খুলনার কয়রা উপজেলার হরিণখোলা এলাকায় কপোতাক্ষ নদের বাঁধের ৩০০ মিটার ধসে পড়েছে। গত সোমবার তোলা ছবি
খুলনার কয়রা উপজেলার হরিণখোলা এলাকায় কপোতাক্ষ নদের বাঁধের ৩০০ মিটার ধসে পড়েছে। গত সোমবার তোলা ছবি

বাঁধে ধস, ঝুঁকিতে মানুষ 

  • ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। 

  • ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা না নিলে বোরো ধানের খেত ডুবে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে খুলনার কয়রা উপজেলার সদর ইউনিয়নকে রক্ষার জন্য দুই বছর আগে কপোতাক্ষ নদের পাড়ে একটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ওই বাঁধ এখন ধসে পড়ছে। ইতিমধ্যে বাঁধের ৩০০ মিটার ধসে পড়েছে। বাঁধের ৫০০ মিটারজুড়ে ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ না নিলে বাঁধের একটি বড় অংশ নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

স্থানীয় লোকজন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেছেন, অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ এবং মাটির পরিবর্তে বালু ব্যবহার করায় নির্মাণের মাত্র দুই বছরের মধ্যে বাঁধের কিছু অংশ ধসে পড়েছে।

অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করায় কয়রা উপজেলায় কপোতাক্ষ নদের পাড়ে নির্মিত বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি বাঁধের ৩০০ মিটার ধসে পড়েছে।

বাঁধ ধসে পড়ায় হরিণখোলা, গোবরা, ঘাটাখালী, মদিনাবাদ গ্রামসহ কয়রা উপজেলা সদরের প্রায় ১০ হাজার মানুষ ঝুঁকিতে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ভাঙনরোধে অবিলম্বে পাউবোর পক্ষ থেকে ব্যবস্থা না নিলে প্রায় এক হাজার একর বোরো ধানের খেতসহ অসংখ্য মাছের ঘের নদের লোনাপানিতে ডুবে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

পাউবো খুলনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) অর্থায়নে ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর কয়রা উপজেলার হরিণখোলা খালের গোড়া থেকে ঘাটাখালী গ্রামের সামনে দিয়ে গোবরা গ্রাম পর্যন্ত ১ দশমিক ৭ মিটার বাঁধের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়েোগ করে কাজটি শুরু করা হয়েছে। এই কাজ শেষ হয় ২০২১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর। নির্মাণকাজে খরচ হয় প্রায় ১০ কোটি টাকা। দুই পাশে মাটির দেয়াল ও মাঝখানে নালা কেটে বালু ভরাট করে বাঁধটি নির্মাণ করা হয়।

গত ২৯ জানুয়ারি দুপুর ১২টার দিকে হরিণখোলা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাঁধের ৩০০ মিটার অংশ নদে ধসে পড়েছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে পাশের আরও ৫০০ মিটার। বাঁধের ধসে যাওয়া স্থান থেকে জিও বস্তা নদের পানিতে বিলীন হয়ে গেছে। নদের পানির গতিপথ পাল্টে বেড়িবাঁধের গায়ে আছড়ে পড়ছে। 

হরিণখোলা গ্রামের বেড়িবাঁধ এলাকার বাসিন্দা আবদুর রহিম শেখ বলেন, এই বাঁধকেই বলা হতো কয়রার সবচেয়ে মজবুত বেড়িবাঁধ। এখানে যত বড় প্রকল্প ছিল, কাজ তত ভালো হয়নি। বাঁধটি অনেক উঁচু ও প্রশস্ত করে শুধু নামেমাত্র মজবুত বাঁধ নির্মাণের কথা হলেও অধিকাংশ স্থানে বাঁধের দুই পাশ ও ওপরে মাটি দিয়ে ভেতরে বালু দেওয়া হয়। এ কারণে বাঁধ দুর্বল হয়ে এখন ধসে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে কী হবে, তা বলা যাচ্ছে না।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল কালাম শেখ বলেন, ২০২০ সালে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে বাঁধের ওই স্থান ভেঙে গিয়েছিল। একই সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে প্রায় দুই কিলোমিটার বাঁধ। সে সময় পাউবো ওই বাঁধটি মেরামতের উদ্যোগ নেয়। তবে সঠিক তদারকি না থাকায় কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অপরিকল্পিতভাবে বাঁধটি নির্মাণ করে। ফলে দুই বছর না যেতেই বাঁধটি ভাঙন দেখা দিয়েছে।

আবুল কালাম শেখ আরও বলেন, বাঁধের ভেতরে যদি বালু দেওয়া না হতো, তাহলে এ অবস্থা হতো না। আজ সকাল থেকে ভাঙনকবলিত স্থানে নদের পানিতে ঘূর্ণমান প্রবাহ দেখা যাচ্ছে। এতে বাঁধের নিচের অংশের মাটি দ্রুত সরে যাচ্ছে। ভাঙনরোধে দ্রুত পাউবোকে পদক্ষেপ নিতে হবে; তা না হলে নদের তীরবর্তী জনপদের বিস্তীর্ণ এলাকা বিলীন হওয়ার আশঙ্কা আছে।

খুলনা পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মুহম্মদ জসীম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাইকার অর্থায়নে ভিন্ন নকশায় বাঁধটি নির্মাণ করা হয়েছিল। মাটির সংকট থাকায় প্রথমে বাঁধের মাঝের স্থানে ড্রেন কেটে বালু দিয়ে ভরাট করা হয়। পরে দুই পাশে মাটি দিয়ে নির্মাণ হয় বাঁধ। আমি ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। ভাঙনের জায়গায় নদের অপর পাশে পুকুর থাকায় ঝুঁকি একটু বেশি। দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙনকবলিত ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কার করা হবে।