আইসিডিডিআরবি ও প্রথম আলোর আয়োজনে ‘যক্ষ্মা চিকিৎসায় বেসরকারি খাতের ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিলে আলোচকেরা। গতকাল দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার এলাকায় একটি রেস্তোরাঁয়
আইসিডিডিআরবি ও প্রথম আলোর আয়োজনে ‘যক্ষ্মা চিকিৎসায় বেসরকারি খাতের ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিলে আলোচকেরা। গতকাল দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার এলাকায় একটি রেস্তোরাঁয়

যক্ষ্মা নির্মূলের গাইডলাইন বেসরকারি পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে হবে

যক্ষ্মা নির্মূলে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০৩৫ সালের মধ্যে যক্ষ্মা নির্মূল করতে হলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। তৈরি করতে হবে সমন্বিত একটা গাইডলাইন (নির্দেশনা)।

গতকাল সোমবার স্থানীয় একটি রেস্তোরাঁয় ‘যক্ষ্মা চিকিৎসায় বেসরকারি খাতের ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকেরা এ কথা বলেন। স্টপটিবি পার্টনারশিপের সহযোগিতায় যৌথভাবে এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) ও প্রথম আলো।

গোলটেবিল বৈঠক সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরী। আলোচনায় অংশ নেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক অং সুই প্রু মারমা, মেরিন সিটি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ সুযত পাল, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সরোজ কান্তি চৌধুরী, ইউএসটিসির সাবেক সহ-উপাচার্য এ এইচ এম ইসহাক চৌধুরী, ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির উপাচার্য অধ্যাপক মো. জাহিদ হোসেন শরীফ, পার্কভিউ হসপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ টি এম রেজাউল করিম, ন্যাশনাল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ, মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ মোরশেদ হোসেন, পিপলস হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুভাষ চন্দ্র সূত্রধর, রোগনির্ণয় কেন্দ্র শেভরনের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন, চট্টগ্রামের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শৈবাল বড়ুয়া, জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের বিশেষজ্ঞ বিপ্লব পালিত ও ব্র্যাকের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক সুশান্ত বিশ্বাস। পরে ধন্যবাদ ব্যক্ত করেন আইসিডিডিআরবির ডেপুটি চিফ অব পার্টি শাহরিয়ার আহমেদ।

শুরুতে যক্ষ্মা নিয়ে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন আইসিডিডিআরবির জ্যেষ্ঠ রিসার্চ কর্মকর্তা আদিল সিকদার। তিনি বাংলাদেশে যক্ষ্মার বর্তমান ও অতীত পরিস্থিতি তুলে ধরেন।

স্বাস্থ্য পরিচালক অং সুই প্রু মারমা বলেন, যক্ষ্মা মোকাবিলায় প্রধান দরকার সচেতনতা। শনাক্ত হওয়ার পরও অনেক যক্ষ্মা রোগী ড্রপ আউট হয়ে যায়। প্রাথমিকভাবে তাঁরা নিয়মিত ওষুধ না খেলে পরে তা ১২ মাস বা ২৪ মাস খেতে হচ্ছে। ডেঙ্গু ও করোনা মোকাবিলায় বেসরকারি অবদান অস্বীকার করা যাবে না।

অধ্যাপক সুযত পাল বলেন, ‘যক্ষ্মাপ্রবণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ দ্বিতীয়। আমাদের দেশে যক্ষ্মা রোগীদের মধ্যে অদৃশ্য ৩০ শতাংশকে শনাক্ত করা জরুরি।’

সৈয়দ মোহাম্মদ মোরশেদ হোসেন বলেন, ‘যক্ষ্মা শনাক্তকরণে আমাদের একটা ডট সেন্টার রয়েছে। বেশিরভাগ যক্ষ্মা রোগীদের চিকিৎসা হচ্ছে বেসরকারি পর্যায়ে। ভবিষ্যতে সরকারের সঙ্গে থেকে যক্ষ্মা নির্মূলে ভূমিকা রাখতে চাই।’

অধ্যাপক সরোজ কান্তি চৌধুরী বলেন, ‘আমরা চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দিলে হবে না। সেবা দিতে হবে। এটা ছোঁয়াচে রোগ। পরিবার ও প্রতিবেশীকে বাঁচাতে হবে।’

এ টি এম রেজাউল করিম বলেন, বেসরকারি খাত উন্নত না হলে যক্ষ্মা নির্মূলের লক্ষ্য অর্জিত হবে না। যক্ষ্মারোগী শনাক্তকরণে জিন এক্সপার্ট মেশিন অনেক দামি। বেসরকারি খাতে এসব মেশিন দেওয়া যায় কি না, তা ভেবে দেখা দরকার।

অধ্যাপক মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, ‘অনেক সময় প্রাথমিক অবস্থায় এক্স-রেতে যক্ষ্মা ধরা পড়ে না। আমরা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কীভাবে যক্ষ্মা নির্মূলে সহযোগিতা করতে পারি, এর জন্য একটা গাইডলাইন দিলে ভালো হয়।’

এ এইচ এম ইসহাক চৌধুরী বলেন, যক্ষ্মা শনাক্তকরণে নমুনা সংগ্রহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিকভাবে কফ সংগ্রহ করা না গেলে যক্ষ্মা ধরা না-ও পড়তে পারে।

বিপ্লব পালিত বলেন, ‘যক্ষ্মা রোগীর ক্ষেত্রে পাশাপাশি এইচআইভি এইডস পরীক্ষার ব্যবস্থাও করা হয়।’

শাহরিয়ার আহমেদ বলেন, ‘বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সঙ্গে না নিয়ে আমরা বাংলাদেশকে যক্ষ্মা নির্মূল করতে পারব না। সবার মতামতের ওপর ভিত্তি করে যক্ষ্মা নির্মূলে একটা গাইডলাইন তৈরি করতে চাই, যাতে ২০৩৫ সালের মধ্যে যক্ষ্মা নির্মূল করতে চাই সবাইকে সঙ্গে নিয়ে।’