নতুন রেজিস্টার কিনে ওপরে নাম লেখা হচ্ছে, কোনটা কী কাজে লাগানো হবে। রেজিস্টারগুলো তৈরি হচ্ছে সরকারি কার্যালয় পুড়ে যাওয়ার পর নতুন করে কার্যক্রম চালানোর জন্য। ৪ ও ৫ আগস্ট কেশবপুর উপজেলার ছয়টি সরকারি কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়েছে। পুড়ে গেছে সব নথিপত্র। ভাঙচুর-লুটপাট করা হয়েছে আরও তিনটি কার্যালয়ে। উপজেলা পরিষদের মতো কেশবপুর পৌর ভবনটিও এখন পরিত্যক্ত ভবনে পরিণত হয়েছে।
কত দিনে এসব কার্যালয় স্বাভাবিক কাজে ফিরবে, কারও তা জানা নেই। সেবাগ্রহীতারা কীভাবে সেবা পাবেন, সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের কেউ তা বলতে পারছেন না। টিনশেড স্কুলের কার্যালয়সহ অন্যান্য কার্যালয়ে নতুন করে কার্যক্রম শুরুর চেষ্টা চলছে। লুট হওয়া মালামাল ফিরে পেতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) পক্ষ থেকে এলাকায় চলছে মাইকিং।
সরেজমিনে উপজেলা পরিষদে গিয়ে মূল ফটক তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। ফটকের সামনে পড়ে আছে কয়েকটি মোটরসাইকেলের কঙ্কাল। শহীদ মিনারের সামনের পকেট গেট দিয়ে লোকজন চলাচল করছে। উপজেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের তিনটি কক্ষ পোড়া কয়লায় পরিণত হয়েছে। পাশের মৎস্য কার্যালয়ে সব পুড়ে গেছে। উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনের দরজা-জানালা পুড়ে ছাই হয়েছে। এমনকি ছাদের পলেস্তারা খসে রড বেরিয়ে গেছে। সমাজসেবা কার্যালয়, প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়, প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, যুব উন্নয়ন কার্যালয়, মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। ইউএনও কার্যালয়ের জানালার সব কাচ ভাঙা। ভেতরে ভাঙা কাচ, চেয়ার, টেবিল, আলমারিসহ মালামাল পড়ে আছে। ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে কাগজ-নথিপত্র। মোট ছয়টি কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি তিনটিতে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। একই সময়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী ১৭টি মোটরসাইকেলসহ মোট ৭৩টি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়েছে। ইউএনও, উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা সহকারী কমিশনারের ব্যবহৃত তিনটি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
ইউএনও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ছয়টি ডেস্কটপ কম্পিউটার, পাঁচটি ল্যাপটপ, একটি ফটোকপি মেশিন, একটি মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, চেয়ার-টেবিল, একটি সিলিং ফ্যান, ছয়টি টেবিল ফ্যানসহ আনুমানিক ২ কোটি ৭৮ লাখ ৮ হাজার ৩০০ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সমাজসেবা কার্যালয়ে ২৮ লাখ ৮৫ হাজার, মৎস্য কার্যালয়ে ১৩ লাখ ৩০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। অন্যান্য কার্যালয়ের হিসাব-নিকাশের কাজ চলছে।
উপজেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের অধীন ১ হাজার ৩০০ চাকরিজীবী ও ১ হাজার ৩০০ জন অবসর ভাতা গ্রহণ করেন। তাঁদের সার্ভিস বুকসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র পুড়ে গেছে। এ ছাড়া টিকাদারি জামানত, নির্বাচনী জামানত ও সব চালান পুড়ে যাওয়ায় কিছুটা অসুবিধা হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা এস এম মাসেদুর রহমান। তিনি বলেন, এখন সরকারি কর্মকর্তা ও পেনশনভোগীদের বেতন অনলাইনের মাধ্যমে হয়। ফলে তাঁদের বেতন পেতে তেমন অসুবিধা হবে না।
সমাজসেবা কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় ৩০ হাজার লোকের ভাতা দেওয়া হয়। অনলাইনে তাঁদের তথ্য আছে, সেখান থেকে খুঁজে পাওয়া যাবে। তবে এতিমখানার আর্থিক অনুদানের কাগজ পুড়ে যাওয়ায় একটু সমস্যা হবে। বেসরকারি সংস্থার কাগজপত্র পুড়ে গেছে। রেজল্যুশন পুড়ে যাওয়ায় তা আর পাওয়া যাবে না।
বর্তমানে যাঁরা উপজেলা পরিষদে আসছেন, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ঢোকানো হচ্ছে। পুরো উপজেলা পরিষদে ঢুকে তেমন কোনো সেবাগ্রহীতাকে পাওয়া যায়নি। শুধু একজন প্রাথমিক শিক্ষক তথ্য দিতে এসে কর্মকর্তাদের খুঁজে পাচ্ছেন না বলে জানান। পরে প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নাজুমল হুদা তথ্যটি একটি দোকানে জমা হচ্ছে জানালে তিনি সেই দোকানে যান।
বর্তমানে ইউএনও বসছেন উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে, উপজেলা হিসাবরক্ষণ ও মৎস্য অফিস চলছে পল্লি সঞ্চয় ব্যাংকে, উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় চলছে একটি টিনশেডে ঘরে, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় চলছে মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয় চলছে মধু শিক্ষা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।
ইউএনও তুহিন হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কবে নাগাদ স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হবে, বলা খুবই মুশকিল। সরকারিভাবে কার্যালয় পরিচালনার জন্য নতুন করে অর্থ বরাদ্দ না আসা পর্যন্ত তাঁদের বসার জায়গাও নেই।