কুড়িগ্রামের প্রধান প্রধান নদ-নদীগুলোর ভাঙনে বসতবাড়ি হারাচ্ছে অনেক পরিবার। সরকারি হিসাবে গত এক মাসে জেলায় নদীভাঙনে প্রায় এক হাজার পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়েছে।
রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের চর খিতাব খাঁ গ্রামের বাসিন্দা আবদুল হামিদ (৬৮) ঘর হারানো মানুষদের একজন। একসময় তাঁর সাতটি ঘরের পাকা বাড়ি ছিল। ছিল চার একর ফসলি জমি। গত বন্যায় তিস্তা নদীতে ভাঙন শুরু হলে তিনি বসতঘর হারিয়েছেন। বর্তমানে পরিবারের আটজন সদস্যসহ ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের বাঁধের রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন। দিনমজুরি করে কষ্টে দিন পার করেন।
আবদুল হামিদ বলেন, ‘তিস্তা নদী হামার বাপ–দাদার বসতবাড়ি ভাঙি নিয়া হামাক ফকির করি দিছে। একসময় হামার জমিত মানুষ বাড়ি করি আছিল আর অ্যালা হামার মাথা গোঁজার ঠাঁই নাই। বাঁধের রাস্তাত বাড়ি করি আছি।’
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে রাজারহাট উপজেলায় তিস্তা নদীর ভাঙনের শিকার হয়েছে ৩ শতাধিক পরিবার, ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের প্রায় ২৫০ পরিবার, চিলমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের গাজীরপাড়া, শাখাহাতির চর, মোনতোলার প্রায় ৩০০ পরিবার, রৌমারী উপজেলার চর শৌলমারী উপজেলার সোনাপুরে শতাধিক পরিবার এবং কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের প্রথম আলো চরে শতাধিক ও যাত্রাপুর ইউনিয়নের ভগবতীপুর ইউনিয়নের প্রায় ১০০ পরিবার বসতভিটা হারিয়েছে। এসব পরিবার অন্যের জমিতে ও বাঁধের রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছে। মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকায় অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে অন্য জেলায় পাড়ি জমিয়েছেন।
রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ও ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের তিস্তাপাড় ঘুরে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন দেখা গেছে। গত ১৫ দিনে নদীভাঙনে ওই এলাকার শতাধিক বসতবাড়ি ভেঙে গেছে। ভাঙনের শিকার মানুষ বাঁধের রাস্তায়, অন্যের আঙিনায় ছাউনি তুলে মানবেতর জীবনযাপন করছে। প্রতিদিন নতুন নতুন বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। তিস্তার ভাঙনে চর খিতাব খাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রামহরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর খিতাব খাঁ, গতিয়াশাম, কালিরহাট, রামহরিপাড়া, নামাভরাট গ্রাম ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের প্রথম আলো চরের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান জানান, জুলাই মাসে বন্যার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত চরের শতাধিক পরিবার ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে গেছে। প্রথম আলো চরে আলোর পাঠশালা, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দুটি সোলার পাম্প, ঈদগাহ মাঠ ও তিন শতাধিক বসতবাড়ি ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
চিলমারী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে চিলমারী ইউনিয়নের মোনতোলা, শাখাহাতি, গাজীপাড়ায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন চলছে। গত এক মাসের ভাঙনে প্রায় ৩০০ বসতবাড়ি, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ ও বাজার ভেঙে গেছে। নদীর ভাঙনরোধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. বাবলু মিয়া জানান, গত এক মাসে ইউনিয়নের ২৫০টি বাড়ি নদীতে ভেঙে গেছে। এখনো ইউনিয়নের খুদিরকুটি, উত্তর বালাডোবা, মোল্লারহাট এলাকার ৫০০ পরিবার ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে বেগম নুর নাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মোল্লারহাট বাজার, খুদিরকুয়ি বাজার ও বিদ্যালয় বিলীন হয়ে যাবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কুড়িগ্রাম কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান, গত এক মাসে কুড়িগ্রাম জেলার নদ-নদীগুলোর চার কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছিল। এর মধ্যে পাঁচটি পয়েন্টে ভাঙন মোকাবিলায় কাজ চলমান রয়েছে।