কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার ইনানী সৈকতে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে পাথরের স্তূপ। প্রাকৃতিকভাবে সৃজিত এই পাথরস্তূপে বসে উত্তাল সমুদ্র দেখতে ভালোবাসে সবাই। কিন্তু ইদানীং ইনানী সৈকত ভরে থাকে আবর্জনায়। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সৈকতের মাত্র এক কিলোমিটার অংশ থেকেই এক ঘণ্টায় প্রায় ৩০০ কেজি প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণ করেছে ৪০ জনের একটি স্বেচ্ছাসেবী দল।
আন্তর্জাতিক উপকূল পরিচ্ছন্নতা দিবস উপলক্ষে ইনানী সৈকতে এ পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও সচেতনতামূলক নানা কর্মসূচির আয়োজন করে ইয়ুথ কনজারভেশন কর্পস (ওয়াইসিসি) ও ওয়ার্ল্ডফিশ নামে দুটি বেসরকারি সংস্থা। পরিচ্ছন্নতা অভিযানের আগে সৈকতের নারকেলবাগান এলাকায় চলে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও সমুদ্রদূষণ নিয়ে মুক্ত আলোচনা করা হয়।
ইকোফিশ-এর রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট এস কে মো. সাইফ উল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য দেন উখিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সৌরভ মাহমুদ, ওয়াইসিসির ফিল্ড কো-অর্ডিনেটর মো. রফিকুল ইসলাম প্রমুখ। সভায় ইকোফিশ প্রকল্পের ১৪ জন ব্লু গার্ড, ওয়াইসিসির ৪০ জন তরুণ প্রশিক্ষণার্থী, স্থানীয় ৩৫ জন জেলেসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অংশ নেন। সভায় সমুদ্রের জীববৈচিত্র্যের সুরক্ষা এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় একযোগে কাজ করতে এবং সমুদ্রে প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলে পরিবেশের ক্ষতি না করতে অঙ্গীকার করেন সবাই।
রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সমুদ্র আমাদের সম্পদ। অথচ আমাদের কারণেই সমুদ্র এবং সামুদ্রিক সম্পদগুলো আজ বিপন্ন। দিন দিন সমুদ্রে বাড়ছে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ, যা বিপন্ন করছে এর জীববৈচিত্র্যকে। এসব ক্ষেত্রে সমুদ্রে বেড়াতে আসা পর্যটক এবং গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।’
সৌরভ মাহমুদ বলেন, জেলে ও পর্যটকদের ফেলে আসা প্লাস্টিক, জাল ইত্যাদি অপচনশীল বর্জ্য পুরো ‘ইকো সিস্টেমকে’ হুমকির মুখে ফেলছে। উপকূলীয় এলাকায় জেলেরা যত বেশি সচেতন হবে, সমুদ্র সম্পদ সংরক্ষণ ততটাই উপযোগী হবে।
এরপর ‘সাগর-পাহাড়-বন পরিবেশ, আমরা বাঁচালেই সাজবে দেশ; এই স্লোগানে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। এরপর সৈকতে বৃক্ষরোপণ করা হয়। আয়োজকেরা জানায়, ইনানী সমুদ্রসৈকতের এক কিলোমিটার সমুদ্রসৈকত পরিষ্কারের মধ্য দিয়ে উপকূল পরিচ্ছন্নতা দিবস পালন করেছে তাঁরা। প্লাস্টিক বর্জ্য, জেলেদের ফেলে যাওয়া প্লাস্টিকের জাল এবং অন্যান্য বর্জ্য এই তিন ভাগে আলাদাভাবে পরিষ্কার করা হয়। এক ঘণ্টার এই পরিচ্ছন্নতা অভিযানে প্রায় ৩০০ কেজি বর্জ্য সৈকত থেকে অপসারণ করেন ওয়াইসিসি প্রশিক্ষণার্থী এবং ব্লু গার্ডের সদস্যরা।
আয়োজকেরা আরও বলেন, ইউএস ফরেস্ট সার্ভিস এবং ইউএসএইড-এর যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত কমিউনিটি পার্টনারশিপ টু স্ট্রেনদেন সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের আওতায় ওয়াইসিসি কক্সবাজার এবং বান্দরবানের তরুণ-তরুণীদের নিয়ে কাজ করছে। তিন বছর ধরে ওয়াইসিসি প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণসহ কারিগরি দক্ষতা উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। সাধারণত ১৮-২৪ বছর বয়সী সুবিধাবঞ্চিত এবং পড়াশোনা বঞ্চিত তরুণ-তরুণী ওয়াইসিসির এই প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন।