বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনে নৌকার প্রার্থী হওয়া শাহজাহান ওমরের (বীর উত্তম) সমাবেশে অস্ত্র প্রদর্শনের বিষয়ে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সমাবেশ করার ঘটনায় নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির কারণ দর্শানোর চিঠির জবাব দিয়েছেন শাহজাহান ওমর। কিন্তু অস্ত্র প্রদর্শনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন এখনো কোনো সিদ্ধান্ত না দেওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
পুলিশ বলছে, পুলিশ প্রশাসন এখন নির্বাচন কমিশনের অধীনে। এ ব্যাপারে কমিশন যেভাবে নির্দেশনা দেবে, পুলিশ সেভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেবে। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা বলছেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা পেলে বৈধ অস্ত্রটি জব্দের বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হবে।
গত সোমবার বেলা ১১টার দিকে কাঁঠালিয়া সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে এক সমাবেশে অংশ নেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শাহজাহান ওমর। ওই সমাবেশে অস্ত্র হাতে তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন উপজেলা বিএনপির একাংশের সভাপতি আবদুল জলিল মিয়াজী। এ ঘটনায় আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রতীক বরাদ্দের আগে প্রচার-প্রচারণা চালানোয় নির্বাচন কমিশনের গঠন করা ঝালকাঠি-১ আসনের নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির প্রধান পল্লবেশ কুমার কুন্ড শাহজাহান ওমরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। নোটিশে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সমাবেশ ও সমাবেশে একজনকে বন্দুক হাতে দেখতে পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়।
কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাবে ভুল স্বীকার করে শাহজাহান ওমর জানিয়েছেন, লাইসেন্স করা বৈধ অস্ত্রটি ভুলবশত সেদিন জনসভায় নিয়ে যান। ভবিষ্যতে এমন আর করবেন না মর্মে তিনি মুচলেকা দেন। ওই নোটিশের জবাবের কপি ঢাকায় নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে পাঠিয়েছে নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটি। কমিটির প্রধান পল্লবেশ কুমার কুন্ড বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।
শাহজাহান ওমর গত সোমবার প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘আবদুল জলিল মিয়াজীর হাতের বন্দুকটি আমার লাইসেন্স করা বৈধ অস্ত্র। আমি বক্তব্য দেওয়ার সময় সেটি তাঁর হাতে দিয়েছিলাম। আমার নিরাপত্তার স্বার্থে এ অস্ত্র সঙ্গে রাখা হয়েছে।’
তবে প্রকাশ্যে জনসভায় প্রদর্শনের পরও অস্ত্রটি জব্দ না করায় এলাকার ভোটার ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা বিস্মিত হয়েছেন। এর আগে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অস্ত্রধারীসহ শোডাউন দিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করায় বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীকে শোকজ করেছিল নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। ওই ঘটনার পরপরই ওই অস্ত্রটি জব্দের পাশাপাশি ওই ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছিল।শাহ
ঝালকাঠি জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তির কাছে নিবন্ধিত অস্ত্র থাকুক বা না থাকুক, তিনি যদি এমনভাবে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেন, যাতে অস্ত্র বেআইনি উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হওয়ার সন্দেহ হয়, সে ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা অন্য যেকোনো ব্যক্তি বিনা পরোয়ানায় তাঁকে গ্রেপ্তারসহ অস্ত্রটি জব্দ করতে পারবেন।
কাঁঠালিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) মো. জালালুর রহমান বলেন, ঘটনার দুই দিন অতিবাহিত হলেও শাহজাহান ওমরের অস্ত্রটি জব্দ করা হয়নি। এ থেকে স্পষ্ট হয় বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া সম্ভব নয়।
১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইন অনুযায়ী, সরকার জনস্বার্থে কোনো নিবন্ধনধারী ব্যক্তিকে তাঁর নিবন্ধন করা অস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরার ওপর নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারেন। ওই বিধিনিষেধ ভঙ্গ করলে ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ কর্মকর্তা বা সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি সেই অস্ত্র জব্দ করতে পারেন এবং জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সময় তার নিবন্ধন বাতিল বা নিবন্ধনের কার্যকারিতা স্থগিত রাখতে পারবেন।
কাঁঠালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম বলেন, বৈধ অস্ত্র প্রকাশ্যে প্রদর্শন করা অপরাধ। যেহেতু নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি প্রার্থীকে ব্যাখ্যা দিতে বলেছেন। তাঁর জবাব পেয়ে কমিটি যে ব্যবস্থা নিতে বলবে, সেভাবে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।
জানতে চাইলে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কাঁঠালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নেছার উদ্দিন বলেন, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে বিধিমালা অনুযায়ী তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অস্ত্র প্রদর্শনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা পেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অস্ত্রটি জব্দ করার নির্দেশ প্রদান করা হবে।
ঝালকাঠির পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আফরাজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেহেতু পুলিশ প্রশাসন এখন নির্বাচন কমিশনের আওতাধীন। তাই আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহজাহান ওমরের শোকজের নোটিশের জবাবের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন যে নির্দেশনা দেবে, আমরা সেভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেব। আশা করি বৈধ অস্ত্রের বিষয়ে একটি নির্দেশনা আসবে।’