বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সদ্য ঘোষিত কমিটি প্রত্যাখান করে কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে পদবঞ্চিত নেতা এবং তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের বিক্ষোভ-সমাবেশ অব্যাহত আছে। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে দ্বিতীয় দিনের মতো পদবঞ্চিত নেতা এবং তাঁদের সমর্থকেরা বগুড়া শহরের সাতমাথায় টেম্পল সড়কে দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু করেছেন। বিক্ষোভ কর্মসূচিতে নতুন কমিটিতে পদ পাওয়া অন্তত পাঁচ নেতাকেও দেখা গেছে।
অবস্থান কর্মসূচি থেকে নেতা-কর্মীরা থেমে থেমে জেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা ছাড়াও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধেও স্লোগান দিচ্ছেন। এই কর্মসূচিতে জেলা ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা ছাড়া বগুড়া সদর উপজেলা ও শহর ছাত্রলীগ, সরকারি আজিজুল হক কলেজ ছাত্রলীগ ও সরকারি শাহ সুলতান কলেজ ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরাও অংশ নিয়েছেন।
এর আগে গতকাল সোমবার রাত ৯টার দিকে বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। সাত বছর পর সম্মেলন ছাড়াই ঘোষিত এই কমিটিতে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ৩০ জনের নাম আছে। এর পরপরই বগুড়া শহরের টেম্পল সড়কে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে জড়ো হন বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা। ওই ভবনে ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের অঙ্গ সহযোগী সব সংগঠনের কার্যালয় অবস্থিত। বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা কমিটি প্রত্যাখ্যান করে ওই ভবনের ফটকে তালা লাগিয়ে দেন। কার্যালয়ের সামনে টেম্পল সড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন তাঁরা।
সভাপতি পদপ্রত্যাশী ছিলেন তৌহিদুর রহমান। তিনি নতুন কমিটিতে সহসভাপতি পদ পেয়েছেন। তৌহিদুর বলেন, যাঁরা কখনো বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে রাজপথে লড়াই–সংগ্রামে অংশ নেননি, যাঁরা কখনো ছাত্রলীগের আদর্শিক রাজনীতি করেননি, তাঁদের নিয়ে গঠিত জেলা ছাত্রলীগের ঘোষিত কমিটি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত দুর্বার আন্দোলন চলবে। এই কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া আল-মাহিদুল ইসলামকে জেলা ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে কেউ কখনো দেখেননি। তিনি জেলা ছাত্রলীগের প্রাথমিক সদস্যও নন।
তৌহিদুরের দাবি, আল-মাহিদুলের বাড়ি আদমদীঘি উপজেলায় হলেও তিনি ঢাকায় থাকেন। তাঁর বাবা স্থানীয় এক যুবলীগ নেতা হত্যা মামলার অভিযুক্ত আসামি। প্রভাবশালী এক নেতার আস্থাভাজন হওয়ায় আল-মাহিদুল পদ বাগিয়েছেন। এ কমিটি ঘোষণার পিছনে বিপুল অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তৌহিদুর।
নতুন কমিটিতে যুগ্ম সম্পাদক পদ পাওয়া মাহফুজুর রহমানও বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নিয়েছেন। তিনি বলেন, কমিটিতে সভাপতি পদ পাওয়া সজীব সাহা এর আগের কমিটির গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক পদ পাওয়ার আগে তিনি ছাত্রলীগের কোনো কর্মকাণ্ডেই ছিলেন না।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পদপ্রত্যাশী ৫৬ নেতার কাছ থেকে জীবনবৃন্তান্ত সংগ্রহ করেছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতারা। নতুন কমিটিতে সহসভাপতি পদ পাওয়া অনুরাগী তিশা সেই তালিকায় ছিলেন না। পদবঞ্চিত একাধিক নেতা অভিযোগ করে বলেন, তিশা দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার বাসিন্দা। কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সখ্য থাকায় তিশাকে বগুড়া জেলা কমিটিতে সহসভাপতি পদ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পাওয়া আল ইমরান হোসেনের বাড়িও গাইবান্ধায়।
নতুন কমিটিতে বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পদ পেয়েছেন সজীব সাহা। তিনি আগের কমিটির গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। সাধারণ সম্পাদক পদ পেয়েছেন আল-মাহিদুল ইসলাম। সহসভাপতি পদ পেয়েছেন ১৭ জন।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া নেতা-কর্মীদের দাবি, নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনই জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমানের অনুসারী। টাকার বিনিময়ে বিতর্কিত ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি করা হয়েছে বলে তাঁরা অভিযোগ করছেন। এই কমিটি বাতিল না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নবগঠিত কমিটির সভাপতি সজীব সাহা বলেন, এর আগের কমিটিতেই তিনি একটি পদে ছিলেন। পদ পাওয়ার আগেও তিনি ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে সব কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতেন। তবে এখন যাঁরা পদবঞ্চিত বলে আন্দোলন করছেন তাঁরাই তো আগের কমিটিতে কোনো পদে ছিলেন না। আর সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া আল-মাহিদুল এর আগে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য ছিলেন বলে তিনি দাবি করেন।
আজ সকাল থেকে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিপুলসংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেছে। সেখানে থাকা বগুড়া সদর ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) খোরশেদ আলম বলেন, ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা টেম্পল সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন। তাঁদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা আসেনি।