কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান ওরফে মুনিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরসহ আসামিদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি নিশ্চিতের দাবিতে কুমিল্লায় মানববন্ধন হয়েছে। আজ শনিবার বেলা ১১টায় কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড় এলাকার টাউন হল গেটের সামনে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
মানববন্ধনে বীর মুক্তিযোদ্ধা, ছাত্র-জনতাসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ নেন। মোসারাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার নিশ্চিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হস্তক্ষেপ কামনা করেন বক্তারা।
মানববন্ধনে মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান বলেন, ‘আনভীর আমার ছোট বোনটাকে প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে খুন করেছে। আনভীর তাঁর টাকা দিয়ে সব কিনে ফেলেছে। আমরা গরিব, তাই শাস্তির দাবি করা ছাড়া আমাদের আর কী করার আছে। আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আমার বাবারা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে, আর আমরা তাঁদের মেয়ে হয়ে বিচার পাচ্ছি না।’
২০২১ সালের ২৬ এপ্রিল রাজধানীর গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে মোসারাত জাহানের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তখন থেকে তাঁর বোন নুসরাত জাহান অভিযোগ করে আসছেন, মোসারাতকে খুন করা হয়েছে। এর সঙ্গে বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহান আনভীর জড়িত। মোসারাত জাহানের বাড়ি কুমিল্লা শহরে। তাঁর বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রহমান। মেয়েটির পরিবার কুমিল্লায় থাকে। গুলশানে ওই ফ্ল্যাটে তিনি একাই থাকতেন।
মানববন্ধনে নুসরাত জাহান দাবি করেন, তাঁর বোনকে ধর্ষণের পর হত্যা করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে বিগত সরকার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এখন সময় এসেছে খুনিকে বিচারের মুখোমুখি করার। এ জন্য সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেন নুসরাত। অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এই হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিতে শক্তিশালী ভূমিকা রাখবেন বলে সেই সঙ্গে আশা তাঁর।
নুসরাত জাহান বলেন, ‘অনেকে মনে করে আমি আপস করেছি। না, আমি আপস করিনি। আমার বোনের জীবন নিয়ে আপস করব না। বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার যত দূর যাওয়া যায়, আমি তত দূর গিয়েছি। কিন্তু পিবিআই ভিত্তিহীন রিপোর্ট দিয়েছে। তদন্তের নামে তামাশা করেছে। নিম্ন আদালত প্রথমে ন্যায়ের পক্ষে থাকলেও পরে আমাদের মামলা খারিজ করে দেন। তবে উচ্চ আদালত নিরাশ করেননি। মামলা এখন উচ্চ আদালতে।’
বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহান আনভীর এত দিন ‘টাকা উড়িয়ে সবাইকে ম্যানেজ’ করে রেখেছিলেন দাবি করে নুসরাত আরও বলেন, ‘বিগত সরকারও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বারবার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হওয়ার পরও কেন আমার বোন মুনিয়াকে ধর্ষণের পর হত্যা মামলার আসামিকে একবারও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি? তাই আমরা এখন প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ চাই, খুনিদের বিচার নিশ্চিত করার জন্য।’
মানববন্ধন কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার, গণমাধ্যমকর্মী ওমর ফারুকী তাপস, স্থানীয় বাসিন্দা এরশাদ মিয়া, জাকির আহমেদ, মনু মিয়া, রাশিদা বেগম প্রমুখ।
বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘বিগত চার বছর সারা দেশে মিছিল, মিটিং, মানববন্ধন করেছি। কিন্তু বিচার পাইনি। মুনিয়া বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তারপরও আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। সন্তান হত্যার বিচার না পাওয়ার জন্য মুনিয়ার বাবা মুক্তিযুদ্ধ করেননি। প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের কাছে মুনিয়া হত্যার কার্যকর বিচার দাবি করছি। না হলে আমরা সামনে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব।’