৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে সারা দেশে চলমান চা-শ্রমিক ধর্মঘটের ষষ্ঠ দিন আজ বৃহস্পতিবার। গতকাল বুধবার ধর্মঘট নিরসনে শ্রম অধিদপ্তরের আয়োজনে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না পেরে রাতে বৈঠক শেষ হয়। বৈঠকে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী, বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটি, বাংলাদেশীয় চা-সংসদের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আজ বৃহস্পতিবার দেশের বিভিন্ন চা-বাগান ঘুরে শ্রমিকদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে দেখা গেছে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভুরভুরিয়া চা-বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে অটল থেকে শ্রমিকেরা বিক্ষোভ-সমাবেশ করছেন। ভাড়াউড়া চা-বাগানের শ্রমিকেরা বাগানে মিছিল বের করেছেন, হরিণছড়া চা-বাগানে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে।
ভুরভুরিয়া চা-বাগানের শ্রমিক রিপন মৃধা বলেন, ‘গতকাল আমাদের নেতারা ঢাকায় গিয়ে আলোচনা করেছেন। কিন্তু আলোচনায় মালিকপক্ষ মজুরি ৩০০ টাকা করতে রাজি হয়নি। আমরা আমাদের ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছি। নেতারা যদি কম মজুরি মেনে নেন, আমরা সেটা মানব না। আমাদের অধিকার আমরা আদায় করে আন্দোলন বন্ধ করব।’
বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা গতকাল দীর্ঘ সময় নিয়ে আলোচনা করেছি। মালিকপক্ষ ১২০ টাকা বাড়িয়ে ১৪০ টাকা করতে প্রস্তাব দেয়। কিন্তু চলমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে আমরা সেটা মেনে নিতে পারি না। আমাদের শ্রমিকেরা আমাদের বারবার ফোন করে জানাচ্ছেন, আমরা যেন দাবি না মানি। ঢাকার মিটিংয়ে আমরা বাগানমালিকদের তেমন আন্তরিকতা দেখতে পাইনি। সরকারের পক্ষ থেকে অনেক প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তাঁদের। কিন্তু মালিকপক্ষ মজুরি বাড়ানোর বিষয়টি পাত্তাই দিচ্ছে না। শেষমেশ আমরা কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে না পেরে সভা শেষ হয়।’
বিজয় হাজরা বলেন, ‘আমরা একটি মানসম্মত মজুরি চাচ্ছি। মালিকপক্ষ আন্তরিকতার সঙ্গে যদি শ্রমিকদের কথা ভাবে, তবে অবশ্যই মজুরি বাড়াবে।’
এদিকে দেশের চট্টগ্রাম, সিলেটসহ ৭টি ভ্যালিতে বাগান পঞ্চায়েত কমিটিকে নিয়ে আলাদা আলাদাভাবে সভায় বসেছেন ভ্যালি সভাপতি ও সম্পাদকেরা। শ্রীমঙ্গলে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বালিশিরা ভ্যালির চা-বাগানের পঞ্চায়েত কমিটি নিয়ে আলোচনা চলছে। সেখানে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি পংকজ কন্দ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল, সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা, অর্থ সম্পাদক পরেশ কালিন্দিসহ অন্য নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
তাঁদের সভা চলাকালে অর্থ সম্পাদক পরেশ কালিন্দি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের প্রতিটি চা ভ্যালিতে চা-বাগানের পঞ্চায়েত কমিটি সভা করছে। আজ বিকেল ৪টায় শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে আমাদের সিদ্ধান্ত জানাতে হবে। এ জন্য আমরা সবার সঙ্গে কথা বলে মহাপরিচালককে কী জানাব, সেটা নির্ধারণ করছি।’