রংপুরে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শ সহায়তা সভা

রংপুরে মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শ সহায়তা সভায় শিক্ষার্থীদের মাদকবিরোধী শপথ। মঙ্গলবার দুপুরে নগরের ইন্টারন্যাশনাল গ্রামার স্কুলে
ছবি: প্রথম আলো

মানসিক বিষণ্নতায় মানুষের মাদক গ্রহণের কারণ, মাদক গ্রহণে শরীরের ক্ষতিকর দিক, মাদক ক্ষতিকর হওয়ার পরও দেশে মাদক কীভাবে আসছে, তা রোধ কিংবা বন্ধ না হওয়ার কারণ, চিকিৎসা ছাড়া মাদকাসক্তি থেকে বের হওয়া উপায় কী—খুদে শিক্ষার্থীদের এমন নানা প্রশ্ন উঠে আসে মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শ সহায়তা সভায়। আলোচকেরা শিক্ষার্থীদের এসব প্রশ্নের জবাব দেন।

আজ মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় রংপুর নগরের ইন্টারন্যাশনাল গ্রামার স্কুলে (আইজিএস) শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শ সহায়তা সভা হয়। প্রথম আলো ট্রাস্টের মাদকবিরোধী আন্দোলনের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সভার আয়োজন করেন প্রথম আলো বন্ধুসভা রংপুরের বন্ধুরা। জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হওয়া সভায় বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পাশাপাশি দুই শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।

মাদকের কুফল ও মাদকাসক্তি নিয়ে আলোচকদের বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করে শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার দুপুরে নগরের ইন্টারন্যাশনাল গ্রামার স্কুলে

বিদ্যালয়ের বাংলা মাধ্যমের অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় আলোচক ছিলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক আলী আসলাম হোসেন, রংপুর মেডিকেল কলেজের মনোরোগ বিভাগের চিকিৎসক রঞ্জন কুমার সেন, বিদ্যালয়ের ইংরেজি মাধ্যমের অধ্যক্ষ ইয়াসিন নূর হোসেন, প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সেরাফুল হোসেন, প্রথম আলোর রংপুরের নিজস্ব প্রতিবেদক আরিফুল হক, বন্ধুসভার সভাপতি রওনক জাহান। সভাটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো বন্ধুসভা রংপুরের সাধারণ সম্পাদক সাইদুর জামান।

আলী আসলাম হোসেন বলেন, মাদক সেবন নিজের সম্ভাবনাময় জীবনকে ধ্বংস করে, পুরো পরিবারকে শেষ করে দেয়। তাই কৌতূহলেও কখনো মাদক সেবন করা যাবে না। এ জন্য নিয়মিত খেলাধুলা করতে হবে। ভালো কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে। মাদক নিয়ন্ত্রণে বড় প্রয়োজন সচেতনতা ও নিজের শক্ত মনোবল।

শিক্ষার্থীদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন আলোচকেরা। মঙ্গলবার দুপুরে নগরের ইন্টারন্যাশনাল গ্রামার স্কুলে

মাদকদ্রব্যের কুফল সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আলী আসলাম হোসেন বলেন, পরীক্ষায় ভালো ফল হয়নি কিংবা প্রেমের ব্যর্থতা থেকেও মাদকের প্রতি আসক্তি তৈরি হতে পারে। প্রথম প্রথম এটা মানসিক বিষয় থাকে। ধীরে ধীরে চাহিদা বাড়তে থাকে। একসময় প্রচণ্ড হতাশা থেকে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় অভিভাবকদের বড় ভূমিকা রাখতে হবে। ভালোবাসা ও সুচিকিৎসার মাধ্যমে যে কাউকে মাদক থেকে মুক্ত করা সম্ভব। আলোচনার পাশাপাশি তিনি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

অনুষ্ঠান শেষে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের একটি করে জ্যামিতি বক্স উপহার দেওয়া হয়

মনোরোগবিশেষজ্ঞ রঞ্জন কুমার সেন বলেন, ‘আমি চিকিৎসা দিতে গিয়ে দেখেছি, আমার কাছে আসা অধিকাংশ রোগী মাদকসেবী। তাঁদের পরিবারের দুঃখ-কষ্ট কাছ থেকে দেখে নিজেরই খারাপ লাগে। এমনও দেখেছি, মাদক সেবন করতে করতে মেধাবী শিক্ষার্থীরাও পরিবারকে শেষ করে দিয়েছে। তাই মাদক থেকে দূরে থাকতে হবে।’

অনুষ্ঠান শেষে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের একটি করে জ্যামিতি বক্স উপহার দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে ভালো প্রশ্নকারী তিনজনকে বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হয়।