শরীয়তপুরের নড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষ ও বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার উপজেরার ডগরি এলাকায়
শরীয়তপুরের নড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষ ও বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার উপজেরার ডগরি এলাকায়

নড়িয়ায় বিজয় মিছিলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা, দুই সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাও আসামি

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয় মিছিলকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলার নশাসন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন তালুকদারের স্ত্রী সানজিদা তালুকদার বাদী হয়ে নড়িয়া থানায় ৩৫ জনকে আসামি করে মামলাটি করেন।

মামলার আসামিদের মধ্যে একই পরিবারের তিনজন স্কুলশিক্ষকসহ চারজন আছেন। যাঁদের মধ্যে দুই শিক্ষক নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছিলেন।

মামলায় বিঝারী উপসী তারা প্রসন্ন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আমীন, তাঁর ছেলে হিমেল শেখ, ভাই সুলতান মাহমুদ স্বপন শেখ ও চাচাতো ভাই হাফিজুর রহমান টুলু শেখকে আসামি করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে সুলতান মাহমুদ নড়িয়ার মনিরাবাদ বাঘাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি ওই ঘটনার সময় চণ্ডীপুর উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করছিলেন। আর হাফিজুর রহমান বিঝারী উপসী তারা প্রসন্ন উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। তিনি ওই ঘটনার সময় ভড্ডা কান্দাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করছিলেন।

হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি শিক্ষক মানুষ। কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নই। আমাদের পরিবারের সঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার তালুকদারের বিরোধ রয়েছে। এ কারণে শত্রুতা থেকে আমাকে আসামি করা হয়েছে। অথচ ঘটনার সময় আমি নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করছিলাম।’

সুলতান মাহমুদ শেখ বলেন, ‘বুধার আমি উপজেলা নির্বাচনের ভোট গ্রহণের দায়িত্বে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত নড়িয়ায় ছিলাম। কিন্তু কী কারণে ওই দিন পাঁচটার সময় ঘটে যাওয়া ঘটনার একটি মামলায় আসামি করা হলো আমি বুঝতে পারছি না। দেলোয়ার তালুকদার ব্যক্তিগত বিরোধ থেকে আমাদের পরিবারকে দীর্ঘদিন ধরে নানাভাবে হয়রানি করছেন। এই মামলায় আসামি করা এরই একটি উদাহরণ।’

বর্তমানে দেলোয়ার তালুকদার ঢাকায় চিকিৎসাধীন। ফলে এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তাঁর স্ত্রীও ঢাকায় আছেন। তাঁর স্ত্রীর মুঠোফোনে ফোন করে বন্ধ পাওয়া গেছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নড়িয়া সার্কেল) আহসান হাবীব প্রথম আলোকে বলেন, ডগ্রির এ ঘটনায় একটি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। ওই মামলায় ৯ জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আরেক পক্ষ একটি মামলার আবেদন করেছে। সেটা এখনো নথিভুক্ত হয়নি।

নড়িয়া থানা-পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার প্রথম ধাপে নড়িয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হয়। এতে জয়ী হয়েছেন শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হক। আর পরাজিত হন নড়িয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি মামুন মোস্তফা। নশাসন ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার তালুকদার ও ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য কাদের মুন্সি মামুন মোস্তফাকে সমর্থন করেন। আর বিঝারী উপসী তারা প্রসন্ন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আমীন, লিটন হাওলাদার, মাহাবুব ফকির, নুরুজ্জামান হাওলাদারসহ তাঁদের স্বজনেরা ইসমাইল হকের পক্ষ নেন।

বুধবার ফল ঘোষণার পর সন্ধ্যায় নুরুল আমীন, লিটন হাওলাদার, মাহাবুব ফকির ও নুরুজ্জামান হাওলাদারের নেতৃত্বে ডগ্রি বাজারে বিজয় মিছিল বের করা হয়। ওই মিছিল থেকে ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার তালুকদারের বাসভবন ও বিপণিবিতানে হামলা করা হয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে দেলোয়ার তালুকদারসহ দুই পক্ষের ১৫ জন আহত হন। দেলোয়ার তালুকদারের বিপণিবিতানের ১০টি দোকানের শাটার ভাঙচুর করা হয়।

পরে রাতে দেলোয়ারের সমর্থকেরা ডগ্রি মাদবর কান্দিতে মাদবর বাড়িতে হামলা করেন। সেখানে ১০টি বসতঘর ভাঙচুর করা হয়। ঘরের আসবাব ও জিনিসপত্র ভাঙচুর করা হয়। এ সময় ৮-১০টি গবাদিপশু ও একটি মোটরসাইকেল লুট করা হয়। হামলায় আমেনা বেগম ও লুৎফা বেগম নামের দুই বয়স্ক নারীকে মারধর করা হয়।