উপবৃত্তি ও প্রশিক্ষণের ভাতা থেকে টাকা কেটে নেওয়া, বিনা রসিদে টাকা আদায়সহ অধ্যক্ষের বিভিন্ন অনিয়মের প্রতিবাদে নোয়াখালীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেছেন মাইজদী সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁরা কলেজের অধ্যক্ষ মো. কফিল উদ্দিন ভূঁইয়ার অপসারণের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত জেলা শহর মাইজদীর মোহাম্মদীয়া মোড় ও কলেজ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা এসব কর্মসূচি পালন করেন। শিক্ষার্থীদের কর্মসূচির কারণে কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ বেলা ১১টার দিকে মাইজদী সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের কয়েক শ শিক্ষার্থী শহরের মাইজদী বাজার এলাকার ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। শিক্ষার্থীরা প্রায় এক কিলোমিটার সড়ক অতিক্রম করে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা মোহাম্মদীয়া মোড় নামক স্থানে সড়ক অবরোধ করেন। প্রায় আধা ঘণ্টা শিক্ষার্থীদের এই অবরোধ চলে। এতে সড়কের দুই দিকে অনেক যানবাহন আটকা পড়ে ভোগান্তির শিকার হন যাত্রীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা পরে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে যান। তাঁরা কলেজের প্রধান ফটকের সামনের মাইজদী-ছয়ানী-চন্দ্রগঞ্জ সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় ওই সড়কেও যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে কলেজের জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের হস্তক্ষেপে শিক্ষার্থীরা ফটক থেকে ক্যাম্পাসের ভেতরে অবস্থান নেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা ১ অক্টোবর থেকে অব্যাহতি নেওয়া অতিথি শিক্ষক জহিরুল হককে পুনর্বহাল ও অধ্যক্ষের অপসারণের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে কলেজ ক্যাম্পাসে এক বিশৃঙ্খল পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, এমনিতেই তাঁদের প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষকের তীব্র সংকট চলছে। কর্মরত শিক্ষকদের প্রায় অর্ধেকই অতিথি শিক্ষক। গত বছরের শেষ দিকে হুমায়ুন কবির অন্যত্র বদলি হলে এই কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন মো. কফিল উদ্দিন ভূঁইয়া। তিনি যোগদান করার পরই শূন্য পদে স্থায়ী শিক্ষকের ব্যবস্থা না করে কলেজে কর্মরত দক্ষ একাধিক শিক্ষককে অব্যাহতি দেন। সর্বশেষ ১ অক্টোবর অধ্যক্ষ কফিল উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে মেশিন ট্রেড বিভাগের অতিথি শিক্ষক জহিরুল হককে অব্যাহতিপত্র দিতে বাধ্য করেন।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, শুধু যোগ্য শিক্ষকদের অব্যাহতি দেওয়াই নয়, বর্তমান অধ্যক্ষ যোগদানের পর থেকে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে উপবৃত্তি ও বাস্তব প্রশিক্ষণের ভাতা থেকে জেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ে ঘুষ দেওয়ার কথা বলে জনপ্রতি ৫০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীপ্রতি ৪৭৫ টাকা করে পরীক্ষার ফি আদায় ও অত্যাবশ্যকীয় কর্মচারীর নামে বিনা রসিদে টাকা আদায় করা হচ্ছে। একইভাবে কলেজে স্কাউট খাতে টাকা আদায় করা হলেও স্কাউটের কোনো কার্যক্রম দৃশ্যমান নয়। পাশাপাশি সাইকেল রাখার স্ট্যান্ড নির্মাণের জন্য নিয়মিত টাকা আদায় করা হয়। কিন্তু সাইকেল স্ট্যান্ড নির্মাণ না করায় শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এসব বিষয়ে অধ্যক্ষের কাছে বারবার ধরনা দেওয়া হলেও কোনো কাজ হয়নি।
অব্যাহতিপ্রাপ্ত শিক্ষক জহিরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, তিনি গত প্রায় চার বছর আগে এই প্রতিষ্ঠান থেকেই অবসরে যান। এরই মধ্যে কলেজে শিক্ষক শূন্যতা দেখা দিলে শিক্ষার্থীদের অনুরোধে তিনি অতিথি শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছিলেন। কিন্তু বর্তমান অধ্যক্ষ কয়েক দিন আগে অন্য আরেকজন শিক্ষকের মাধ্যমে তাঁকে অব্যাহতিপত্র দেওয়ার অনুরোধ পাঠান। এতে তিনি নিজের সম্মানের কথা বিবেচনা করে ১ অক্টোবর অব্যাহতিপত্র জমা দেন। তবে আজ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে অধ্যক্ষ মো. কফিল উদ্দিন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, বিনা রসিদে টাকা আদায়ের অভিযোগ ঠিক নয়। উপবৃত্তির টাকা ব্যয়ের যে খাত, ওই খাতে জমা না হয়ে বেতন-ভাতার খাতে জমা হওয়ায় এ জন্য হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ে ঘুষ দিতে হয়। সাইকেল স্ট্যান্ড নির্মাণের টাকা ব্যাংকে জমা আছে। সুবিধাজনক জায়গা না পাওয়ায় সেটি নির্মাণ করা যাচ্ছে না। আর শিক্ষক জহিরুল হককে তিনি অপসারণ করেননি। তিনি নিজেই পারিবারিক সমস্যার কথা বলে অব্যাহতি নিয়েছেন। কিন্তু একটি কুচক্রী মহল শিক্ষার্থীদের ভুল বুঝিয়ে আন্দোলনে নামিয়েছে।