটনেস নেই। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী লোকজন এসব পরিবহন পরিচালনা করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন পরিবহনমালিক এ প্রতিবেদক জানান, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ঢাকা নগর পরিবহন চালুর উদ্যোগ নেওয়ার কারণে নতুন গাড়ির রুট পারমিট দেওয়া হচ্ছে না। রুট পারমিট ছাড়াই বিআরটিএ ও ট্রাফিক পুলিশকে ম্যানেজ করেই চালানো হচ্ছে গাড়ি।
মৌমিতা পরিবহনের বাসের বিরুদ্ধে পাওয়া গেছে বিভিন্ন অভিযোগ। নারায়ণগঞ্জের বেশির ভাগ বাস বিভিন্ন স্থানে কাউন্টার স্থাপনের মাধ্যমে পরিচালনা করা হলেও মৌমিতার বাসগুলো সড়কের থামিয়ে যাত্রী ওঠানো–নামানো করে। এ কারণে সৃষ্টি হয় যানজট। এ ছাড়া রুট পারমিটের বাইরে অসংখ্য বাস রয়েছে তাদের। মৌমিতা পরিবহনের মালিক জাতীয় শ্রমিক লীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক কালু শেখ। এই বিষয়ে তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও ধরেননি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রওশন আলী প্রথম আলোকে বলেন, জেলায় সাড়ে চার শতাধিক যাত্রীবাহী বাস চলাচল করে। এর মধ্যে অনেক গাড়ির রুট পারমিট নেই। পুরোনো গাড়ির বদলে নতুন গাড়ি নামানো হলেও সেগুলোর রুট পারমিট দেওয়া হচ্ছে না।
৫ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে জেলা যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় গণপরিবহনের মালিকদের দুই মাসের সময় বেঁধে দিয়ে বলা হয়, গাড়ির ফিটনেস, বাস রাখার স্থানসহ বিআরটিএতে আবেদন করতে হবে।
যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জের চিহ্নিত গোষ্ঠী এই পরিবহন নিয়ন্ত্রণ করছে। প্রশাসন ও বিআরটিএ বরাবরই তাদের সহায়তা করছে।