উপজেলা পরিষদ চত্বরে গাড়ি রাখতে নিষেধ করায় আ.লীগ নেতা-কর্মীদের হামলা, ইউএনও লাঞ্ছিত

মারধর ও ভাঙচুরের পর গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চত্বরে আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীদের ভিড় জমে যায়। শনিবার দুপুরে
ছবি: ভিডিও থেকে সংগৃহীত

উপজেলা পরিষদ চত্বরে গাড়ি রাখতে নিষেধ করায় গাজীপুরের কালীগঞ্জে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সরকারি কর্মচারী ও আনসার সদস্যদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনায় ছয়জন আহত হয়েছেন। এ সময়ে তাঁরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকেও (ইউএনও) লাঞ্ছিত করেন। পরে তাঁরা ইউএনওর কার্যালয়ে ইটপাটকেল ছোড়েন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাঠিপেটা করে।

আজ শনিবার বেলা একটার দিকে কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, কালীগঞ্জ উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মোক্তারপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেনের উপস্থিতিতে ও তাঁর উসকানিতে হামলা চালিয়েছে মোক্তারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য জাকির হোসেন, ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল ফকিরসহ ১০-১২ জন।

আহত ব্যক্তিরা হলেন ইউএনওর গাড়িচালক রুবেল হোসেন, আনসার সদস্য মো. আকরাম ও রেজোয়ান, বিআরডিবি (বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড) কার্যালয়ের কর্মচারী লিটন আহমেদ, উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ের কর্মচারী রাসেল মিয়া ও মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ের প্রোগ্রামার উজ্জ্বল কুমার শীল।

উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বলেন, শহীদ ময়েজউদ্দিনের ৩৯তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে কালীগঞ্জ আর আর এন পাইলট সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে শনিবার দুপুরে এক স্মরণসভার আয়োজন করে উপজেলা আওয়ামী লীগ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। স্মরণসভা উপলক্ষে দুপুরে বিভিন্ন এলাকার নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থলে উপস্থিত হতে শুরু করেন। মোক্তারপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে একদল নেতা-কর্মী অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল নিয়ে উপজেলা পরিষদ চত্বরের ভেতরে জড়ো হন।

ওই সময় উপজেলা পরিষদ চত্বরে শিল্পকলা একাডেমিতে জাতীয় কন্যাদিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠান চলছিল। প্রথমে উপজেলা পরিষদের নিরাপত্তায় দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের গাড়ি চত্বরের বাইরে নিয়ে রাখার অনুরোধ করেন; কিন্তু নেতা-কর্মীরা এতে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। খবর পেয়ে ইউএনও আজিজুর রহমান নিজে সেখানে আসেন। তিনি ইউপি চেয়ারম্যানকে ডেকে বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ গুরুত্বপূর্ণ লোকজন উপজেলা পরিষদে আসবেন। সম্ভব হলে নেতা-কর্মীদের গাড়ি যেন বাইরের খোলা জায়গায় নিয়ে রাখা হয়।

এতে ক্ষিপ্ত হয়ে চেয়ারম্যান উচ্চ স্বরে বাক্য বিনিময় শুরু করেন ইউএনওর সঙ্গে। সে সময় চেয়ারম্যানের সঙ্গে থাকা নেতা-কর্মীরা এগিয়ে এসে ইউএনওসহ তাঁর সঙ্গে থাকা লোকজনের ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে তাঁরা ইউএনওর শার্ট ধরে তাঁকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তখন সরকারি কর্মচারী ও আনসার সদস্যরা ইউএনওকে রক্ষা করার চেষ্টা করলে তাঁদের ওপর হামলা চালান নেতা-কর্মীরা। একপর্যায়ে উত্তেজিত নেতা-কর্মীরা ইউএনওর কার্যালয় এবং উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে ইটপাটকেল মারতে থাকেন। এতে কয়েকটি জানালার গ্লাস ভেঙে যায়। একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।

কালীগঞ্জের ইউএনও আজিজুর রহমান বলেন, নিষেধ করার পরও চেয়ারম্যান এবং তাঁর নেতা-কর্মীরা উপজেলা পরিষদ চত্বরে জটলা করে অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল রাখেন। তাঁদের গাড়ি চত্বরের বাইরে রাখার অনুরোধ করার পর চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে যান। সে সময় তাঁর সঙ্গে থাকা নেতা-কর্মীরা উসকানি পেয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর হামলা চালায়। এ ছাড়াও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে তাঁর দপ্তরের জানালা ভাঙচুর করেন।

ইউএনও আরও বলেন, তাঁর ওপরে হামলা চালানোর চেষ্টা করলে তাঁর সঙ্গে থাকা লোকজন ও আনসার সদস্যরা তাঁকে ঘিরে ধরে গেটের ভেতরে নিয়ে গিয়ে রক্ষা করেন। ঘটনার সময়ের ভিডিও চিত্র রয়েছে। সেখানে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে মামলা দায়ের করা হবে।

হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে মোক্তারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন বলেন, ‘এখন একটি অনুষ্ঠানে ব্যস্ত আছি। এ বিষয়ে পরে কথা বলব বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।’

কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফায়েজুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত (বিকেল ৫টা) অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।