অক্টোবর মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে গাজীপুর মহানগরীর সারাবো এলাকায় তৃতীয় দিনের মতো সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেছেন বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকেরা। আজ সোমবার সকাল ৯টা থেকে চন্দ্রা-নবীনগর সড়কে অবস্থান নিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন তাঁরা। এতে দুর্ভোগে পড়েন ওই সড়কে চলাচলকারীরা। শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের আশপাশের ২০টি কারখানায় আজ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
সড়কটিতে বিক্ষোভের কারণে বেশ অসুবিধায় পড়েছেন যাত্রী ও চালকেরা। তাঁদের অনেকেই নানা প্রয়োজনে বিকল্প উপায়ে আঞ্চলিক সড়ক দিয়ে নিজেদের গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
সড়কটিতে টানা বিক্ষোভের কারণে বিরক্তি প্রকাশ করে জিরানী বাজার এলাকার ব্যবসায়ী কায়সারুল ইসলাম বলেন, চন্দ্রা-নবীনগর সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পথ। এটি দিয়ে প্রতিদিনই কয়েক হাজার যানবাহন চলাচল করে। বিক্ষোভে যানবাহন চলাচল না করায় মানুষ নিজেদের কর্মস্থলে সময় মতো যেতে পারছেন না। শ্রমিকেরা যাতে সড়ক অবরোধ করতে না পারেন, সে বিষয়ে একটি বিহিত হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
তিতাস পরিবাহনের চালক আবুল হাসান বলেন, ‘তিন দিন ধইরা গাড়ি নিয়া ঢাকায় যেতে পারতাছি না। আজ সকালে বের হইছিলাম ঢাকায় যাওয়ার জন্য। কিন্তু জিরানী বাজার আসার পর রাস্তা বন্ধ। সকাল নয়টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে এখানেই বইয়্যা আছি।’
নভেম্বর মাসের ১৮ তারিখ হয়ে গেলেও গাজীপুর মহানগরীর সারাবো এলাকার বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকেরা গত মাসের বেতন এখনো পাননি। বেতনের দাবিতে গত শনিবার থেকে তাঁরা আন্দোলন শুরু করেন।
অবরোধ কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে কারখানার শ্রমিক ও শিল্প পুলিশ জানায়, নভেম্বর মাসের ১৮ তারিখ হয়ে গেলেও গাজীপুর মহানগরীর সারাবো এলাকার বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকেরা গত মাসের বেতন এখনো পাননি। বেতনের দাবিতে গত শনিবার থেকে তাঁরা আন্দোলন শুরু করেন। গতকাল রোববার রাত ১০টার দিকে অবরোধ প্রত্যাহার করে বাড়ি ফিরে গেলেও আজ আবার সড়কে অবস্থান নিয়েছেন। এতে উভয় দিকেই যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ ও থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করছে।
মো. বিল্লাল হোসেন নামের কারখানাটির এক শ্রমিক বলেন, ‘আমরা তো বাইধ্য হয়ে রাস্তায় নামি। রাস্তায় না নামলে কোনো কিছুর সমাধান আমাদের দেশে হয় না। এখনো ঘরভাড়া দিতে পারি নাই। যেখানে ভাড়া থাকি, তার পাশের দোকান থেকে বাকি খাই, সেই টাকাও দিতে পারতাছি না। বেতন না পাইলে সংসার চালামু ক্যামনে, বলেন?’
শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু তাঁরা বেতন ছাড়া যেতে চাইছেন না। বিষয়টির সমাধান করা উচিত। এখানে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে আশপাশের ২০টি কারখানায় আজ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম
হাজেরা বেগম নামের আরেক শ্রমিক আক্ষেপ নিয়ে বলেন, ‘আমাগো কি আন্দোলন করতে ভালা লাগে? আপনেরা আমাগো একটা সমাধান কইরা দেন। আমরা কাম করুম, বেতন নিমু, তাই দিয়া খাইয়াপইরা চইলা যাইমু। আর বেশি কিছু চাই না।’
এসব বিষয়ে গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু তাঁরা বেতন ছাড়া যেতে চাইছেন না। বিষয়টির সমাধান করা উচিত। এখানে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে আশপাশের ২০টি কারখানায় আজ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।