রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সমর্থক নেতা-কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে ক্যাম্পাসের মাদার বখ্শ হল গেটে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় নেতা-কর্মীদের হাতে রড ও লাঠিসোঁটা দেখা যায়।
তবে ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতার দাবি, দুই হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছিল। তাঁরা সেটি সমাধান করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের অনুসারীদের মধ্যে এ হাতাহাতি হয়। ঘটনার সময় সভাপতির অনুসারী আল ফারাবী (মাদার বখ্শ হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা), তানভীর আহমেদ এবং সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী সাজিদ (শহীদ জিয়াউর রহমান হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা), মিশকাত হাসান (মাদার বখ্শ হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা) উপস্থিত ছিলেন। এঁদের মধ্যে আল ফারাবী ফাইন্যান্স বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী, মিসকাত হাসান হিসাববিজ্ঞান ও তথ্যব্যবস্থা বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী, তানভীর আহমেদ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং সাজিদ ফলিত রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ছাত্রলীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, জিয়া হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সাজিদের এক ছোট ভাই (জুনিয়র) তাঁর বান্ধবীকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলের পুকুর গেটে বসেছিলেন। সেখানে ধূমপান করছিলেন মাদার বখ্শ হল ছাত্রলীগের কর্মী তানভির আহমেদ ও তাঁর এক বড় ভাই (সিনিয়র)। তাঁকে ধূমপান করতে নিষেধ করেন সাজিদের সেই ছোট ভাই। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
এর জের ধরে দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরা মাদার বখ্শ হল গেটে আসেন এবং তাঁদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা ও হাতাহাতি শুরু হয়। একপর্যায়ে ফারাবী ও তাঁর অনুসারীরা হল থেকে রড ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হল গেটে সাজিদ ও তাঁর অনুসারীদের ওপর চড়াও হন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত মাদার বখ্শ হল শাখা ছাত্রলীগের আরেক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী মিশকাত হাসানসহ অন্যরা তাঁদের প্রতিহত করেন।
পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব। এ সময় তিনি সবাইকে দুই মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থল ত্যাগ করার নির্দেশ দেন। পরে জড়িতদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বরে আসেন তিনি। সেখানে শাখা ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতা বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে সমাধান না করেই টুকিটাকি চত্বর ত্যাগ করেন সাধারণ সম্পাদক ও তাঁর অনুসারীরা।
মাদার বখ্শ হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আল ফারাবী বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটু ঝামেলা হয়েছিল। পরে সেটি ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক মিলে সমাধান করে দিয়েছেন।’ প্রতিপক্ষের ওপর চড়াও হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো লাঠিসোঁটা নিয়ে আসিনি। তবে এমন হতে পারে, অন্যরা কিছু নিয়ে এসেছিল, আর ঘটনাস্থলে হয়তো সেটা আমার হাতে দেখা গেছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জিয়া হল ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সাজিদ বলেন, ‘জিয়া হল ও মাদার বখ্শ হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছোট্ট একটি বিষয় নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল। সেখানে দুই হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা মিলে সমাধান করে দিয়েছি।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছিল। এটা নিয়ে সেখানে হট্টগোল লেগেছিল। বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছি।’ একইভাবে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দুই হলের ‘নন–পলিটিক্যাল’ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছোট্ট একটি ঝামেলা হয়েছিল। জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা মীমাংসা করে দিয়েছেন।
মাদার বখ্শ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শামীম হোসেন বলেন, ছাত্রলীগের দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়েছিল। পরে তাঁরা নিজেরাই বসে মীমাংসা করে নিয়েছেন।