‘তিনটা বেটা (ছেলে), কেউ হামাক দ্যাখে না। একবেলা খাবার খাইতো, আরেক বেলা না খ্যায়ে থাকি। জাড়ের (শীতের) দিন খুব কষ্ট। মোটা কাপড় নাই। এই চাদর তোমরা হামাক দিয়ে খুব উপকার করলিন। চাদরটা গাওত দিয়ে এখন অ্যানা উশুম পামু।’
প্রথম আলো ট্রাস্টের দেওয়া কম্বল পেয়ে হাসিমুখে এ কথাই বললেন ৭৫ বছর বয়সী নছিরন বেওয়া (৭৫)। আজ রোববার দুপুরে নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার জগদল আদিবাসী স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে শীতার্ত ১৬০ জনকে চাদর দেওয়া হয়। সেখানেই এসেছিলেন নছিরন বেওয়া। তাঁর বাড়ি জগদল মধ্যপাড়া গ্রামে।
এর আগে বেলা ১১টার দিকে ধামইরহাট উপজেলার বেনিদুয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে শীতার্ত ১৩০ জনের মধ্যে চাদর বিতরণ করা হয়। এ দিন ধামইরহাটের দুই স্থানে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে শীতার্ত মোট ২৯০ জনকে শীতবস্ত্র দেওয়া হয়। চাদর বিতরণের কাজে সহায়তা করেন নওগাঁ বন্ধুসভার সদস্যরা।
শীতবস্ত্র বিতরণের জন্য দুই দিন ধরে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ধামইরহাট উপজেলার বেনিদুয়ার ও জগদল গ্রামে গিয়ে শীতার্ত মানুষের মধ্যে স্লিপ বিতরণ করেন প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা।
অন্যোন্যের মধ্যে বেনিদুয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে দুই ক্রাচে ভর দিয়ে চাদর নিতে এসেছিলেন বেনিদুয়ার আদিবাসীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রবিন কিস্কু (৮০)। চাদর পেয়ে রবিন কিস্কু বলেন, ‘বাবা, হামি খুব গরিব মানুষ। পাঁচটা বেটা হামার। কিন্তু কেউ হামাক দেখে না। কনকনা শীতত বারান্দাত একটা ছেঁড়া কাঁথা গাওত দিয়ে শুয়ে থাকি। শীতত ঠক ঠক করি। হাত-পায়ের রগ জড়ো হয়ে যায়। সারা রাত ঠিকমতো ঘুম ধরে না। এই চাদর গাওত দিয়ে অ্যানা উশুম পামু।’
চাদর পেয়ে জগদল আদিবাসীপাড়া গ্রামের মালতি রানী বলেন, ‘মাটির দেয়াল আর টিনের চালার বাড়িত থাকি। ঘরের মধ্যে থাকলে তা–ও অ্যানা জাড় কম লাগে। সকাল আর সন্ধ্যায় বাড়ির বাইরে গেলেই খুব জাড় লাগে। এই চাদর গাওত দিয়ে এখন বাইরে ব্যার হলে জাড় লাগবে না।’
শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নওগাঁ বন্ধুসভার উপদেষ্টা মোফাখখার হোসেন খান ও সিরাজুল ইসলাম, জগদল আদিবাসী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ইসমাইল আলম, সহকারী অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম, বন্ধুসভার সভাপতি রাবেয়া খাতুন, নওগাঁ তেঁতুলিয়া কলেজের অধ্যক্ষ সিদ্দিকুর রহমান, বন্ধুসভার সহসভাপতি এলমা খাতুন লোটাস ও সানম সাব্বির, প্রথম আলোর নওগাঁ প্রতিনিধি ওমর ফারুক প্রমুখ।
শীতার্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন। সহায়তা পাঠানো যাবে ব্যাংক ও বিকাশের মাধ্যমে। হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল, হিসাব নম্বর: ২০৭ ২০০ ১১১৯৪ ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।
অথবা বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন: ০১৭১৩-০৬৭৫৫৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে। এ ছাড়া বিকাশ অ্যাপে ডোনেশন অপশনের মাধ্যমেও আপনার অনুদান পাঠাতে পারেন। এ পর্যন্ত বিকাশের মাধ্যমে অনুদান এসেছে ৬৪ হাজার ৮৩ টাকা। আর ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে এসেছে ৪৩ হাজার ২৬৮ টাকা।