চরাঞ্চলে উৎপাদিত দুধ খামারিরা এলাকায় বিক্রি করতে পারেন না। তাই পাইকারেরা এ দুধ কিনে ঢাকা ও চাঁদপুরে বিক্রি করেন।
শরীয়তপুরের পদ্মা ও মেঘনা নদীর দুই তীরে রয়েছে অসংখ্য ছোট–বড় চর। চরগুলোতে গরুর খামার রয়েছে। খামারিরা এসব দুধ স্থানীয় হাটে না নিয়ে বিক্রি করছেন পাইকারদের কাছে। নৌপথ পাড়ি দিয়ে প্রতিদিন শত শত মণ দুধ শরীয়তপুরের চরাঞ্চল থেকে ঢাকা ও চাঁদপুরে নেওয়া হয়। দুধের ভালো দাম পেয়ে খুশি খামারিরা।
শরীয়তপুর জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্র জানায়, জেলায় ছোট–বড় ৮ হাজার ৯৪টি গরুর খামার রয়েছে। খামার থেকে ১ লাখ ৫ হাজার টন দুধ উৎপাদন করা হয়। উৎপাদিত দুধের ৪০ শতাংশ জেলার বাইরে বিক্রি করা হয়।
জাজিরার নাওডোবা থেকে গোসাইরহাটের নলমুরি পর্যন্ত ৭১ কিলোমিটার এলাকায় পদ্মা ও মেঘনা নদী রয়েছে। নদীর উত্তর ও পূর্ব তীরে অন্তত ৩০টি ছোট–বড় চর রয়েছে। ওই চরগুলোতে প্রতিটি কৃষক পরিবারে গরু রয়েছে। ছোট খামারে উৎপাদিত দুধ স্থানীয় হাটবাজারে বিক্রি করা হয়। আর বড় খামারে উৎপাদিত দুধ পাইকারেরা কিনে নিয়ে ঢাকা ও চাঁদপুরে বিক্রি করেন।
খামারিদের কাছ থেকে পাইকারেরা দুধ সংগ্রহ করে ট্রলার করে চাঁদপুর ও লঞ্চে করে ঢাকায় নিয়ে যান। সেখানে বিভিন্ন মিষ্টির কারখানায় ওই দুধ সরবরাহ করা হয়। পাইকারেরা খামারিদের কাছ থেকে ৫০-৫৫ টাকা দামে প্রতি কেজি দুধ কেনেন। আর ঢাকা ও চাঁদপুরে প্রতি কেজি দুধ ৬০ টাকা দামে বিক্রি করেন।
ভেদরগঞ্জ উপজেলার উত্তর তারবনিয়া এলাকার খামারিদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করে ট্রলার করে তা চাঁদপুরে নিয়ে যান হোসেন ব্যাপারী। তিনি প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ কেজি দুধ চাঁদপুর শহরের একটি মিষ্টি প্রস্তুত ও বিক্রিয় প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করেন।
তিনি বলেন, চরাঞ্চলে বড় কোনো হাটবাজার নেই। এখানকার উৎপাদিত দুধ খামারিরা বিক্রি করতে পারেন না। তাই ৩৫ বছর ধরে খামারিদের দুধ সংগ্রহ করেন। ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে নৌপথে চাঁদপুরে পৌঁছে দেন। খামারিরাও ভালো দাম পাচ্ছেন। তাঁদেরও কিছু লাভ হচ্ছে।
ভেদরগঞ্জের কাঁচিকাটা ইউনিয়ন, নড়িয়ার চরআত্রা ও নওপাড়া ইউনিয়ন পদ্মা নদীর মাঝের চরে অবস্থিত। নৌকা ছাড়া ওখানকার মানুষের যাতায়াতের কোনো ব্যবস্থা নেই। সেখানের খামারের উৎপাদিত দুধ লঞ্চ ও ট্রলার করে ঢাকায় নিয়ে যায় পাইকারেরা। কাঁচিকাটা এলাকার পাইকার সফিকুল ইসলাম বলেন, পদ্মার মাঝের চরগুলোর খামারিরা তাঁদের খামারের দুধ চরের বাইরে বিক্রি করতে পারেন না। দামও তেমন পান না।
সেসব খামার থেকে দুধ সংগ্রহ করে ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করছেন। লঞ্চ ও ট্রলার করে দুধ পুরান ঢাকায় নেওয়া হয়। এরপর বিভিন্ন মিষ্টির কারখানায় সরবরাহ করা হয়।
জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কৃত্রিম প্রজনন বিভাগের উপপরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হাবীবুর রহমান বলেন, শরীয়তপুরে যে পরিমাণ দুধ উৎপাদন হয়, তার ৩০ শতাংশ চরাঞ্চলে হয়। শরীয়তপুরের খামারের দুধের মান ভালো। এ কারণে সেখানকার দুধ ঢাকা ও চাঁদপুরের মিষ্টির কারখানায় চাহিদা রয়েছে।