থার্টি ফার্স্ট নাইটে বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে এবারও উন্মুক্ত স্থানে কনসার্ট কিংবা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নেই। তবে কয়েকটি তারকা হোটেল প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে নানা আয়োজন রেখেছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে সৈকতের কোথাও উন্মুক্ত স্থানে কনসার্ট কিংবা অন্য কোনো অনুষ্ঠান থাকছে না। সৈকতে আতশবাজি, পটকা ফুটানো নিষিদ্ধ। তবে প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে একাধিক তারকা হোটেল কনসার্টের আয়োজন করছে। সেখানে বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়া হবে।
শান্তিপূর্ণভাবে থার্টি ফার্স্ট নাইটের আয়োজন সম্পন্ন করতে গত মঙ্গলবার জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক দলের নেতা ও হোটেলমালিকদের সঙ্গে সমন্বয় সভা করেছে জেলা প্রশাসন। পর্যটকের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং শান্তিপূর্ণভাবে বর্ষবিদায় ও বরণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে কঠোর নিরাপত্তা নেওয়া হচ্ছে।
কক্সবাজার হোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, এখন পাঁচ শতাধিক হোটেল রিসোর্ট গেস্টহাউস কটেজের কোনো কক্ষ খালি নেই। হোটেল রিসোর্ট গেস্টহাউসে দৈনিক ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৪০ হাজার। এখন একটি কক্ষে গাদাগাদি করে পাঁচ-সাতজন করে থাকছেন। এ রকম অবস্থা থাকবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
তারকা হোটেলে থার্টি ফার্স্ট নাইট উৎসব
কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের প্যাঁচার দ্বীপ সৈকতে পরিবেশবান্ধব ইকো টুরিজম পল্লির মারমেইড বিচ রিসোর্ট। যেখানে বিদেশি পর্যটকদের সমাগম থাকে বেশি। এবারের থার্টি ফার্স্ট নাইটে মারমেইড কর্তৃপক্ষ আয়োজন করতে যাচ্ছে বিদেশি তারকা সংগীতশিল্পীদের নিয়ে বর্ষবিদায় ও বরণ উৎসব। রিসোর্টের অভ্যন্তরে ৭০০ ফুট লম্বা সুইমিংপুলের পশ্চিম পাশে উম্মুক্ত বালিয়াড়িতে উৎসবের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন মঞ্চ। সমুদ্রের পানিতেও বিজলিবাতির নৌকা, কাঁকড়াসহ বিভিন্ন প্রতিকৃতি দর্শনার্থীদের নজর কাড়ছে। পুরো রিসোর্ট আলোকসজ্জায় সজ্জিত। দেশ-বিদেশিদের পর্যটকদের থাকার জন্য রিসোর্টে কটেজ আছে ৩৩টি।
মারমেইড ইকো-টুরিজম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিসুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, কক্সবাজারে এখন দেশি-বিদেশি লাখো পর্যটকের ঢল নেমেছে। কিন্তু সমুদ্রসৈকত ছাড়া বিনোদনের তেমন কিছু নেই। কক্সবাজারকে জনপ্রিয় করে বিশ্বদরবারে তুলে ধরতে মারমেইড কর্তৃপক্ষ বিদেশি তারকা শিল্পীদের নিয়ে থার্টি ফার্স্ট নাইটের উৎসব আয়োজন করছে। রিসোর্টের অতিথি ছাড়াও পর্যটকদের উৎসবে অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা হয়েছে।
থার্টি ফার্স্ট উদ্যাপন উপলক্ষে সৈকতের লাবনী পয়েন্টের হোটেল কল্লোলের আঙিনায় বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে হোটেল কর্তৃপক্ষ। নৌকার আদলে সাজানো মঞ্চে বসে শিল্পীরা গান পরিবেশন করবেন।
হোটেল কল্লোলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমরান হাসান প্রথম আলোকে বলেন, পর্যটকদের বিনোদন দিতে হোটেল কর্তৃপক্ষ আগে থেকেই হোটেল মাঠে সন্ধ্যাকালীন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে আসছে। থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে সেই অনুষ্ঠানের আকার বাড়ানো হয়েছে।
তারকা হোটেল সিগালের সুইমিংপুলের পাশের খোলা বারবিকিউ মাঠে লাইভ মিউজিকের আয়োজন করেছে হোটেল কর্তৃপক্ষ। বিকেল চারটা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এখানে স্থানীয় শিল্পীরা গান পরিবেশন করবেন বলে জানান হোটেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরুল হাসান ছিদ্দিকী।
এ ছাড়া তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস, সায়মান বিচ রিসোর্ট, হোটেল কক্স-টুডেসহ কয়েকটি রিসোর্টে নিজস্ব অতিথিদের জন্য বর্ষবিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে বলে জানা গেছে।
টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এবারও সৈকতের উন্মুক্ত স্থানে থার্টি ফার্স্ট নাইটের আয়োজন বন্ধ রাখা হয়েছে। উচ্ছৃঙ্খল আচরণ থেকে বিরত থাকতে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। ৩০ ও ৩১ ডিসেম্বর কয়েক স্তরের বিশেষ নিরাপত্তা বলয় তৈরি করবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তল্লাশি ছাড়া কাউকে সৈকতে নামতে দেওয়া হবে না।