গোপালগঞ্জে নির্বাচন–পরবর্তী সহিংসতা

নিহত তরুণের লাশ নিয়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ

সড়কের ওপর টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছের গুঁড়ি ফেলে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বুধবার গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার চেচানিয়াকান্দিতে
ছবি: প্রথম আলো

গোপালগঞ্জে নির্বাচন–পরবর্তী সহিংসতার ঘটনায় নিহত মো. ওসিকুর রহমান ভূঁইয়ার লাশ নিয়ে এক ঘণ্টা ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন স্থানীয় লোকজন। বিক্ষোভকারীরা সড়কের ওপর টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছের গুঁড়ি ফেলে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। আজ বুধবার বেলা একটায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোপালগঞ্জের চেচানিয়াকান্দিতে এ বিক্ষোভ ও সমাবেশ করা হয়। সমাবেশে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।

গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মর্গ থেকে ওসিকুরের লাশ নিয়ে শোকমিছিল বের করেন আন্দোলনকারীরা। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে চেচানিয়াকান্দিতে যায়। সেখানে লাশ সামনে রেখে বিক্ষোভ সমাবেশ পালন করা হয়। ঘণ্টাব্যাপী অবরোধে মহাসড়কের দুই পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়। এ কারণে ভোগান্তিতে পড়েন দূরপাল্লার যাত্রীরা।

এ সময় বক্তারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা ও গোপালগঞ্জ সদরের সদ্য বিজয়ী চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান ভূঁইয়ার অপসারণের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। পরে বেলা দুইটায় গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে এসে বিচারের আশ্বাস দেন। এ সময় আন্দোলনকারীরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের সময় বেঁধে দিয়ে অবরোধ তুলে নেন। এ সময়ের মধ্যে দাবি আদায় না হলে চন্দ্রদিঘলিয়া বাসস্ট্যান্ডে মহাসড়ক অবরোধসহ বৃহত্তর আন্দোলন করার ঘোষণা দেওয়া হয়।

জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ইলিয়াস হক বলেন, যে হত্যার ঘটনা ঘটেছে, তা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার চান তাঁরা। তাঁরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্বাসী। তাঁরা প্রত্যাশা করছেন, প্রশাসন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করবে।

সড়কের ওপর ফেলে রাখা হয়েছে গাছের গুঁড়ি

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সফিকুল আলম, উপপ্রচার সম্পাদক শিমুল চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পরাজিত প্রার্থী বি এম লিয়াকত আলী, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলিমুজ্জামান, জেলা যুবলীগের সহসভাপতি শেখ সাহবুদ্দিন, সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জায়েদ মাহামুদ, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিউটন মোল্লা প্রমুখ।

গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার চন্দ্রদিঘলিয়া বাজারে গুলিতে ওসিকুরসহ পাঁচজন আহত হন। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ওসিকুরকে মৃত ঘোষণা করা হয়। নিহত ওসিকুর ভূঁইয়া (২৭) গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা চন্দ্রদিঘলিয়া গ্রামের জলিল ভূঁইয়ার ছেলে। তিনি চন্দ্রদিঘলিয়া বাজারে চা-বিক্রেতা ছিলেন। স্থানীয় লোকজন বলেন, ওসিকুর সদ্য সমাপ্ত গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী বি এম লিয়াকত আলীর সমর্থক ছিলেন। আর হামলাকারীরা বিজয়ী প্রার্থী কামরুজ্জামান ভূঁইয়ার সমর্থক ছিলেন।

গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার আল-বেলি আফিফা বলেন, পুলিশ ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলে আশ্বস্ত করলে তাঁরা অবরোধ তুলে নিয়েছেন।

জেলা প্রশাসক কাজি মাহবুবুল আলম বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে এবং স্বচ্ছভাবে ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা ও মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাব, বিজিবি, আনসার মোতায়েন করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি দুঃখজনক। অবৈধ কোনো অস্ত্র ব্যবহার হলে তা উদ্ধারের জন্য অভিযান অব্যাহত থাকবে।