রাজশাহী শহরে দলীয় কার্যালয় করার জন্য একটি অর্পিত সম্পত্তি ইজারা নিয়েছিল রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ। এতে অবস্থিত একটি পুরোনো একটি পাকা ভবন ভেঙে ফেলা হচ্ছে। আজ মঙ্গলবার সকালে শ্রমিকেরা এ ভবন ভাঙার কাজ শুরু করেছেন। তার জায়গায় নতুন করে ঘর করবে আওয়ামী লীগ।
জেলা প্রশাসন বলছে, ইজারা নেওয়া জমির ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হলে প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে ভাঙতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে এ রকম কোনো অনুমতি তারা দেয়নি। তবে আওয়ামী লীগের দাবি, ইজারা দেওয়ার সময় প্রশাসনের কাছ থেকে এই অনুমতি তারা নিয়ে রেখেছে।
নগরের রানীবাজার এলাকায় অবস্থিত এই জমির পরিমাণ ১৪ শতক। এতে পরিত্যক্ত একটি ভবন ছিল। গত ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি এই বাড়ির দেয়ালে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, রাজশাহী জেলা শাখার কার্যালয়’ লেখা একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছিল। তখন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষে সম্পত্তিটি জেলা প্রশাসন থেকে একসনা ভিত্তিতে ইজারা দেওয়া হয়েছে। প্রতিবছর এই ইজারা মূল্য পরিশোধ করতে হবে। এই শর্তে ইজারা নিয়ে তারা ভবনটি ব্যবহারের জন্য পরিষ্কার করেছিল। হঠাৎ আজ সকালে এই ভবন ভাঙার কাজ শুরু করা হয়। ভাঙার সময় জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকে এর তদারকিও করতে দেখা যায়।
রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আনিসুল ইসলাম বলেন, এক বছরের জন্য ইজারার শর্ত অনুযায়ী কেউ অর্পিত সম্পত্তিতে কোনো স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করতে পারবে না। সেখানে ঝুঁকিপূর্ণ কোনো ভবন থাকলে তা প্রশাসন অনুমতি দিলেই কেবল ভাঙতে পারবে। তিনি রাজশাহীতে যোগদান করার পরে রানীবাজারের অর্পিত সম্পত্তির ক্ষেত্রে এ রকম কোনো অনুমতি নেওয়ার বিষয়টি তাঁর জানা নেই। তিনি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে জানাবেন।
জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ প্রথম আলোকে বলেন, ইজারা নেওয়ার সময় যে শর্ত দেওয়া রয়েছে, তার মধ্যে ভাঙার বিষয়টিও রয়েছে। ভবন একেবারে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছিল। গায়ের ওপর ইট খুলে পড়ছিল। এখন তাঁরা সেই ইট দিয়ে একটি অস্থায়ী কার্যালয় করবেন।
ইজারার সময় এ ধরনের কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি—জেলা প্রশাসনের এ বক্তব্যে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আবদুল ওয়াদুদ বলেন, আরও কোনো আনুষ্ঠানিকতা করার দরকার হলে তা–ও তাঁরা করবেন এবং নিয়ম মেনে সবকিছু করবেন।
রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সংসদ সদস্য এনামুল হক এর আগে বলেছিলেন, তিনি ২০১৭ সালে শহরের সিটিহাট এলাকায় রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় করার জন্য যে জমি দিয়েছেন, তার দাম এখন প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। সেখানে ভবন নির্মাণের কাজ শেষের দিকে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সেটি উদ্বোধন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। সাধারণত জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় শহরতলিতে ভালো হয়। তিনি যেখানে জায়গা দিয়েছেন, সেটাই উপযুক্ত। যাঁরা অর্পিত সম্পত্তিতে কার্যালয় করতে যাচ্ছেন, তাঁরা মূলত রাজনৈতিক একটা ‘জেলাসি’ (ঈর্ষা) থেকেই এটা করছেন। তাঁর জানামতে, জেলা প্রশাসন কোনো দলকে কার্যালয় করার জন্য জমি দিতে পারে না। হয়তো কোনো ব্যক্তির নামে দিয়েছে।