জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে ব্রহ্মপুত্র ভাঙনের কবলে পড়ে ইতিমধ্যে কয়েকটি বসতভিটা ও কৃষিজমি নদে বিলীন হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে খোলাবাড়ি এলাকায়।
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে ব্রহ্মপুত্র ভাঙনের কবলে পড়ে ইতিমধ্যে কয়েকটি বসতভিটা ও কৃষিজমি নদে বিলীন হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে খোলাবাড়ি এলাকায়।

জামালপুরে ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়ছে, ভাঙনের ঝুঁকিতে শতবর্ষী বাজার-স্থাপনা

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেশ কয়েকটি এলাকায় নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। চর আমখাওয়া ইউনিয়নের পাটাধোয়াপাড়া থেকে মৌলভীরচর পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ইতিমধ্যে এসব এলাকার বহু কৃষিজমি নদে বিলীন হয়েছে। সেই সঙ্গে ঝুঁকির মুখে পড়েছে শতবর্ষী একটি বাজার, পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ আশপাশের গ্রামের বসতভিটা ও কৃষিজমি।

স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইউনিয়নটির শতবর্ষী সানন্দ বাড়ি বাজারের পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদ। এক সপ্তাহ ধরে নদের পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফলে নদটি বাজারের খুব কাছে চলে এসেছে। ওই বাজারের পশ্চিম পাশে পাটাধোয়াপাড়া থেকে মৌলভীরচর এলাকায় মণ্ডলপাড়া, মুন্সিপাড়া, চুনালীপাড়া, চিথুলীয়া, পশ্চিমপাড়া, পশ্চিম পাটাধোয়াপাড়া, মৌলভীরচর, পাটাধোয়াপাড়া, খোলাবাড়িসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম রয়েছে। গত তিন বছরে এসব এলাকার বেশির ভাগ অংশ নদে বিলীন হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে শতবর্ষী বাজারসহ আশপাশের অনেক এলাকা ভাঙনের কবলে পড়তে পারে।

গত তিন বছরে মণ্ডলপাড়া, মুন্সিপাড়া, চুনালীপাড়া, চিথুলীয়া, পশ্চিমপাড়া, পশ্চিম পাটাধোয়াপাড়া, মৌলভীরচর, পাটাধোয়াপাড়া, খোলাবাড়িসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের বেশির ভাগ অংশ নদে বিলীন হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে শতবর্ষী বাজারসহ আশপাশের অনেক এলাকা ভাঙনের কবলে পড়তে পারে।

গত তিন বছরে নদের তীরবর্তী ৮টি গ্রামের প্রায় ৭০০ পরিবারের ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে বলে জানান সানন্দ বাড়ি বাজার বণিক সমিতির সভাপতি গাজীউর রহমান। তাঁর দাবি, ভাঙনের আতঙ্কে প্রায় ৮০০ পরিবার বসতভিটা ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। ইতিমধ্যে নদে বিলীন হয়েছে অন্তত ২০০ একর কৃষিজমি। এখনো আটটি গ্রামের প্রায় তিন হাজার পরিবার ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। সানন্দ বাড়ি বাজারে ছোট-বড় প্রায় ৫০০ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে। এই বাজার থেকে বছরে কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করা হয়। সামান্য পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করছে। তার মানে ভাঙন আরও ভয়ানক রূপ ধারণ করতে পারে। জরুরি ভিত্তিতে স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে অঞ্চলটির মানুষের সর্বনাশ হয়ে যাবে।

পাটাধোয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা আবদুল হালিম বলেন, ভাঙন অব্যাহত থাকলে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী সানন্দ বাড়ি বাজার, সানন্দ বাড়ি ডিগ্রি কলেজ, সানন্দ বাড়ি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, সানন্দ বাড়ি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, মৌলভীরচর উচ্চবিদ্যালয়, মৌলভীরচর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, মৌলভীরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মৌলভীরচর আলিম মাদ্রাসা, সানারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সানন্দ বাড়ি পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খোলাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কয়েকটি গ্রাম বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ওই এলাকার স্থায়ীভাবে ভাঙন প্রতিরোধে একটি প্রকল্প ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটির অনুমোদন হলে ওই অঞ্চলের ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাউবোর (জামালপুর) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম

প্রায় ২০ বার ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেন পশ্চিম পাটাধোয়াপাড়া এলাকার কৃষক আফছর আলী (৭৬)। গত বছরও তাঁর জমি গেছে ব্রহ্মপুত্রের পানিতে। এখন অন্যের জমিতে বসতঘর নির্মাণ করে থাকেন। তবে আবারও ভাঙন তাঁর বাড়ির খুব কাছে চলে এসেছে। আফছর জানান, অঞ্চলটির মানুষের জমিজমা ও সুখের সংসার, সবই ছিল। কিন্তু নদের ভাঙনের কারণে কেউ আর সুখে নেই। অনেকেই এলাকাটি ছেড়ে ঢাকার বস্তিতে থাকেন। কেউ আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে চলে গেছেন। যাঁরা ঘরবাড়ি ছেড়ে গেছেন; তাঁদের রক্ষায় শক্ত কোনো বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি।

সানন্দ বাড়ি বাজারসহ অন্য স্থাপনা রক্ষায় এসব এলাকায় ইতিমধ্যে বালুর বস্তা (জিও ব্যাগ) ফেলা শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পানির তোড়ে এসব বালুর বস্তাসহ নদের পাড় বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙন রোধে বালুর বস্তা কোনো কাজে আসছে না বলে দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙন রোধে স্থায়ী ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

এ প্রসঙ্গে জামালপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ওই এলাকায় ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। জিও ব্যাগ ভাঙন রোধে অনেকটা কাজে আসবে। ওই এলাকার স্থায়ীভাবে ভাঙন প্রতিরোধে একটি প্রকল্প ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটির অনুমোদন হলে ওই অঞ্চলের ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’