মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায় আজ শনিবার বিকেলে নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। তবে কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে হওয়া এই জনসভায় থাকার আমন্ত্রণ পাননি এই শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এমনকি জেলা আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারাও প্রধানমন্ত্রীর জনসভার মঞ্চে থাকার সুযোগ পাচ্ছেন না।
জেলার রাজনীতির শীর্ষ নেতাদের প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় থাকার সুযোগ না পাওয়ার পেছনে মাদারীপুর-৩ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুস সোবহানের (গোলাপ) ‘আপত্তির’ কথা সামনে এসেছে; যদিও এ তথ্য সঠিক নয় বলে দাবি তাঁর।
আজ সকাল ১০টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আমরা মাদারীপুরে স্বাগত জানাই। কিন্তু অনেক ইচ্ছা থাকার সত্ত্বেও তাঁর জনসভায় আমাদের যাওয়া হচ্ছে না।’ শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর জনসভার আগে কালকিনিতে একটি বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম অংশগ্রহণ করেন। তিনি আমাদের কাছে নামের প্রস্তাব চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ১১ জন নেতার নামের প্রস্তাব পাঠানো হয়। কিন্তু গতকাল মির্জা আজম আমাদের জানিয়েছেন, আবদুস সোবহান গোলাপ চান না আমরা প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় যাই। তাই আমাদের ডিউটি পাস হয়নি। আমাদের প্রসঙ্গে তাঁর আপত্তি কেন, সেটা তিনিই ভালো জানেন। এ বিষয়ে আর কিছু বলতে চাই না।’
দলীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী জনসভা উপলক্ষে গত সোমবার কালকিনি পৌরসভার মাঠে একটি বর্ধিত সভা হয়। সেখানে জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগ ছাড়াও মাদারীপুর-২ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান, মাদারীপুর-৩ আসনের প্রার্থী আবদুস সোবহানসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। সভায় প্রধানমন্ত্রীর জনসভা মঞ্চে থাকার জন্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ জেলার জ্যেষ্ঠ আরও কয়েক নেতার নাম রাখা হয়। কিন্তু তাঁদের বিষয়ে আবদুস সোবহান আপত্তি জানানোয় জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের কোনো নেতারই প্রধানমন্ত্রী জনসভায় যাওয়া হচ্ছে না।
প্রধানমন্ত্রী জনসভার মঞ্চে থাকার জন্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ১১ নেতার নাম পাঠান। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা, সহসভাপতি সিরাজুল হক ফরাজি, সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খালিদ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক পাভেলুর রহমান খান, যুবলীগের সভাপতি আতাহার সরদার, সাধারণ সম্পাদক রুবেল খান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মিরাজ হোসেন খান, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদ হাসান ও সাধারণ সম্পাদক বায়েজিদ হাওলাদার।
জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘নামের প্রস্তাব পাঠানো এই নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগমকে সমর্থন করায় আবদুস সোবহান গোলাপ চান না, তাঁরা কেউ প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় থাকুক। তাই তিনি (গোলাপ) বিরোধিতা করায় সবার যাওয়ার ইচ্ছা থাকার পরও তা হচ্ছে না।’
জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ ফরাজি প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্থানীয় এমপি চান না আমরা প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় যাই। তাই আমাদের যাওয়ার খুব ইচ্ছা থাকলেও সেটা হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে আমাদের খারাপ লাগার বিষয় হলেও পরিস্থিতি মেনে নিতে হচ্ছে।’
কালকিনি, ডাসার ও সদরের পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মাদারীপুর-৩ আসন। এই আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবদুস সোবহান গোলাপ। তাঁর সঙ্গে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন সংরক্ষিত নারী আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তাহমিনা বেগম। তিনি আবদুস সোবহানের বিপক্ষে নির্বাচনের অংশ নেওয়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ, আওলাদ হোসেন, ভবতোষ দত্ত, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সরদার মো. লোকমান হোসেন বাদে বাকি সবাই তাহমিনা বেগমকে সমর্থন দিয়েছেন।
আজকের জনসভায় সভাপতিত্ব করবেন সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ ও সঞ্চালনা করবেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন। এ কারণে কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাসহ অঙ্গসংগঠনগুলোর জ্যেষ্ঠ নেতারাও প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় থাকছেন না।
কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুজ্জামান শাহীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তা ছাড়া স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাপ চান না আমরা ওই অনুষ্ঠানে যাই। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমাকে একবার জানানো পর্যন্ত মনে করেনি তিনি (গোলাপ)। তাই আমাদের অঙ্গসংগঠনের সিনিয়র কেউ যাচ্ছেন না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদারীপুর-৩ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুস সোবহান গোলাপ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁরা যে কথা বলেছেন, এই কথা সঠিক নয়। ব্যস, এটুকুই।’
প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে মাদারীপুরের কালকিনিতে নির্বাচনী উৎসবের হাওয়া বইছে। ব্যানার-ফেস্টুনসহ বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে জনসভাস্থল, সড়ক ও বিভিন্ন এলাকা। দলে দলে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জনসভাস্থলে আসছেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
দলীয় সূত্র জানায়, আজ শনিবার বেলা তিনটার দিকে গোলাপগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া থেকে মাদারীপুরের কালকিনি আসবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজ মাঠে নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন তিনি। এ সময় শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানাও থাকবেন।
কালকিনির আলীনগর থেকে জনসভাস্থলে আসা ইলিয়াস হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রথম কালকিনি আসছেন শুনে আমরা তাঁর ভাষণ শুনতে সমাবেশে এসেছি। আজ আমরা খুবই আনন্দিত। প্রধানমন্ত্রীর কাছে কালকিনির উন্নয়ন নিয়ে আমাদের অনেক প্রত্যাশা রয়েছে।’
কালকিনির রমজানপুর এলাকার হেলাল উদ্দীন নামের এক অটোরিকশাচালক বলেন, ‘আজ প্রধানমন্ত্রী আসবেন আমাদের এলাকায়। আজ কোনো কাজ নেই। সব বন্ধ রেখে সমাবেশে চলে এসেছি। প্রধানমন্ত্রীকে সামনে থেকে দেখতে পাব—এটা ভাবতেই খুব ভালো লাগছে।’
প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সকাল থেকেই কালকিনির প্রবেশমুখগুলোয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে আছে। মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মো. মাসুদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে কালকিনিজুড়ে চার স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। সিসিটিভির ক্যামেরায় পুরো জনসভাস্থল পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া অন্য বাহিনীগুলোর সদস্যরাও নিরাপত্তা দিতে কাজ করছেন।